ঘাটাল শহরে দেবের সমর্থনে পোস্টার।
কেন্দ্র-রাজ্যকে বিঁধে, পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে লোকসভার জন্য পুরোদস্তুর প্রচার-অভিযান শুরু করে দিলেন রাজ্য বাম নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর বাজার সংলগ্ন কালিকাখালি ফুটবল ময়দানে বৃহস্পতিবার বিকালের হাজার আষ্টেকের জমায়েতে উপস্থিত বাম নেতৃত্ব সতর্ক ভাবে এড়িয়ে গেলেন লক্ষ্মণ-কাণ্ডের জেরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক বিতর্কও। এমনকী তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জনসভাতেও লক্ষ্মণ শিবিরের অনুগামী বলে পরিচিত জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কানু সাহু ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
লক্ষ্মণ-কাণ্ডে দলীয় চাপান-উতোর থিতিয়ে যাওয়ার আগেই তমলুক ও কাঁথি লোকসভা এলাকায় চারটি সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা বামফ্রন্ট। তারই প্রথম প্রচার-সভায় যোগ দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র লোকসভা ভোটে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার পরামর্শ দেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, “পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের সভা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন, তৃণমূলকে সতর্ক করে দিচ্ছি এ সব করতে যাবেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে খেলা খেলেছিলেন লোকসভায় তা করার চেষ্টা করবেন না।” উল্লেখ্য, এ দিনই পুলিশ-প্রশাসন তমলুকে বামেদের সভার অনুমতি দেয়নি। ওই প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যবাবু বলেন, “আমরা যে সব জায়গায় সভা করতে চাইছি, তার কোথাও অনুমতি মিলছে, কোথাও মিলছে না! এ দিনও তমলুকে একটি সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, চণ্ডীপুরের সভায় মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র ক’য়েক ঘণ্টা আগে। অথচ, তৃণমূলের বেলায় তা হয় না। এই ঘটনা পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বকেই প্রমাণ করে।
জেলা সিপিএমের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব লক্ষ্মণ-অনুগামীদের হাতে সাম্প্রতিক হেনস্থার প্রসঙ্গে নীরব থাকলেও নন্দীগ্রামে মিথ্যে মামলার প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামে ষড়ষন্ত্র করে তৃণমূল কমরেড লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়াদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছে। শুধু নন্দীগ্রামেই ৮ হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছে।’’ তাঁর কথায়, “এ ভাবে জেলে ঢুকিয়ে বামপন্থীদের রোখা যায় না!” তৃণমূল জামানার সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে তাঁর কটাক্ষ, “যিনি এক সময় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সভা পরিচালনা করতেন আজ তিনি জেলে। সুপ্রিম কোর্টে ওই কেলেঙ্কারি নিয়ে মামলা চলছে। ২৬ মার্চ তার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। ভয়ে তৃণমূল নেতাদের বুক দুরু দুরু করছে!”
পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর বাজারে বাম জনসভা।
সূর্যবাবু কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “কংগ্রেস শুয়ে পড়েছে। সারা দেশে কংগ্রেস হেরে বসে আছে।” তৃণমূলের এক ঝাঁক তারকা প্রার্থীর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে দলে নতুন মুখ কোথায়? আমরা বলি, আমাদের অনেক মুখ আছে কিন্তু, তৃণমূলের তো একটাই মুখ! আর কোনও মুখ নেই। ওদের ব্রিগেড সমাবেশে তাই একজনকেই বক্তব্য রাখতে হয়!” নন্দীগ্রামের সমর্থদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামে যে সব প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে, সে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে কী! রেললাইনের কাজ হয়েছে? কারখানা হয়েছে? যদি ওঁরা কৈফিয়ৎ দিতে পারেন তা হলে ওদের ভোট দিন।”
বর্তমান শাসকদলের সঙ্গে নানা সময়ে জোট করেছে নানা দল। এই প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করে সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে রামধনু জোট করেছিল শাসকদল। আজ তারা আর জোটে নেই! তৃণমূল নেত্রী এখন কান্না জুড়েছেন আন্না হাজারের কাছে।” লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের একদল তারকা প্রার্থী প্রসঙ্গে তাঁর অনুরোধ, “খালি মুখ দেখে ওদের প্রার্থীদের ভোট দেবেন না।”
এ দিনের জনসভায় ছিলেন তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থী তাপস সিংহ ও শেখ ইব্রাহিম আলি। কাঁথির বর্তমান সাংসদ শিশির অধিকারীর প্রতিপক্ষ তাপস সিংহ বলেন, ‘‘নির্বাচনে প্রার্থী আমি নই, আমার হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে গোটা বামফ্রন্ট।” উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, নিরিঞ্জন সিহি, নির্মল জানা, হিমাংশু দাস, সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন ঘড়া, আরএসপির জেলা সম্পাদক অমৃত মাইতি এবং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কানু সাহু।
—নিজস্ব চিত্র।