দারিদ্রের বাধা জয় করেই স্বপ্ন সফলের লড়াই শাহজাহানদের

সংসারের অভাবে অনেক সময় খাবার জোটেনি। কিন্তু তাতে পড়াশোনা বাদ যায়নি। আধপেটা খেয়েই মাধ্যমিকে ৬৫৪ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে হলদিয়ার সুদীপ জানা। শহরের রাধাবল্লভচক এলাকার বাসিন্দা সুদীপ এ বার স্থানীয় রামগোপালচক ভারতী বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০০:৪৭
Share:

মায়ের সঙ্গে শাহজাহান (বাঁ দিকে), মুনমুন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

সংসারের অভাবে অনেক সময় খাবার জোটেনি। কিন্তু তাতে পড়াশোনা বাদ যায়নি। আধপেটা খেয়েই মাধ্যমিকে ৬৫৪ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে হলদিয়ার সুদীপ জানা। শহরের রাধাবল্লভচক এলাকার বাসিন্দা সুদীপ এ বার স্থানীয় রামগোপালচক ভারতী বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল। তার বিষয়ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯০, ইংরেজি ৯০, অঙ্ক ৯৩, ভৌতবিজ্ঞান ৯৬, জীবন বিজ্ঞান ৯৮, ইতিহাস ৯১ ও ভূগোল ৯৬। স্কুলে বরাবরের সেরা ছাত্র সুদীপের প্রিয় বিষয় পদার্থবিদ্যা। স্বপ্ন মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। আর স্বপ্ন উচ্চ মাধ্যমিকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার। পড়ার সময় ছাড়া ছবি আঁকা আর কুইজ্যের বই পড়তে ভাল লাগে তার। এই বিষয়ে নানা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে পুরস্কৃতও হয়েছে সে। কিন্তু এত ভাল ফল সত্ত্বেও উন্নতির পথে বাধা অর্থাভাব। সুদীপের বাবা দিলীপ জানা হলদিয়া শহরের একটি শিল্প সংস্থার ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিক। কাজ থাকে না প্রায় দিন। মা রিনাদেবী গৃহবধূ। তাঁরা বলেন, “সামান্য যা আয় তাতে ঠিকমতো সংসারই চালাতে পারি না। ছেলের পড়ার খরচ কী ভাবে টানব তা জানি না।” সুদীপকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানো এক শিক্ষকের কথায়, “সুদীপ আমার দেখা একজন প্রকৃত ছাত্র। সহায়তা পেলে মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে ও একদিন ঠিক সফল হবে।”

Advertisement

হলদিয়া টাউনশিপের দোরশোভারামপুর স্কুলের ছাত্র শাহজাহানের গল্পটাও অনেকটা এই রকমই। বাবা শেখ হাসান দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। রোজগারের কোনও উপায় নেই। মা সাহানা বিবি নিরক্ষর। এই পরিস্থিতিতেও শাহজাহানের মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৬১১। তার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বাংলায় ৭৭ ইংরাজিতে ৮২, অঙ্কে ৮১ ,ভৌতবিজ্ঞানে ৮৬ , জীবন বিজ্ঞানে ৯৭ , ইতিহাসে ৯০ এবং ভূগোলে ৯৮। দু’বেলা দু মুঠো খাবারের যেখানে সমস্যা সেখানে গৃহশিক্ষক রাখা তো দূর অস্ৎ। স্কুলের পড়ার বই এবং শিক্ষকদের দেওয়া বই নিয়েই নিজেই নোট তৈরি করেছে শাহজাহান। হলদিয়া টাউনশিপের ২২ নং ওয়ার্ডের উদ্বাস্তুদের গ্রাম বিষ্ণুরাম চকের বাসিন্দা শাহজাহান জানায়, “বাড়িতে নিত্য দিনের অশান্তি। তবু তার মাঝে যখনই সময় পেয়েছি, পড়েছি। স্কুলের শিক্ষকরাই পড়ায় সাহায্য করেছেন। তবে আরও একটু সাহায্য পেলে আরও ভাল ফল করতাম।” পরীক্ষার পর অন্য বন্ধুরা যখন একাদশ শ্রেণির পড়া পড়তে ব্যস্ত, তখন রোজগারের পথ খুঁজছে শাহজাহান। ভবিষ্যতে কী করবে জানে না। আপাতত একাদশ শ্রেণিতে পড়ার স্বপ্ন নিয়েই দিন কাটাচ্ছে শাহজাহান।

হলদিয়ার সুতাহাটার লাবণ্যপ্রভা বালিকা বিদ্যালয়ের মুনমুন মাইতি অভাবের মধ্যেই ভাল ফল করেছে মাধ্যমিকে। সুতাহাটার আসদতলিয়া গ্রামে বাড়ি মুনমুনদের। বাবা ডালিম কুমার মাইতি পাচকের কাজ করেন কলকাতায় আর মা মঞ্জু মাইতি গৃহবধূ। মুনমুন এ বার মাধ্যমিকে ৬৩৪ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বিষয়ভিত্তিক নম্বর বাংলায় ৯২, ইংরাজিতে ৭৭, অঙ্কে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৮৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৮৬ এবং ভূগোলে ৯৪। মুনমুন জানিয়েছে, তার এই সাফল্যের জন্য স্কুলের শিক্ষিকারা খুব সাহায্য করেছেন। তাঁরাই বই দিয়ে উৎসাহিত করেছেন, বারবার খাতা দেখে ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় মুনমুন। মুনমুনের মা মঞ্জুদেবী বলেন, “অভাবের সংসার। জানি না কী ভাবে মেয়েকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াব। ওতে তো শুনেছি অনেক খরচ।” তবু স্বপ্ন দেখে মুনমুন। তার বিশ্বাস, ইচ্ছা থাকলে উপায় একটা নিশ্চয়ই হবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন