রেলশহরে বাড়ছে দুষ্কর্ম। চাপের মুখে অবশেষে দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে অভিযানে নামল পুলিশ। মঙ্গলবার এক যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করল খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। ওই দিন রাতে খড়্গপুরের কুমোরপাড়া ও মালঞ্চ রোড এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃত কুমোরপাড়ার এম তুলসী রাও, মালঞ্চ রোডের অভিষেক ওয়াং ও বাবলু জসওয়ালকে বুধবার মেদিনীপুর জেলা দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়। অভিযুক্ত তুলসী রাওকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আর বাকি দু’জনকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ হয়েছে।
গত সোমবার গভীর রাতে শহরের কুমোরপাড়া লাগোয়া মালঞ্চর ভগবানপুরে সমাজবিরোধীদের দু’টি গোষ্ঠীর গোলমালে গুলিবিদ্ধ হন পেশায় পান দোকানি দীপঙ্কর শুক্লা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলনগরীর এক সময়ের ত্রাস বাসব রামবাবুর এক সময়ের সহচর শ্রীনু নাইডু-র ঘনিষ্ঠ দীপঙ্কর এলাকায় কুখ্যাত সমাজবিরোধী বলেই পরিচিত। সম্প্রতি শ্রীনুর দলে ভাঙন ধরেছে। গত মে মাসে শ্রীনু নিজেই তার দলের দুই যুবককে জখম করার দায়ে এখনও জেলবন্দি। এই পরিস্থিতিতে দীপঙ্করের এলাকায় মাথাচাড়া দিচ্ছে দীপঙ্কর বিরোধী গোষ্ঠী। সেই নিয়ে কোন্দলের জেরে ওই রাতে গুলিতে জখম হন দীপঙ্কর।
গত কয়েক মাস ধরেই দুষ্কর্ম বাড়ছে রেলশহরে। এর আগেও গুলি চলেছে নিউ সেটলমেন্ট এলাকায়। এ ছাড়াও চুরি-ছিনতাই নিত্য দিনের ঘটনা। পুজোর মুখে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কিত শহরবাসী। গত শনিবার রাতে থানার অদূরে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার একদিন পরেই ভগবানপুরে গুলি চলার পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এফআইআরে নাম থাকা তিন জনের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে এস তুলসী রাওকেই প্রথম গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর তুলসীকে প্রাথমিক ভাবে জেরা করে আরও পাঁচ জনের নাম পায় টাউন থানা। তাঁদের মধ্যেই অভিষেক ও বাবলু জসওয়ালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিরা পলাতক বলে দাবি পুলিশের।
অসামাজিক কার্যকলাপ ঠেকাতেই এ বার রাশ টানতে অস্ত্র হাতে পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, এই গুলিবিদ্ধ হওয়া যুবকের ঘটনাতেই জেরার মাধ্যমে একের পর এক উঠে আসা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে। পুজোর মুখে এলাকা শান্ত রাখতে প্রতিটি এলাকায় তল্লাশি চালাবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দুষ্কৃতীদের অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে সকলকে ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে পুলিশের অন্দরেই। টাউন থানার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, সব কিছুতে রাজনীতি জড়ালে চলবে না। আমরা যদি মনে করি এলাকা শান্ত রাখার জন্য দুষ্কৃতীদের ধরতে হবে, তবে ধরবই। তবে পুজোর দিকে তাকিয়ে পুলিশ অভিযানে নামতে যে প্রস্তুত তা কিছুটা স্পষ্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথাতেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “গুলি চলার ঘটনায় অনেকেরই নাম উঠে আসছে। আমরা তিন জনকে ধরে একজনকে হেফাজতে নিয়েছি। তাকে জেরা করে এই ঘটনায় যারা জড়িত প্রত্যেকেই পুজোর আগেই ধরা হবে। এলাকা শান্তি রাখতে পুলিশ প্রস্তুত।”