দলে প্রবীণদের গুরুত্ব দিন, নির্দেশ তৃণমূল রাজ্য সভাপতির

দলের একাংশ নেতা- কর্মীর আচরণ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুরে এসে দলের সর্বস্তরের নেতা- কর্মীদের সতর্ক করে গেলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সী। রবিবার মেদিনীপুরে দলের এক কর্মিসভা থেকেই তিনি বার্তা দিলেন, দল সকলের উপর নজর রেখেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৮
Share:

মেদিনীপুরে ফ্লিম সোসাইটি হলের সভায় সুব্রত বক্সী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দলের একাংশ নেতা- কর্মীর আচরণ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুরে এসে দলের সর্বস্তরের নেতা- কর্মীদের সতর্ক করে গেলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সী। রবিবার মেদিনীপুরে দলের এক কর্মিসভা থেকেই তিনি বার্তা দিলেন, দল সকলের উপর নজর রেখেছে। শুধুমাত্র নিজে প্রতিষ্ঠিত হবেন, এই আশা নিয়ে যদি কেউ দল করেন, তাহলে তাঁর সেই আশা কখনও পূরণ হবে না। দল তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপই করবে। সুব্রতবাবুর কথায়, “আমাদের দলে কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের আচার-আচরণ-অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করব, আর তাঁর আচার- আচরণ ত্যাগ করব, তা হবে না। মনে রাখবেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকলেরই বিচার হবে। কারও আগে হবে। কারও পরে। শম্ভু কাউয়ের যেমন আগে বিচার হয়েছে!”

Advertisement

২১ জুলাইয়ের কলকাতার সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে রবিবার মেদিনীপুরে জেলা তৃণমূলের এক কর্মিসভা হয়। সভায় দলের জেলা নেতাদের পাশাপাশি ব্লক সভাপতিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ারও বার্তা দেন রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “পুরনো কর্মীদের দূরে ফেলে দেওয়া যাবে না। কিছু মানুষ অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা সেই দলের ছত্রছায়ায় থাকতে চায়। তাই এদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। যাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের কাছেও যেতে হবে।” নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে সুব্রতবাবু বলেন, “কেউ কেউ আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছেন। মনে রাখবেন, ক্ষমতায় এলেই রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড শেষ হয়ে যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউকে কাউকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছেন। কেউ বিধায়ক হয়েছেন। কেউ পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ যদি ভাবেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে পাঁচ বছরের বাসস্থান হয়ে গেল, তাহলে ভুল ভাবছেন। দল আপনাকে সেই সুযোগ দেবে না। যাঁরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদেরও প্রতিনিয়ত দলের অফিসে এসে বসতে হবে। মানুষের কথা শুনতে হবে। হয়তো সব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। তাও।” জেলা থেকে তৃণমূলের রাজ্য দফতরে নানা অভিযোগের চিঠি যায়। সমস্ত চিঠি যে দল গুরুত্ব দিয়েই দেখে, তাও জানান রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, “আপনারা যে চিঠি পাঠান, তা দেখা হয়। অভিযোগ যদি সঠিক হয় তাহলে তার বিচার হবেই। কোনওটার আগে হবে। কোনওটার পরে।” নেতা- কর্মীদের তাঁর পরামর্শ, “নিজেকে সংযত হতে হবে। আমাদের ভীত-সন্ত্রস্ত- হতাশ হওয়ার কোনও জায়গা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও রাজনৈতিক শক্তিকে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।” সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, চূড়ামণি মাহাতো প্রমুখ। ছিলেন জেলার বিধায়কেরাও।

তিনি বলেন, “১৭ বছর হয়ে গেল। শিশু থেকে কৈশোর পেরিয়ে এখন দল যৌবনে। বহু আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। স্বাধীন ভারতে সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিঙ্গুরে। পরবর্তী পর্যায়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলন। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে এই নিয়ে বিশেষ কিছু বলার অবকাশ নেই।” সিঙ্গুরের জমি অনিচ্ছুক কৃষকেরা ফেরত পাবেন বলেও এ দিন দাবি করেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, “আদালতে মামলা চলছে। আইনের উপর আমাদের আস্থা আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে এক দিন অনিচ্ছুক কৃষকেরা জমি ফেরত পাবেনই। আইন যদি জমি ফেরত দিতে পারে ভাল। না হলে কী ভাবে জমি ফেরত দিতে হয় তা তৃণমূল জানে!” সুব্রতবাবু বলেন, “গত ১৭ বছরে আমাদের ৫৫ হাজার কর্মী শহিদ হয়েছেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে। এক-দুই করতে করতে তিন বছর অতিক্রান্ত। বাংলা এখন সন্ত্রাসমুক্ত। এটা জঙ্গলমহল থেকে শৈল-শহরের ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়।” একাংশ সংবাদমাধ্যম কুৎসা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, “গত লোকসভা নির্বাচনে শুধু সিপিএম-বিজেপি নয়, সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশও আমাদের বিরোধিতা করেছে। মানুষের ব্যাপক সমর্থনই আমাদের এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।’’ নিজের বক্তব্যে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ও বলেন, “মানুষের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমাদের সততা-নিষ্ঠা-ত্যাগের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। যদি আমরা এ সবের মধ্য দিয়ে চলি, তাহলে মানুষই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবেন!”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন