পাশের হারে রাজ্য সেরা পূর্ব, পিছিয়ে পশ্চিম

গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাশের হারে শীর্ষে থাকছে পূর্ব মেদিনীপুর। তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে থাকছে পশ্চিম মেদিনীপুর। এ বার মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার ৯৫.০৪%/ অথচ পশ্চিমে পাশের হার ৮৬.৪২%। পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার গতবছরের থেকে প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। কলকাতা সংলগ্ন জেলা না হয়েও মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরের এই সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যায় জেলার শিক্ষা মহলের নানা মত রয়েছে। অনেকের ধারণা, অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনায় এগিয়ে থাকা এই জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ স্বভাবতই বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০০:৩৬
Share:

গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাশের হারে শীর্ষে থাকছে পূর্ব মেদিনীপুর। তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে থাকছে পশ্চিম মেদিনীপুর। এ বার মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার ৯৫.০৪%/ অথচ পশ্চিমে পাশের হার ৮৬.৪২%।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার গতবছরের থেকে প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। কলকাতা সংলগ্ন জেলা না হয়েও মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরের এই সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যায় জেলার শিক্ষা মহলের নানা মত রয়েছে। অনেকের ধারণা, অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনায় এগিয়ে থাকা এই জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ স্বভাবতই বেশি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের সচেতনতাও সাফল্যের কারণ হিসেবে উঠে আসছে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রদের সাহায্যার্থে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব সময় যত্নবান। জেলার শিক্ষকদের একাংশ আরও মনে করেন, তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি শহরের স্কুলগুলির পাশাপাশি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। ফলে পড়াশোনার মানে তার প্রভাব পড়ছে।

অন্য দিকে, পশ্চিমের পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, জঙ্গলমহলের জেলা হওয়ার দরুন মাধ্যমিকের ফলে তার প্রভাব পড়ছে। কারণ, বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড়, শালবনির মতো জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে প্রত্যন্ত বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার আলো এখনও সে ভাবে পৌঁছয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, “কেন পূর্বের থেকে পশ্চিমে পাশের হার কম, এটা এককথায় বলা সত্যিই মুশকিল। এ জেলার কিছু এলাকা পড়াশোনার দিক থেকে একটু পিছিয়ে ছিল। তবে, এখন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। ফলে, আগামী দিনে পাশের হার আরও বাড়বে।” জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সার্বিক ভাবে পাশের হারে পশ্চিম একটু পিছিয়ে। তবে শুধুমাত্র ঘাটাল মহকুমার কথা যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে পাশের হার সেই ক্ষেত্রে বেশি। জঙ্গলমহলে পাশের হার কম থাকে। স্বাভাবিক ভাবে সার্বিক ভাবে যখন পাশের হারের হিসেব করা হয়, তখন সেখানে তার প্রভাব পড়ে।”

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের সাফল্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কাঁথির বনমালীচট্টা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য মামুদ হোসেন জানালেন, রাজ্যের মধ্যে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাতেই প্রথম সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়েছিল। তার জেরে সার্বিকভাবে জেলায় শিক্ষার পরিবেশ ও অভিভাবকদের সচেতনতা তৈরি হয়েছে। পাঁশকুড়ার ব্র্যাডলি বার্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বনমালী সামন্ত বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক আর অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েকে ন্যূনতম স্কুলশিক্ষা দেওয়ার নাছোড় মানসিকতাই মাধ্যমিকের এই সাফল্য এনে দিয়েছে।” বনমালীবাবুর অভিজ্ঞতা, শহরের ছেলে-মেয়েদের মতো গাড়িতে করে স্কুলে আসা দূর, পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ গ্রামের ছেলে-মেয়ে এখনও হেঁটে স্কুলে পৌঁছয়। পড়ার প্রতি এদের জেদ ভাল ফল করার ইচ্ছে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ-বিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক স্বপনকুমার মাজি বলেন, “প্রথমত, আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই পরিশ্রমী। আর দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্য-সহ নানা বাধা সত্ত্বেও এই জেলার অভিভাবকদের মধ্যে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠানোর প্রবণতা রয়েছে।”

এ বার পশ্চিমে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল ৬৯, ৩৩১ জন। এর মধ্যে ৩৪,১৫৬ জন ছাত্র এবং ৩৫,১৭৫ জন ছাত্রী। পাশের হারে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃতীর কিন্তু অভাব নেই। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী এ বারও মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে। ঘাটালের রিমি ঘোষ রাজ্যে দশম হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৩। মেদিনীপুরের মতো শহরাঞ্চলেও ফল মোটের উপর ভাল। মেদিনীপুর শহরের অন্যতম কৃতী সৈকত সাউ পেয়েছে ৬৭০। ছাত্রীদের শহরে মধ্যে এগিয়ে শ্রুতি সিংহ মহাপাত্র। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৯। সৈকত ভবিষ্যতে চিত্র পরিচালক হতে চায়। অবসরে সে কবিতা পড়ে। আর শ্রুতির স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। সে ভালবাসে গল্পের বই পড়তে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে শিক্ষার মানোন্নয়নে অবশ্য যথেষ্ট সচেষ্ট সরকার। গত তিন বছরে শুধু জঙ্গলমহল এলাকার ১১৭টি স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে, প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের আর দূরের স্কুলে যেতে হয় না। অধিকাংশ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগও চালু রয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলা মনিটরিং টিমের কনভেনর নির্মলেন্দু দে বলেন, “জঙ্গলমহলের সর্বত্র শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না। গত তিন বছরে সেই পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।” আগামী দিনে জঙ্গলমহলের ফল এবং সামগ্রিক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের মাধ্যমিকের ফল আরও ভাল হবে বলেই সকলের আশা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন