প্রতি বুথেই বিশেষ নজর

রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী বুধবারের ভোটে কমিশন আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে সংবেদনশীল বুথের মতোই প্রতিটি বুথেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি বুথেই হয় ডিজিট্যাল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা, আধা সামরিক বাহিনী বা মাইক্রো পর্যবেক্ষক অথবা ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কমিশন সূত্রে খবর, চতুর্থ দফার ভোটে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে সেই চেষ্টা করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:১১
Share:

গোদাপিয়াশালের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল।ছবি: কিংশুক আইচ।

রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী বুধবারের ভোটে কমিশন আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে সংবেদনশীল বুথের মতোই প্রতিটি বুথেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি বুথেই হয় ডিজিট্যাল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা, আধা সামরিক বাহিনী বা মাইক্রো পর্যবেক্ষক অথবা ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কমিশন সূত্রে খবর, চতুর্থ দফার ভোটে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে সেই চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে অবশ্য বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির কথায়, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ করেছি।”

Advertisement

বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর। দু’টি কেন্দ্রে ভোটার ২৯ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৩৬ জন। জঙ্গলমহলের একদা মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় হওয়ায় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের বেশিরভাগ বুথই সংবেদনশীল। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা গড়বেতা। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মেদিনীপুর সদর ও শালবনির বিস্তীর্ণ অংশও একটা সময় মাওবাদী প্রভাবিত ছিল। তাছাড়া, এই কেন্দ্রে রয়েছে খড়্গপুর গ্রামীণ, নারায়ণগড়, দাঁতনের মতো রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা। দু’টি কেন্দ্র মিলিয়ে বুথের সংখ্যা ৩৮৮৫টি। ঝাড়গ্রামের বেশির ভাগ বুথ অতি উত্তেজনাপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত হলেও, অন্য এলাকার বুথ উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি, এমনই অভিযোগ ছিল বিরোধী দলগুলির। ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শনিবার মেদিনীপুরে এসেছিলেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। বিরোধীরা তাঁর কাছে নানা অভিযোগ জানান। কমিশনও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখতে চায়। তাই এত দিন সর্বদল বৈঠক, রাজনৈতিক দলের অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি থানার ওসি ও বিডিও-র রিপোর্টের নিরিখে যে সংবেদনশীল বুথের তালিকা তৈরি হয়েছিল। কমিশন ওই তালিকা গ্রহণ করেছিল সতর্কতার সঙ্গে। যে ব্লক থেকে সংবেদনশীল বুথের তালিকা আসত, তাতে অবশ্যই বিডিও এবং ওসির যৌথ স্বাক্ষর দেখার পরেই তা গ্রহণ করা হত। আবার লোকসভা কেন্দ্রে কত সংবেদনশীল বুথ, কোন বুথে কোন ধরনের বাহিনী রাখা হবে সেই তালিকাতেও জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসার থেকে পর্যবেক্ষক সকলের সাক্ষর সহ তালিকা পেশ করা হচ্ছিল। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “যে ভাবে অভিযোগ আসছে, তাতে কে নিজের ঘাড়ে দায় নেবে। তাই নীচ স্তর থেকেই সকলের যৌথ সাক্ষরের মাধ্যমেই তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছিল।”

ঝাড়গ্রামে যৌথ বাহিনীর টহল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

Advertisement

যদিও সেই তালিকার আর ততটা গুরুত্ব নেই। কারণ, এ বার প্রতিটি বুথেই ৫টি ব্যবস্থার মধ্যে যে কোনও একটি থাকবেই। এগুলি হল ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিট্যাল ক্যামেরা, আধা সামরিক বাহিনী, মাইক্রো অবজারভার এবং ওয়েব কাস্টিং। কমিশন সূত্রে খবর, দু’টি কেন্দ্রের প্রায় ৪ হাজার বুথের মধ্যে দেড় হাজার বুথে ক্যামেরা, মাইক্রো অবজারভার বা ওয়েব কাস্টিং করা হবে। বাকি বুথে থাকবে আধা সামরিক বাহিনী। অতি সংবেদনশীল বুথে আধা সেনার সঙ্গে ক্যামেরাও থাকবে। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “আমরা চাই, প্রতিটি মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে আসুন।”

ইতিমধ্যে আধা সেনা জেলায় পৌঁছেছে। জেলায় প্রায় দেড়শো কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী আসবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এ ছাড়া জেলায় মাওবাদী মোকাবিলার জন্য প্রায় ৩০ কোম্পানি বাহিনী রয়েছে। সাধারণত এক কোম্পানিতে ১০০ জন জওয়ান থাকলেও ৮ সেকশনের (প্রতি সেকশনে ৮ জন) বেশি বাহিনী কাজে লাগানো হয় না। বাকিদের শিবির পাহারা, রান্না, জামা কাপড় কাচা-সহ বিভিন্ন কাজের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এ বার অবশ্য ৯ সেকশন অর্থাৎ প্রতি কোম্পানিতে ৭২ জনকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি বুথ এক জায়গায় থাকলে সেখানে ২ জন করে ৪ জন আধা সেনা থাকবে। ২ জনের কম কোথাও থাকবে না। মাওবাদী এলাকায় অবশ্য ন্যূনতম এক সেকশন অর্থাৎ ৮ জন থাকার কথা। কোথাও কোথাও ২-৩ সেকশনও থাকবে। সব মিলিয়ে নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে কমিশন জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন