থিমের লড়াইয়ে জমেছে পূর্বের পুজো

শক্তি আরাধনার প্রাচীন ক্ষেত্র তমলুক শহর তো বটেই কালীপূজার আয়োজন নিয়ে থিমের মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ে দীপাবলি উৎসবে মেতেছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা। বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় একশোর বেশি কালীপুজো হচ্ছে তমলুক শহরে। এর মধ্যে শহরের বেশ কয়েকটি বিগ বাজেটের মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

শক্তি আরাধনার প্রাচীন ক্ষেত্র তমলুক শহর তো বটেই কালীপূজার আয়োজন নিয়ে থিমের মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ে দীপাবলি উৎসবে মেতেছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা। বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় একশোর বেশি কালীপুজো হচ্ছে তমলুক শহরে। এর মধ্যে শহরের বেশ কয়েকটি বিগ বাজেটের মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। তমলুক শহরের এইসব বড় মণ্ডপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রীতিমত থিমের মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা গড়ে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে আকর্ষণীয় তোলার প্রয়াসে খামতি রাখেনি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারাও। আর এইসব বড় বাজেটের মণ্ডপ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামবাসী। এইসব পূজার প্রাঙ্গণ ঘিরে রীতিমত মেলা বসেছে ও চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।

Advertisement

তমলুক শহরের অদূরে নন্দকুমারের আলেয়া ক্লাবের মণ্ডপসজ্জা। ফুটে উঠেছে তিব্বতি সংস্কৃতির ছবি। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে নন্দকুমার ফুটবল ময়দানে আয়োজিত এই পুজোয় প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপসজ্জা করা হয়েছে ফাইবার, ফয়েল-সহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে। রয়েছে প্রায় ৩০০ বিভিন্ন ধরনের তিব্বতি ধাঁচের মুখোশ। বুধবার সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরত জাহান। আলেয়া ক্লাবের সম্পাদক কালোবরণ কুইল্যা বলেন, “মায়ের আরাধনার উদ্দেশ্য অশুভ শক্তির বিনাশ। তিব্বতি ধাঁচে প্রতীকী সেই রূপ তুলে ধরা হয়েছে।”

তমলুক শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে জোয়ার ভাটা ক্লাবের পুজোয় মণ্ডপসজ্জা করা হয়েছে শ্রীলঙ্কার একটি বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে। প্রায় ৬৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ সজ্জা করা হয়েছে বাঁশের ছেলা, ফাইবার, প্লাস্টিক দিয়ে। মাটির প্রতিমা হয়েছে রক্ষাকালীর আদলে। বুধবার এই পূজার উদ্বোধন করেছেন অভিনেত্রী পাওলি দাম। জোয়ার ভাটা ক্লাবের কর্মকর্তা উদয়ন খাটুয়া বলেন, “কালীপুজো উপলক্ষে এবার দুঃস্থদের বস্ত্রদান, রক্তদান শিবির ও প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।” তমলুক থেকে কয়েক কিলোমিটার নোনাকুড়ি পানবাজারে এ বার মণ্ডপ করা হয়েছে প্রাসাদের আদলে। পানের জন্য বিখ্যাত তমলুকের এই পান বাজারের ব্যবসায়ীরাই এই পুজোর উদ্যোক্তা। পাঁশকুড়া-ঘাটাল রাজ্য সড়কের ধারে যশোড়া কালীরবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত পুজোমণ্ডপ করা হয়েছে অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে। মাটির ভাঁড় দিয়ে তৈরি এই মণ্ডপ দেখতে ভিড় জমছে পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও সংলগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের এলাকার বাসিন্দাদের।

Advertisement

কালী আরাধনায় এ বার শতবর্ষে পা দিয়েছে পাঁশকুড়ার ক্যানেল বাজার শারদোৎসব পুজো কমিটি। পাঁশকুড়া পুরাতন বাজারের কাছে থানা সংলগ্ন মণ্ডপ করা হয়েছে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ আশ্রমের আদলে। বুধবার সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন অভিনেতা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। কোলাঘাটের ‘সঙ্কেত ক্লাব’-এর কালীপুজো এ বার পা দিয়েছে সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে। কোলাঘাট নতুন বাজারে রাধামাধব জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে এই পুজোর থিমে তুলে ধরা হয়েছে ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ। বিশালাকার উচু এই মণ্ডপের ভিতরে তুলে ধরা ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকাদের বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্ত। তমলুক শহরের পাশাপাশি জেলা প্রত্যন্ত এলাকার এইসব পুজো ঘিরে এলাকার বাসিন্দারা মেতে উঠেছে দীপাবলি উৎসবে।

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার কালীপুজোর সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পুজো মন্ডপগুলিতে প্রতিমা ও মণ্ডপ দশর্নার্থীদের ভিড় চোখে পড়ে। কাঁথি শহরে এবিসিডি ক্লাবের পুজোর এ বার রজত জয়ন্তী বর্ষ। ‘সাগরকুসুম’ (সি অ্যানিমোন)-এর আদলে এখানকার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ক্লাব রাজীবে কর্নাটকের চামুণ্ডা মায়ের আদলে মাতৃমূর্তি। শহরের বড় বাজেটের পুজো বার্নিংস্টার ক্লাবে এ বার দক্ষিণ ভারতের সোমনাথ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ইন্দিরা ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ত্রিপুরার একটি মন্দিরের আদলে। অ্যাথলেটিক ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ঢোল দিয়ে। তাছাড়াও কাঁথি শহরের জেনারেশন ক্লাবের মণ্ডপও দর্শকদের নজর কাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন