নন্দীগ্রামকে জয় উৎসর্গ শুভেন্দুর

ততক্ষণে ভোট গণনা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সময় যত এগোচ্ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীর থেকে এগিয়ে থাকার ব্যবধান। বেলা পৌনে ১২ টা নাগাদ জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হাইস্কুলের সামনে দাঁড়াল তাঁর গাড়ি।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০১:৪৭
Share:

জয়ের পর দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে।—নিজস্ব চিত্র।

ততক্ষণে ভোট গণনা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সময় যত এগোচ্ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থীর থেকে এগিয়ে থাকার ব্যবধান। বেলা পৌনে ১২ টা নাগাদ জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হাইস্কুলের সামনে দাঁড়াল তাঁর গাড়ি। দুধ সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী গাড়ি থেকে নামা মাত্রই দলীয় কর্মীদের মধ্যে এক প্রস্থ হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। আর তার মাঝ দিয়েই হাতের দু’আঙুলে জয় সূচক চিহ্ন দেখিয়ে গণনাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে গেলেন তিনি। যখন বেরোলেন তখন তাঁর জন্য ফুল, মালা নিয়ে অপেক্ষা করছেন অজস্র ভক্ত।

Advertisement

নন্দীগ্রামের দলীয় কর্মীদের কাছে গতবারের চেয়ে জয়ের ব্যবধান বাড়ার আভাস পেয়ে আগেই তাঁদের বাহবা জানান শুভেন্দুবাবু। আর তারপরই গণনাকেন্দ্র থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় ২০০ মিটার দূরে দলীয় সমর্থকদের শিবিরে যাওয়ার পথে তাঁকে ঘিরে উচ্ছাস তখনই বিজয় উৎসবের চেহারা নিয়েছে। শুভেন্দুবাবুকে ঘিরে তখন কয়েক হাজার তৃণমূল সমর্থক নাচছে আর সবুজ আবির উড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। বিকেলে ফল ঘোষণা পরই সেই উত্তেজনা আরও বেড়েছে। পরে গণনাকেন্দ্রে এসে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের কাছ থেকে জয়ের শংসাপত্র নিতে আসা শুভেন্দুবাবুকে ঘিরে ফের মাতেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। তখন শুভেন্দুবাবুর প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূলের প্রতি মানুষ বিপুলভাবে সমর্থন করায় আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারের প্রতি এই জয় উৎসর্গ করছি। এবার আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।”

সবিস্তারে দেখতে
ক্লিক করুন....

Advertisement

নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলনের জোয়ারে ২০০৯ সালে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে রেকর্ড করেছিলেন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের এই প্রার্থী। এর আগে ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের বাংলা কংগ্রেস প্রার্থী সতীশচন্দ্র সামন্ত জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৩২৪ ভোটের ব্যবধানে। আর এ বার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে তৃপ্ত তৃণমূলের এই নেতা। এবার ভোটের প্রচারের শুরু থেকেই উন্নয়নকে হাতিয়ার করে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন গতবার তৃণমূল, কংগ্রেস, এসএউসি’র জোট প্রার্থী হিসেবে জেতা রেকর্ড ভাঙতে হবে। আর লক্ষ্য পূরণের পথে এবারও তাঁর ভরসা হয়েছে নন্দীগ্রামের মানুষের বিপুল সমর্থন। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় সিপিএম প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৮৩ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন শুভেন্দুবাবু। গতবার এই ব্যবধান ছিল প্রায় ৫৫ হাজার। এবার হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের মানুষও অনেক বেশী সমর্থন জানিয়েছে শুভেন্দুবাবুকে। গতবারের মাত্র আড়াই হাজারের ব্যবধান বেড়ে এ বার দাঁড়িয়েছে ১১ হাজারে।

শুভেন্দুবাবু শুক্রবার ভোটের ফল প্রকাশের এবারও জয় উৎসর্গ করেছেন নন্দীগ্রামের শহিদদের উদ্দেশে। আর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকদের। উন্নয়নয়ের স্লোগানকে অন্যতম হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছিলেন শুভেন্দুবাবু। গত লোকসভা নির্বাচনের মত এবার নন্দীগ্রামের হাওয়া ছিল না, ছিল না গত বারের জোট সঙ্গীরাও। উল্টে ছিল প্রবল মোদী হাওয়া। তাই ২০০৯ সালের জেতার ব্যবধান ধরে রাখা এবার তাঁর কাছে ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে তিনি সফল এ দিনের ফল তা আবার প্রমাণ করল। শুভেন্দুবাবুর জয়ের উচ্ছাসে সামিল হতে ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোলাঘাটে এসেছিলেন তমলুকের প্রত্যন্ত রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রবি দাস, হলদিয়া সুতাহাটার আনারনগর গ্রামের মহম্মদ ইসমাইলরা। তাঁরা বলেন, “শুভেন্দুবাবুর সমর্থনে আমরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রচার চালিয়েছিলাম। শুভেন্দুবাবু জেতায় পরিশ্রম সার্থক হল।”

সারা দেশের সঙ্গেই তমলুকেও বেড়েছে বিজেপির ভোটের হার। গত ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ২০ হাজার ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এ বার এক লাফে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার। অন্য দিকে শুভেন্দুবাবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি এ দিন সকাল থেকেই ভোট গণনা কেন্দ্রে ছিলেন। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে ততই তাঁর পিছিয়ে পড়ার হার বেড়েছে। অবশেষে ইব্রাহিম এদিন বলেন, “মানুষের রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। তবে আগামী দিনেও মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি। মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করে যাব।” তবে তাঁর সংযোজন, “নন্দীগ্রাম বিধানসভা, হলদিয়া পুরসভা ও ময়নার বাকচা এলাকায় ব্যাপক ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল।”

শুভেন্দুবাবুর অবশ্য এই জয়ের পর আর কোনও বিষয়েই মন্তব্য করতে চান না। বরং তিনি জানিয়েছেন, আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত উন্নয়নের কাজে মন দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন