প্রতারকের মোবাইলে তাঁর ছবি, অবাক পুলিশ-কর্তা

পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ধরা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের এক যুবককে। কিন্তু তাকে জেরা করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল এক পুলিশ-কর্তার। ধৃতের মোবাইলে সেই পুলিশ আধিকারিক-সহ একাধিক পুলিশ-কর্তার ছবি! পুলিশের দাবি, তদন্তে তারা জেনেছে, সেই সব ছবি দেখিয়ে নিজেকে পুলিশকর্মী তথা পুলিশ-কর্তাদের ঘনিষ্ঠ বলে লোকের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত রাজীব বক্সী নামে ওই যুবক।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ধরা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের এক যুবককে। কিন্তু তাকে জেরা করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল এক পুলিশ-কর্তার। ধৃতের মোবাইলে সেই পুলিশ আধিকারিক-সহ একাধিক পুলিশ-কর্তার ছবি! পুলিশের দাবি, তদন্তে তারা জেনেছে, সেই সব ছবি দেখিয়ে নিজেকে পুলিশকর্মী তথা পুলিশ-কর্তাদের ঘনিষ্ঠ বলে লোকের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত রাজীব বক্সী নামে ওই যুবক।

Advertisement

বছর ছাব্বিশের রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই তাকে গড়বেতা আদালতে হাজির করে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। সম্প্রতি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গোয়ালতোড় গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেপুটি পুলিশ সুপার (অপারেশন) সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরা চলাকালীন ধৃতের মোবাইলটি সৌতমবাবুর হাতে আসে। মোবাইলটির ফটো-অ্যালবামে থাকা ছবিগুলি দেখে চমকে ওঠেন ওই পুলিশ-কর্তা। বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আইজি, ডিআইজি, এসপি, ডিএসপি, এসডিপিও পদমর্যাদায় কর্মরত পুলিশ আধিকারিকদের ছবি ঠাসা তাতে! রয়েছে খোদ সৌতমবাবুর ছবিও।

Advertisement

প্রতারণার অভিযোগে ধৃতের মোবাইলে নিজের ছবি দেখে প্রথমটায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন ডিএসপি (অপারেশন)। যদিও এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সৌতমবাবুর জবাব, “ওই যুবককে জেরা করে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য মিলেছে।”

কিন্তু এত জন পুলিশ-কর্তার ছবি রাজীবের মোবাইলে এল কী করে?

পুলিশ সূত্রের দাবি, ওই যুবককে জেরা করে তারা জেনেছে, বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘেঁটে সে ওই ছবিগুলি ডাউনলোড করেছে। তারপরে গ্রামের বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে গিয়ে নিজেকে পুলিশ কর্মী অথবা পুলিশের ‘সোর্স’ বলে পরিচয় দিয়েছে।

পুলিশ-কর্তাদের ছবি দেখিয়ে দাবি করেছে, ওই সব পুলিশ আধিকারিকেরা তার ঘনিষ্ঠ। ফলে, পুলিশে চাকরি করে দেওয়া তার কাছে কোনও ব্যাপার নয়। এই কৌশল করে রাজীব মোটা টাকাও হাতিয়েছে বলে অভিযোগ। মোবাইলটিতে যে সব পুলিশ-কর্তাদের ছবি মিলেছে, তাঁদের কেউ রাজীবকে চেনেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বছর তিনেক ধরে এই ‘কারবার’ চালাচ্ছিল ওই যুবক। শেষমেশ বাঁকুড়ার সিমলাপালের এক যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে সে ধরা পড়ে যায়। ওই যুবতীর অভিযোগ, পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার নামে রাজীব তাঁর থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাসও করেছে। ওই যুবতী পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, রাজীবের মোবাইলে পুলিশ-কর্তাদের ছবি দেখে তাকে পুলিশকর্মী হিসেবে বিশ্বাস করেছিলেন তিনি।

পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে শনিবার রাজীবকে ফের গড়বেতা আদালতে হাজির করানো হয়। এ দিন তাকে ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “পুলিশের নাম করে প্রতারণা করা গুরুতর অপরাধ। গোয়ালতোড়ের ওই যুবক তেমনই করেছে বলে আমরা জেনেছি। তদন্তে সব দিকই দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন