নন্দীগ্রামের সত্য জানাতে পুস্তিকা-প্রচারে সিপিএম

সাত বছর আগের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনা রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পরেই নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, গোটা রাজ্যে জমি আলগা হতে শুরু হয়েছিল বামেদের। এ বার লোকসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়ে সেই নন্দীগ্রাম-কাণ্ডকেই হাতিয়ার করছে সিপিএম। নন্দীগ্রামের ঘটনা পরম্পরা, বিশেষ করে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই কী বলেছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েই আলিমুদ্দিন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৬ পাতার পুস্তিকা ‘নন্দীগ্রাম, তৃণমূলী ষড়যন্ত্র ফাঁস’!

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০০:৪৭
Share:

সাত বছর আগের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলিচালনার ঘটনা রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিয়েছিল। ওই ঘটনার পরেই নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, গোটা রাজ্যে জমি আলগা হতে শুরু হয়েছিল বামেদের। এ বার লোকসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়ে সেই নন্দীগ্রাম-কাণ্ডকেই হাতিয়ার করছে সিপিএম। নন্দীগ্রামের ঘটনা পরম্পরা, বিশেষ করে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই কী বলেছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েই আলিমুদ্দিন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৬ পাতার পুস্তিকা ‘নন্দীগ্রাম, তৃণমূলী ষড়যন্ত্র ফাঁস’!

Advertisement

গঠনমূলক বিরোধিতা এবং ১৪ মার্চের ‘প্রকৃত’ ঘটনা রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই পুস্তিকা প্রকাশ বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ‘সে দিন আদালত ঘটনার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল ... দীর্ঘ কয়েক বছর তদন্তের পরে জমা পড়েছে চার্জশিট। তাতে রয়েছে অন্য কথা। যা থেকে স্পষ্ট, কারা চক্রান্তকারী।’ সিপিএমের অভিযোগ, জমিরক্ষা আন্দোলনের নামে নন্দীগ্রামের চক্রান্তে তৃণমূল, মাওবাদী, বিজেপি, নকশাল, জামাত-সহ বাম-বিরোধী সকলেই যুক্ত ছিল। নন্দীগ্রামে মাওবাদী-তৃণমূলের যোগসাজশ বোঝাতে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমনের লেখা ‘নিশানের নাম তাপসী মালিক’ বইটিরও উল্লেখ রয়েছে পুস্তিকায়।

বস্তুত, সাত বছর পরেও নন্দীগ্রামের ভিতরে এখনও সভা-সমাবেশ করার মতো অবস্থা নেই সিপিএমের। নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের কর্মীদের নিয়ে কর্মিসভাও করতে হয়েছে চণ্ডীপুর বাজারে, যা নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকার বাইরে। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের ব্যাখ্যা, “পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় অনেক পন্থা-পদ্ধতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সে রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা তো কর্মীদের বাঘের মুখে ফেলে দিতে পারি না!” সাংগঠনিক ভাবে নন্দীগ্রামের ভিতরে ঢুকে এখনও কাজ করা সম্ভব না-হলেও রাজ্য ও জেলার অন্যত্র পুস্তিকা নিয়ে প্রচার চালিয়ে সাত বছর আগের ‘সত্য’ তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে বলেই দলের একাংশের বক্তব্য।

Advertisement

নন্দীগ্রাম-পর্বে সন্ত্রাসের বীৎভসতা বোঝাতে পুস্তিকার প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে নানা রঙিন ছবি। রয়েছে মুখ ঢাকা বন্দুকবাহিনী, কান্না ভেজা মহিলার মুখ, পোড়া বাড়ির সামনে শিশু, ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে ক্ষিপ্ত জনতা। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে তৎকালীন বিরোধীরা সরব হয়েছিল চটি-পরা পুলিশ, পা-চেরা শিশু বা ট্রলার বোঝাই দেহ লোপাট নিয়ে। সিবিআই চার্জশিটকে সামনে রেখে এই পুস্তিকায় সিপিএম প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, এ সবই মিথ্যা অভিযোগ। আসলে সে দিন প্রশাসন যথেষ্ট সংযত ভূমিকা পালন করেছিল। সিবিআই চার্জশিটের প্রসঙ্গ টেনে পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে বিশ্ৃঙ্খল জনতাকে ‘বেআইনি জমায়েত’ ঘোষণা করার পর ধাপে ধাপে কাঁদানে গ্যাস, ৫১ রাউন্ড রবার বুলেট ছোড়ার পরই পুলিশ ‘শক্তি প্রয়োগ’-এ বাধ্য হয়েছিল।

পুস্তিকায় ঠাঁই পেয়েছে নন্দীগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গও। ১৪ নম্বর পাতায় রয়েছে ‘নন্দীগ্রাম কী পেল’ শীর্ষক অংশে দেখানো হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময়ে নন্দীগ্রামের উন্নয়নে নানা ঘোষণা করলেও তা রূপায়িত হয়নি। যেমন, মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নন্দীগ্রামের জেলিংহামে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের পরিত্যক্ত জমিতে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন। সেই প্রকল্পই ২০১২ সালের ১৪ মার্চ বদলে হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। সেই পার্কের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা নন্দীগ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এ জন্য নতুন ভবনের শিলান্যাসও হয়। তার পরে আর কাজ এগোয়নি। পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান বলেন, “১৪ মার্চের ঘটনা নিয়ে এত দিন বাম সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার হয়েছিল, তা সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টেই প্রমাণিত।” পুস্তিকায় ভাল সাড়া মিলেছে বলেও দাবি প্রশান্তবাবুর। দু’টাকা দামের ওই পুস্তিকা রাজ্যের অন্যত্র বিক্রি করা হলেও নন্দীগ্রামে তা বিনামূল্যে বিলি করা হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর।

এই পুস্তিকাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামে সিপিএম কী ভাবে অত্যাচার চালিয়েছে, তা গোটা রাজ্যের মানুষ দেখেছে। সিপিএম মানুষকে খুন করে লাশ পাচার করেছে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামে আসার পথে আটকেছে।” নন্দীগ্রামে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেও মানতে নারাজ শুভেন্দুবাবু। তাঁর বক্তব্য, “স্বাস্থ্য জেলার কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়োগ হয়েছেন। সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকাতেও অনেক কাজ হয়েছে। বিরোধীরা এ সব না জেনেই মিথ্যে অভিযোগ করছে।” একই সঙ্গে শুভেন্দুর আশ্বাস, জেলিংহামে রেলের যন্ত্রাংশ-কারখানার কাজ শেষ করতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন