পুজোর আগেই গলিপথ সারাতে অর্থ বরাদ্দ

একেই অপরিসর পথ, তায় ভাঙাচোরা। মেদিনীপুর শহরের গলিপথ দিয়ে পথচলা নিতান্তই দুঃস্বপ্ন। সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ ছোট রাস্তাই ধুঁকছে। মাঝেমধ্যে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টি হলে এই সব খানাখন্দে জল জমে যায়। ফলে, পথচলতি মানুষ গর্ত রয়েছে বলে বুঝতেও পারেন না। প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

খন্দপথ। মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লির রাস্তা বেহাল।

একেই অপরিসর পথ, তায় ভাঙাচোরা। মেদিনীপুর শহরের গলিপথ দিয়ে পথচলা নিতান্তই দুঃস্বপ্ন। সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ ছোট রাস্তাই ধুঁকছে। মাঝেমধ্যে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। বৃষ্টি হলে এই সব খানাখন্দে জল জমে যায়। ফলে, পথচলতি মানুষ গর্ত রয়েছে বলে বুঝতেও পারেন না। প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে নড়েচড়ে বসেছে পুর-প্রশাসনের। শারদোৎসবের আগেই ছোট রাস্তাগুলো মেরামতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। এ জন্য পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “বেশ কয়েকটি ছোট রাস্তায় খানাখন্দ রয়েছে। সমস্যা আমাদের অজানা নয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বার কাজ শুরু হবে।”

মেদিনীপুর শহরের চেহারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে, বাড়ছে জনসংখ্যা। জেলার সদর শহরে যানজট সমস্যাও নতুন নয়। শহরে আলাদা ভাবে কোনও ফুটপাত নেই। বাধ্য হয়ে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর হাল মোটের উপর এখন ঠিকই রয়েছে। যেমন জজকোর্ট রোড-কেরানিতলা, কেরানিতলা-কালেক্টরেট মোড়, কালেক্টরেট মোড়-গাঁধী স্ট্যাচু মোড়, গাঁধী স্ট্যাচু মোড়-বটতলাচক, বটতলাচক-কেরানিতলা, গোলকুয়াচক-ধর্মা প্রভৃতি। বৃষ্টির জল জমে কোথাও কোথাও সামান্য গর্ত তৈরি হয়েছে মাত্র। শহরের ছোট রাস্তাগুলির হাল অবশ্য রীতিমতো খারাপ। শরৎপল্লি, বিধাননগর, বিবেকানন্দ নগর, রবীন্দ্রনগর, রাঙামাটি, বক্সীবাজার, নতুনবাজারের মতো এলাকার কয়েকটি রাস্তা দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। শহরের এই সব রাস্তা দিয়েই প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। আশপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্রছাত্রীরাও যাতায়াত করেন। অনেক সময় খানাখন্দের জন্য যানজট হয়। একটি গাড়ি আটকে গেলে পরপর গাড়ি আটকে পড়ে। রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

Advertisement

নানুরচক থেকে গাঁধী মূর্তি যাওয়ার জীর্ণ রাস্তা (বাঁ দিকে)।
অরবিন্দনগরের বেহাল রাস্তায় চলাই দায় (ডান দিকে)।

এখন আবার পাড়ায় পাড়ায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মোটর বাইকের সংখ্যা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। সদর শহরে প্রায় সব মোটর বাইক প্রস্তুতকারী সংস্থারই নিজস্ব ডিলার রয়েছে, রয়েছে শো-রুম। বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা যুবকদের ঋণ দিয়ে বাইক কিনতে সাহায্য করছে। ফলে, দিনে দিনে শহরে মোটর বাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্কুলপড়ুয়া তরুণদের হাতেও বাইক চলে আসছে। শহরে ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও বহু ছোট রাস্তার হাল সেই ভাবে ফেরেনি।

মেদিনীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মধ্যে গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে নান্নুরচক পর্যন্ত রাস্তা একটি। এই রাস্তার দু’দিকে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার অফিস রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিং হোম রয়েছে। অরবিন্দ স্টেডিয়াম রয়েছে। এই রাস্তার মাঝেমধ্যেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির জল জমে জমে গর্তগুলো ক্রমে বড় হচ্ছে। ছোট- বড় গর্তে সাইকেল, মোটর সাইকেলের চাকা ঢুকে দুর্ঘটনাও ঘটছে। শহরের এমন রাস্তাগুলো মেরামত করা না হলে আগামী দিনে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। ছোটখাট দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলায়। কারন, পথচলতি মানুষের পক্ষে সহজে বোঝা সম্ভব নয় যে ঠিক কোথায় কোথায় খানাখন্দ রয়েছে।

পুরসভা সূত্রের অবশ্য দাবি, গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে নান্নুরচক পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় সাত লক্ষ টাকা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুর। স্বাভাবিক ভাবেই এই শহর সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ রোজ কাজ হাতে নিয়ে শহরে আসেন। যানজট এড়াতে অনেকে ছোট রাস্তা ধরেই গন্তব্যে পৌঁছন। এখন আবার বড়-বড় রাস্তাগুলো ছেড়ে অনেক ছোট-ছোট রাস্তাও হকারদের দখলে চলে যাচ্ছে। কোথাও রাস্তার ধারে গড়ে উঠছে চা, পানের দোকান। কোথাও ফলের দোকান। কোথাও বা গ্যারেজ। সঙ্গে বেআইনি পার্কিং তো রয়েছেই। পুজোর মুখে বেশ কিছু ছোট রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজ কবে শুরু হবে, সেই নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে। কারন, সেই বৃষ্টি। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণববাবুর কথায়, “বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা মেরামতের কাজ করা যায় না। সেই ক্ষেত্রে কাজ ব্যাহত হবেই। যে অংশ মেরামত হবে, তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৃষ্টি কমলে কিছু দিন পর কাজগুলো শুরু হবে।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন