দুই যুবককে মারধর করে ফের ধৃত খড়্গপুরের শ্রীনু

একদা রেলনগরীর ত্রাস বাসব রামবাবুর ঘনিষ্ঠ ছিল দুষ্কৃতী শ্রীনু নাইডু। পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল সে। এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে আবারও পুলিশের জালে জড়াল শ্রীনু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০১:৩০
Share:

আদালত চত্বরে শ্রীনু নাইডু। করেছে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

একদা রেলনগরীর ত্রাস বাসব রামবাবুর ঘনিষ্ঠ ছিল দুষ্কৃতী শ্রীনু নাইডু। পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিল সে। এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে আবারও পুলিশের জালে জড়াল শ্রীনু। রবিবার সকালে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ শহরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত ৩টে নাগাদ তার দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া দুই যুবকের উপর হামলা চালায় শ্রীনু। জখম পি কিরণ কুমারকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও সঞ্জয় প্রসাদকে রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিন শ্রীনুকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। খড়্গপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অজিত সিংহ যাদব জানান, মাতাপুজোকে ঘিরে দুই গোষ্ঠীর মারামারি হয়েছিল। দু’জন জখম হন। তবে গুলি চলেনি। জখমদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রীনু নাইডুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর রেল কারখানার কর্মী শ্রীনুর বিরুদ্ধে রেলের লোহা চুরি থেকে শুরু করে ছাঁট লোহার ঠিকাদারি নিয়ে হুমকি, খুন-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এক সময় খড়্গপুরে রেল মাফিয়ারাজের নিয়ন্ত্রক বাসব রামবাবুর ডানহাত ছিল এই শ্রীনু। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারির শত্রুতার জেরে তৃণমূল নেতা গৌতম চৌবে খুনের পরে পরিস্থিতি বদলায়। প্রয়াত সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের বড় ছেলে গৌতম খুনে নাম জড়ায় রামবাবুর। বছর খানেকের মধ্যেই গ্রেফতার হন তিনি। তখন গোটা কারবার শ্রীনু একাই চালাত।

Advertisement

বছর আটেক বাদে রামবাবু যখন জামিন পান ততদিনে নিজের দল গড়ে গড়েছে শ্রীনু। সেই সময়েই খড়্গপুরের একটি শপিং কমপ্লেক্সে ৩৯ লক্ষ টাকা ডাকাতির ঘটনায় শ্রীনুর বিরুদ্ধে আঙুল ওঠে। তখন থেকেই শ্রীনুর দলবলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় রামবাবুর। ২০১১ সালে আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় রামবাবুর কনভয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে শ্রীনুর লোকজনের বিরুদ্ধে। তোলাবাজি থেকে শুরু করে রেলের ছাঁট লোহা চুরি-সহ অপরাধমূলক নানা ঘটনায় নাম নাম জড়াতে থাকে শ্রীনুর। বেশ কয়েকবার সে গ্রেফতারও হয়। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেশিদিন তাকে জেলে আটকে রাখা যায়নি।

২০১২ সালের ২৯ জুলাই ডিআইজি বাংলোর সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম গুপ্ত। সেই খুনের ঘটনায় ফের ধরা পড়ে শ্রীনু। তবে সেই মামলাতেও তিন মাস জেলে থাকার পরে জামিন পেয়ে যায় শ্রীনু। এর পর থেকেই বহু দুষ্কর্মে অভিযুক্ত শ্রীনু প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিত।

কিছু দিন হল ফের দুষ্কৃতীদের দাপট শুরু হয়েছে খড়্গপুরে। বেশ কয়েকবার নিমপুরা রেল ইয়ার্ডে শূন্যে চলেছে গুলি। শনিবার মাতা পুজো উপলক্ষে মথুরাকাটিতে ঘোরাফেরা করছিল পি কিরণ কুমার, সঞ্জয় প্রসাদের মতো কিছু স্থানীয় যুবক। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, রাত তিনটে নাগাদ পি কিরণ কুমারের বাড়ির কাছে শ্রীনুর দলের যুবক গোবিন্দর সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। গোবিন্দ ফোন করে জানানোর পরই শ্রীনু দলবল নিয়ে এসে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। লাঠি, লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয় কিরণ কুমার ও সঞ্জয় প্রসাদকে। জখম সঞ্জয়কে রেল হাসপাতাল ও কিরণকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রবিবার সকালে শ্রীনু নাইডু-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত কিরণ কুমারের ভাই পি সন্তোষ কুমার। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের বাড়ির সামনে দলবল নিয়ে এসে শ্রীনু গুলি চালায়। আমাদের সবাইকে মারধর করে। দাদা ও সঞ্জয়কে বেধড়ক মারে।” এরপরই নিউ সেলেটমেন্টের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় শ্রীনুকে।

শ্রীনুর দল থেকে ছিটকে যাওয়া পি কিরণ কুমার, সঞ্জয় প্রসাদরা কিছুদিন অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে ছিলেন বলে খবর। মাস কয়েক আগে তাঁরা এলাকায় ফেরেন। ফলে, এলাকা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছিল শ্রীনু। তার জেরেই এই হামলা বলে স্থানীয়রা মনে করছে। হামলার প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন