পঞ্চায়েতের কাজ খতিয়ে দেখতে বিধানসভার দল

পঞ্চায়েতের কাজকর্মের মূল্যায়ন করতে বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরে বৈঠক করেন রাজ্য বিধানসভার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির এক প্রতিনিধি দল। চার সদস্যের এই দলে ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু মাইতি। মেদিনীপুর শহরের সার্কিট হাউসে বৈঠকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের পর্যালোচনা করা হয়। জানা গিয়েছে, পর্যালোচনায় উঠে আসা সমস্যার সরলীকরণে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০০:০৩
Share:

পঞ্চায়েতের কাজকর্মের মূল্যায়ন করতে বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরে বৈঠক করেন রাজ্য বিধানসভার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির এক প্রতিনিধি দল। চার সদস্যের এই দলে ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু মাইতি। মেদিনীপুর শহরের সার্কিট হাউসে বৈঠকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের পর্যালোচনা করা হয়। জানা গিয়েছে, পর্যালোচনায় উঠে আসা সমস্যার সরলীকরণে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে কমিটি।

Advertisement

বৈঠক শেষে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা ভগবানপুরের বিধায়ক অর্ধেন্দুবাবু বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের সার্বিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। দেখছি, প্রকল্পগুলো রূপায়ণে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, হলে সেগুলো কী কী।” ওই বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক সুনীল তিরকে, নন্দীগ্রামের বিধায়ক ফিরোজা বিবি, দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া-সহ জেলার বেশ কয়েকজন বিধায়কও।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প জড়িয়ে রয়েছে। এ দিন প্রকল্প ধরে ধরে কাজের পর্যালোচনা হয়। একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, নিজ গৃহ নিজ ভূমি, নির্মল গ্রাম-সহ সমস্ত প্রকল্পের কথাই উঠে আসে বৈঠকে। উপস্থিত আধিকারিকেরা কাজের অগ্রগতি নিয়ে নিজেদের মতামত জানান। কমিটির চেয়ারম্যানও তাঁর বক্তব্য রাখেন। একশো দিনের প্রকল্প নিয়েও নানা সমস্যার কথা উঠে আসে বৈঠকে।

Advertisement

এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে তিন কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। অবশ্য, এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। একশো দিনের প্রকল্পে জেলায় জব কার্ড ইস্যু হয়েছে ৯,১৭,১৭৯টি। সেখানে কাজ পেয়েছে ৪,৭৪,৪৬৩টি পরিবার। গড়ে কাজ মিলেছে ২৩ দিন। ১,৪৭,৬৯১টি প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে। সেখানে ৪,৪৯২টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ৬৭,২৩২টি প্রকল্পের কাজ চলছে। একশো দিনের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ার কথা। তাও এখনও হয়নি।

বৈঠকে রাস্তাঘাট নির্মাণ-সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে ২০১৩-’১৪ তে ১৫টি রাস্তা তৈরি হয়েছে। ২০১৪-’১৫- র জুন পর্যন্ত ৯টি রাস্তা তৈরি হয়েছে। আরও ৮৬টি রাস্তার কাজ চলছে। আরও কিছু রাস্তার ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করেও ঠিকাদারদের সাড়া মেলেনি। ফলে, কাজও এগোয়নি। বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি জানান, অতিরিক্ত অনুমোদন মেলায় জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে দু’টি সরকার অধিকৃত সংস্থাও কাজ করছে।

পঞ্চায়েত স্তরে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে না বলে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে নালিশ করেন কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই। ভূমি দফতর সংক্রান্ত কয়েকটি সমস্যার কথাও তিনি জানান। রামেশ্বরবাবু বলেন, “এক বছর পর জেলা পরিষদের সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। আমি শুনেছি, পঞ্চায়েত স্তরের বৈঠকও নিয়মিত হয় না। বেশ কিছু পঞ্চায়েত সদস্য অফিসেই আসেন না। বাড়িতে খাতা পাঠিয়ে তাঁদের সই করানো হয়। ভূমি দফতরে প্রচুর শূন্য পদ রয়েছে। নতুন করে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে, কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কিছু সমস্যার কথা কমিটির কাছে জানিয়েছি।” একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও প্রচুর শ্রমিক মজুরি পাননি বলে জানান তিনি।

এ জন্য অবশ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অর্ধেন্দুবাবু কেন্দ্রকেই দুষেছেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আসে কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্র বরাদ্দ করছে না। এই জেলাও প্রচুর টাকা পায়। তাই কাজ করেও বেশ কিছু শ্রমিক মজুরি পাননি। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের রূপায়ণ নিয়ে জেলাকেও যথেষ্ঠ চিন্তার মধ্য দিয়ে এগোতে হচ্ছে।”

চলতি আর্থিক বছরে নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পে ১,৫৯১ জন ৩৯.৪৮ একর জমি পেয়েছেন। ২০১৩-’১৪ তে ৮,২১০ জন ২৪৩.৯৬ একর জমি পেয়েছিলেন। ২০১২-’১৩ তে ৮৩৫ জন ৩৭.৬১ একর জমি পেয়েছিলেন। ৫১,৭২৭টি মিউটেশনের আবেদন পড়ে রয়েছে। ২,৫২২টি কনভারসেশনের আবেদন পড়ে রয়েছে।

বৈঠক শেষে অর্ধেন্দুবাবুর মন্তব্য, “এ জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নে যে কাজ করেছে, স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সেই কাজের প্রশংসাই করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন