তমলুক হাইস্কুলের সামনে বেহাল রাস্তা।
একটা রাস্তা মেরামতি করা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। আরেকটা রাস্তা মেরামতের কিছুদিন পরই খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। তমলুক শহরের রাজাবাজার থেকে শ্মশান মোড় ও তমলুক কলেজ থেকে পায়রাটুঙি সেচ বাংলো পর্যন্ত এই দু’টি রাস্তার হাল এমনই। জেলা শহরের অন্যতম দুটি ব্যস্ত রাস্তা বেহাল থাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগে নিতাযাত্রীরা।
রাস্তার এমন অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন খোদ তমলুকের পুরপ্রধান দেবিকা মাইতিও। তাঁর বক্তব্য, “কলেজ পাড়া থেকে পায়রাটুঙি রাস্তা কয়েক মাস আগে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু জল নিকাশি সমস্যা থাকায় ও ভারী যান চলাচলের কারণে ওই রাস্তা ফের খারাপ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার পরে ওই রাস্তা মেরামতির চেষ্টা চলছে। আর রাজাবাজার থেকে শ্মশানমোড় পর্যন্ত রাস্তাটি সারানোর জন্য পূর্ত দফতরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা ভেঙে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠিত হওয়ার পরেই মহকুমা শহর থেকে সরকারিভাবে জেলা সদরের স্বীকৃতি পায় তমলুক শহর। তারপর ১২ বছর কেটে গেলেও নতুন এই জেলা শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশি থেকে সৌন্দর্যায়নের কাজ আশানুরূপভাবে এগোয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশি-সহ নানা পরিকাঠামোর হাল আগের মতই রয়ে গিয়েছে। হলদিয়া-মেছেদা রাজ্য সড়ক ছাড়াও জেলা শহর তমলুকের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত শহরের মানিকতলা থেকে জেলখানা মোড়, পুরসভার অফিস, স্টিমারঘাট, বড়বাজার হয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি। এছাড়াও শহরের মধ্যে একাধিক পাকা রাস্তা রয়েছে যেগুলি শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের স্কুল, কলেজ, অফিস, বাজারে যাতায়াতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সেচ বাংলোর সামনের রাস্তা।
এরকমই একটি রাস্তা তমলুক শহরের রাজাবাজারের কাছ থেকে টাউন স্কুল হয়ে শ্মশানমোড় হয়ে বড়বাজার প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা রাস্তা। আর এই রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় খানাখন্দে ভরে বেহাল হয়ে গিয়েছে। ডাইভারসন রোড নামে পরিচিত নামে এই রাস্তা তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কে রাজাবাজার থেকে শুরু হয়ে পদুমবসান, পার্বতীপুর, টাউন স্কুল, শ্মশানমোড় হয়ে বড়বাজারের কাছে শহরের প্রধান রাস্তায় মিশেছে। বর্তমানে ওই রাস্তার শ্মশানমোড় থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত অংশ বেহাল হয়ে রয়েছে। ওই রাস্তার পাশেই রয়েছে তমলুক হাইস্কুল (টাউন স্কুল) ও একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল। ফলে ওই পাকা রাস্তা দিয়ে ব্যস্ত সময়ে রিক্সা, সাইকেল, মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছেন শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী শিবু দত্তের অভিযোগ, “তিন বছর আগে এই রাস্তা মেরামত করা হয়েছিল। আর মেরামত না করায় খানাখন্দ হয়ে ও দু’ধারের অংশ ভেঙে গিয়ে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সফিউল ইসলামের অভিযোগ, “এই রাস্তা দিয়ে কোনও বাস চলাচল না করলেও মালপত্র বহনের জন্য ভারী লরি যাতায়াত করে। তাতেই অল্প দিনে রাস্তা বেহাল গিয়েছে। অবিলম্বে রাস্তা মেরামত করা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
অন্য দিকে তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের সঙ্গে যুক্ত শহরের জেল খানামোড় থেকে কোর্টপাড়া, কলেজ হয়ে পায়রাটুঙি পর্যন্ত পাকা রাস্তার একাংশ বেহাল হয়ে গিয়েছে। কয়েকমাস আগে ওই রাস্তা মেরামত করা হলেও কিছুদিন পরেই তা বেহাল যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই জলে ভরে গিয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তমলুকের পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি বলেন, “পুরসভার দেড়শ বছর পূর্তি উদযাপনের আগেই পুরসভার রাস্তাগুলি সংস্কার হয়েছিল। এছাড়াও শহরের মধ্যে থাকা পূর্ত দফতরের রাস্তাগুলি মেরামতের কাজের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিছু রাস্তার মেরামতের কাজ করেছে পূর্ত দফতর। রাস্তা মেরামতির বাকি কাজের জন্য ফের জানানো হবে।”
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।