দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তলবি সভার নির্ধারিত দিনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতেই পারলেন না বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদ্যসেরা। অভিযোগ, খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঢোকার আগে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার কাছে সোমবার রাতে ওই সদস্যদের আটকে দেওয়া হয়। এর জেরে বিক্ষুব্ধ সদস্যেরা উপস্থিত হতে না পারায় তলবি সভা ভেস্তে যায়।
পঞ্চায়েতের অর্থ তছরূপ, সময় মত অর্থসমিতি ও সাধারণ সভার মিটিং না ডাকা, সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার-সহ একাধিক অভিযেগে গত ২২ অগস্ট খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলের নয় সদস্য। তাকে সমর্থন করেছিলেন পঞ্চায়েতের তিন নির্দল সদস্যও। এ দিন, অনাস্থা আনা ১০ সদস্যের অনুপস্থিতিতে (সাত জন তৃণমূলের ও তিন জন নির্দল) ১৮ সদস্য বিশিষ্ট খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮ জন উপস্থিত ছিলেন। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় সকাল থেকেই পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী উপস্থিত ছিল।
বিডিও অরীন্দ্রজিৎ দেবশর্মা নির্ধারিত সময়, বেলা ১২টায় পঞ্চায়েত অফিসে যান। কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় কিছু সময় অপেক্ষার পরে তিনি ব্লক অফিসে ফিরে যান। তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী, আগামী এক বছর প্রধানের বিরুদ্ধে নুতন করে কোনও অনাস্থা আনা যায় না। তবে আইনের আশ্রয় নিলে অন্য কথা।”
প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন উপপ্রধান প্রশান্ত প্রামাণিক। প্রশান্তবাবু রবিবার অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পর থেকেই সদস্যদের বাড়িতে বাড়িতে মোটরবাইক বাহিনী গিয়ে অনাস্থা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, “পরিস্থিতি দেখে ওই সদস্যেরা প্রাণভয়ে আত্মগোপন করেছেন।” কিন্তু, এ দিন অনাস্থা ডেকেও কেন এলেন না?
তৃণমূলের একাংশ জানিয়েছে, আত্মগোপন করে থাকা দশ পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস সোমবার গভীর রাতে খেজুরিতে আসার সময় নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় তৃণমূলের এক দল লোক তাঁদের আটকান। অভিযোগ, তখন পার্থবাবু-সহ সকলের মোবাইল জোর করে কেড়ে নেওয়া, গাড়ি ভাঙচুর করা ছাড়াও তাঁদের নিগ্রহ করে তিন-চারটি ঘরে আটকে রাখা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাঁদের সোনাচূড়া থেকে উদ্ধার করে খেজুরি থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে অবশ্য কেউই মুখ খোলেননি।
খেজুরি থানায় বসে প্রশান্তবাবু শুধু বলেন, “আমাদের কিছুই বলার নেই। কারও বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ নেই।” তিনি কিছু বলতে না চাইলেও দলেরই একংাশ বলছে, মুখ খুললে দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকলে কুলুপ এঁটেছেন।
এ দিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাসের ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ মোবাইলের হদিশ মেলেনি। তাঁর প্রতিক্রিয়াও জানা যায়নি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি শুধু বলেন, “দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ডাকার অধিকার আছে। তা ঠেকাতে আক্রমণ কিংবা অপহরণের মতো ঘটনা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”