দেব এল নাকি, গাড়ি দেখেই ভিড় বাজারে

জমজমাট বাজারে তখন সবে সন্ধে নেমেছে। ইতিউতি ছেলেছোকরাদের জটলা। পাশেই সেলুনে টিভিতে ‘আমি তোর হিরো, আমি তোর হিরো, বাকি সব জিরো’। স্ক্রিনে নাচছেন ঘাটাল কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী দীপক অধিকারী। মেজাজে তাল দিচ্ছে আশপাশ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

এই গাড়ি ঘিরেই শোরগোল পড়ে যায় কেশপুর বাজারে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

জমজমাট বাজারে তখন সবে সন্ধে নেমেছে।

Advertisement

ইতিউতি ছেলেছোকরাদের জটলা। পাশেই সেলুনে টিভিতে ‘আমি তোর হিরো, আমি তোর হিরো, বাকি সব জিরো’। স্ক্রিনে নাচছেন ঘাটাল কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী দীপক অধিকারী। মেজাজে তাল দিচ্ছে আশপাশ।

তাল কাটল হুশ করে আসা ঝকঝকে একটা গাড়ির শব্দে। ছাইরঙা পেল্লায় গাড়ির গায়ে নানা আঁকিবুঁকি, নানা লেখা। পিছনে ডানার মতো কী একটা! অল্পবয়সী ছেলের দল ঝপ করে পড়েও ফেলল সামনে লেখা ‘দেশি বয়েজ’, পাশে ‘ড্রিম রেসিং টিম’। এমন ডানাওয়ালা গাড়ি কেশপুরের রাস্তায় কী করছে?

Advertisement

সত্যি-মিথ্যে বাছবিচারের ব্যাপার নেই। লহমায় গোটা ভিড় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। গাড়ি ঘিরে ফেলেছে জনতা। গাড়ির চালক শেখ কায়েস গোড়ায় বুঝতেই পারছিলেন না, হয়েছেটা কী! কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছেন না কি? ভাবতে না ভাবতেই একের পর এক প্রশ্নবাণ “দাদা এটা তো দেবের গাড়ি? দেব কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন বসকে?’

আকাশ থেকে পড়েন কায়েস। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন, “দেব-টেব কেউ আসেনি। এটা দেবের গাড়িও নয়!” কিন্তু লোকে মানবে কেন? কেউ গাড়ির সামনে থেকে সরতেও নারাজ। বুধবার সন্ধ্যায় কেশপুর-মেদিনীপুর রাজ্য সড়ক প্রায় অবরুদ্ধ হওয়ার জোগাড়। কায়েসের কথায়, “কুড়ি বছর হল গাড়ি চালাচ্ছি। এমন অবস্থায় কখনও পড়িনি। এক দল লোক ছেঁকে ধরেছে। না পারছি এগোতে, না পারছি পিছোতে। এক বার তো মনে হল গাড়ি নিয়ে নর্দমায় পড়ে যাব। কোনও মতে সামলেছি।”

কে ছিলেন ওই গাড়িতে?

বৃহস্পতিবার সকালে প্রশ্নটা শুনে হেসে লুটোপুটি খেলেন তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান। “আর বলবেন না! ছিলেন জেলারই দু’জন নেতা। সন্ধ্যায় দলের একটা বৈঠক ছিল। কিন্তু কেশপুরের রাস্তায় এমন গাড়ি দেখেই ‘দেব এসেছে’ বলে রটে যায়। সে কী অবস্থা। দু’শো-তিনশো লোক অস্থির করে ফেলল!” তিনিই জানান, উৎসাহী ভিড়টা পরে তৃণমূল অফিসেও ধেয়ে এসেছিল। বেগতিক দেখে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় এবং জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষকে পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বাকিরা প্রাণপণে অত্যুৎসাহীদের বোঝান, ও গাড়ি দেবের নয়। দেব আসেননি। তার পরে ভিড় পাতলা হয়।

তৃণমূল সূত্রে খবর, আরামবাগের (চন্দ্রকোনা এই কেন্দ্রের অন্তর্গত) কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দারের কর্মিসভা থাকায় দীনেনবাবু আর প্রদ্যোৎবাবু বুধবার দুপুরে গাড়িটি ভাড়া নিয়ে চন্দ্রকোনায় গিয়েছিলেন। তাঁদের কারও নিজের চারচাকা নেই। চন্দ্রকোনা থেকে তাঁরা কেশপুরে বৈঠক করতে আসেন। কিন্তু গাড়িই যে কাল হতে পারে, তা কারও মাথায় আসেনি। গাড়ির মালিক, মেদিনীপুরের শুভজিৎ ঘোষও বলেন, “এই গাড়িটা সচরাচর ভাড়া দিই না। বুধবার অন্য গাড়ি ছিল না। তা বলে, এমন অবস্থা হবে বুঝতে পারিনি।”

দীনেনবাবুরা আপাতত আর ওই গাড়ির কাছ ঘেঁষছেন না। বরং অন্য একটি গাড়ি ভাড়া নিয়ে এ দিন তাঁরা বেলপাহাড়ি যান।

এ দিন আর কেউ তাঁদের ‘দেব’ বলে ভুল করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন