প্রত্যাশা রইল প্রত্যাশাতেই।
চলতি বছরের রেল বাজেটের আগে নতুন ট্রেন ঘোষণা, পরিষেবা, ভাড়া কম-এ রকম নানা প্রত্যাশায় ছিল পূর্ব মেদিনীপুরে রেলযাত্রীরা। বৃহস্পতিবার মোদী সরকারের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু রেলবাজেট পেশ করার পর অবশ্য জেলাবাসী হতাশ। কারণ বাজেটে এই জেলার আলাদা কোনও জায়গাই নেই। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নন্দীগ্রামের জেলায় যে সব রেল প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল, তার রূপায়ণ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ এ বারের বাজেটে এই সব প্রকল্পকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দিনের শেষে বাজেরেটের পুরো খসড়া না কিন্তু বাজেট ঘোষণা শেষে দেখা গেল নতুন কোনও ট্রেনের ঘোষণা নেই, ভাড়াও কমেনি, এমনকী যে রেল প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে তাতে নতুন করে বরাদ্দও দেওয়া হয়নি। ফলে জেলায় রেলের যে প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সন্দেহে এলাকার বাসিন্দারা।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় নন্দীগ্রামে রেললাইন প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। সর্বোপরি যে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের হাত ধরে তৃণমূলের উত্থান হয়েছিল সেই নন্দীগ্রামে রেললাইনের জন্য জমিদাতাদের প্রত্যেক পরিবারপিছু চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি দেশপ্রাণ(বাজকুল )-নন্দীগ্রাম রেলপ্রকল্পের শিলান্যাসের পর জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু হয়েছিল। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রস্তাবিত এই রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় জমিহারাদের একাংশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁছ বছরে জমি অধিগ্রহণ করে কিছু এলাকায় মাটি ফেলা, প্রস্তাবিত ষ্টেশন তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু ও একটি বড় সেতু নির্মাণ ছাড়া প্রকল্পের কাজ আর কিছুই এগোয়নি। অথচ একসময় বাংলা থেকে রেলমন্ত্রী থাকার সুবাদে দ্রুত ওই রেলপ্রকল্প রূপায়ণের আশায় ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু গত কয়েক বছরে নন্দীগ্রাম রেলপ্রকল্পের কাজ যে গতিতে এগিয়েছে তাতে এই প্রকল্পের কাজ হতাশ নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা।
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , তমলুক-দিঘা রেলপথে দেশপ্রাণ (বাজকুল) স্টেশনের কাছ থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপ্রকল্পের জন্য প্রায় ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। জমিহারা পরিবারের তরফে চাকরির জন্য ১১৪৭ জনের আবেদন জমা পড়েছিল রেল দফতরে। এদের মধ্যে ৪১২ জন ইতিমধ্যে চাকরি পেয়েছেন, ৪১৩ জনের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ হয়েছে। দু’বছর আগে প্রকল্পের শুরুতে নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে নন্দীগ্রাম স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়। নতুন রেলপথ তৈরির জন্য নন্দীগ্রাম স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় মাটি ও মোরামের কাজ হয়েছে। এমনকী, গত বছরের জুলাই মাস থেকে প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। নন্দীগ্রামের ঘোলপুকুর এলাকার বাসিন্দা উত্তম বেরা বলেন, “প্রথমে শুনেছিলাম, দু’বছরের মধ্যে রাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পাঁচ বছরের কাজ শেষ হল না।”
নন্দীগ্রামের রেলপ্রকল্প ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় রেলের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলদিয়ায় রেলের ডিএমইউ (ডিজেল মাল্টিপল ইউনিট) কোচ তৈরির কারখানা ও নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় রেলের যন্ত্রাংশ কারখানা তৈরির কারখানা তৈরি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই দুই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হলদিয়ায় হাতিবেড়িয়া এলাকায় রেলের ওই কোচ কারখানা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে পুরোপুরি ওই কারখানা চালু হয়নি। প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় ঘোষণা করা হয়েছিল কারখানায় প্রতি মাসে ৮ টি করে ডিএমইউ কোচ তৈরি করা হবে। কিন্তু প্রকল্প ঘোষণার চার বছর পরও সেই প্রতিশ্রুতি সত্যি হয়নি। নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় প্রস্তাবিত রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার শিলান্যাসের পর কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়নি। নতুন বাজেট ঘোষণার পর সংশয়ে বাসিন্দারা।