লালগড়

পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন দলেরই অঞ্চল সভাপতি এমন অভিযোগ করে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, সদস্যরা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করেছেন ব্লক সভাপতি। বৈঠক ডেকে ওই অঞ্চল সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁর অধীনে থাকা ১০টি বুথ কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১০
Share:

পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন দলেরই অঞ্চল সভাপতি এমন অভিযোগ করে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, সদস্যরা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করেছেন ব্লক সভাপতি। বৈঠক ডেকে ওই অঞ্চল সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁর অধীনে থাকা ১০টি বুথ কমিটি।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে লালগড়ের ধরমপুরে। তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় যে নেতার ডানা ছেঁটে দিয়েছেন, সেই দিলীপ মাহাতো এক সময় ছিলেন জনগণের কমিটির নেতা। বর্তমানে মুকুল রায়ের অনুগামী এই নেতা তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি। তৃণমূল পরিচালিত ধরমপুর পঞ্চায়েতের প্রধান দ্রৌপদী চালক বিনপুর-১ (লালগড়) বনবিহারীবাবুকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, দিলীপবাবু পঞ্চায়েতের কাজকর্মে নানা ভাবে হস্তক্ষেপ করছেন। প্রধানকে এড়িয়ে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ধরমপুর পঞ্চায়েতে একশো দিনের প্রকল্পে ‘স্কিলড্ টেকনিক্যাল পার্সন’ (এসটিপি) পদে পছন্দের প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য দিলীপবাবু হুইপ জারি করেন বলেও অভিযোগ।

এ বিষয়ে তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারীবাবু বলেন, “দিলীপবাবু এবং পঞ্চায়েত প্রধান কেউই দলের উর্ধ্বে নন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁদের কাজ করতে হবে। দলকে আরও সক্রিয় করতে ধরমপুর অঞ্চলে দলীয় বুথ কমিটি গুলিকে নতুন করে পুনর্গঠন করা হবে। এসটিপি পদে স্বচ্ছভাবে নিয়োগের জন্য পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য মানেননি দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি যোগ্য প্রার্থীর পক্ষেই সওয়াল করেছি। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।”

Advertisement

নিয়মানুযায়ী একশো দিনের প্রকল্পে কারিগরি ডিপ্লোমাপ্রাপ্তকে এসটিপি পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করতে পারেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। এসটিপি-র কাজ হল প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা, কাজের দেখভাল ও বিল তৈরি। অভিযোগ, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দিলীপবাবু তাঁর পছন্দের এক প্রার্থীকে ওই পদে নেওয়ার জন্য দলীয় হইপ জারি করেন। তা অগ্রাহ্য করে ১৩ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েতের সভায় তৃণমূলের সাত জন সদস্যের মধ্যে প্রধান, উপপ্রধান-সহ ৬ জন স্থানীয় এক যুবককে ওই পদে নিয়োগে জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দিলীপবাবুর বাধায় সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি বলে অভিযোগ।

এরপরই ব্লক তৃণমূল সভাপতির দ্বারস্থ হন পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যরা। বনবিহারীবাবুর কাছে একযোগে লিখিত অভিযোগ করেন ধরমপুরের প্রধান, উপপ্রধান-সহ শাসকদলের ছয় পঞ্চায়েত সদস্য এবং দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। অভিযোগ পেয়ে সোমবার বিকেলে ভাউদি কমিউনিটি হলে দলীয় বৈঠক ডাকেন বনবিহারীবাবু। অভিযুক্ত দিলীপবাবুও সেই বৈঠকে ছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে দিলীপবাবুর সামনেই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পঞ্চায়েতের প্রধান সরাসরি অভিযোগ করেন, এসটিপি পদে স্থানীয় এক যুবককে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও দিলীপবাবু ধরমপুর পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়কের ভাইকে নিয়োগের জন্য চাপ দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তি আবার এলাকার লোকও নন। দিলীপবাবু পঞ্চায়েতের কাজকর্মে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপোষণ করছেন বলেও অভিযোগ করা হয় বৈঠকে। দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ চলে। বনবিহারীবাবু ধরমপুর অঞ্চলের দশটি দলীয় বুথ কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

অঞ্চল সভাপতি দিলীপবাবুর গুরুত্ব খর্ব করা হল মনে করছে শাসক শিবিরের একাংশ। কারণ, বুথ কমিটিগুলিতে এতদিন দিলীপবাবুর অনুগামীদের প্রাধান্য ছিল। পক্ষান্তরে, কিছুদিন আগে তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় দলের অন্দরে লিখিত ফরমান জারি করে জানিয়েছিলেন, দলীয় অঞ্চল সভাপতিরা নিজের নিজের এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানকে পরিচালনা করবেন। সেই ফরমানের প্রেক্ষিতে দলের অন্দরে সমালোচনার মুখে পড়েন বনবিহারীবাবু। এ বার বনবিহারীবাবু নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি দিলীপ মাহাতোর ডানা ছাঁটার বার্তা দিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন