গীতাঞ্জলি প্রকল্প

পড়ে অর্থ, মত্‌স্যজীবীদের বাড়ি তৈরিতে ঢিলেমি

অর্থ বরাদ্দ হয়েছে দু’বছর আগে। রাজ্য সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দরিদ্র মত্‌স্যজীবীদের জন্য মোট ৬৮০টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৫
Share:

অর্থ বরাদ্দ হয়েছে দু’বছর আগে। রাজ্য সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দরিদ্র মত্‌স্যজীবীদের জন্য মোট ৬৮০টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। তবে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে অর্থ বরাদ্দ হলেও এখনও অর্ধেকের বেশি বাড়ি তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে বলে জানান জেলা পরিষদের মত্‌স্য ও প্রাণী সম্পদ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস। মত্‌স্য কর্মাধ্যক্ষের অবশ্য দাবি, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও ওই প্রকল্পে টাকা পেতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ফলে কাজ শুরু হতেও কিছুটা দেরি হয়েছে। বাড়ি তৈরির জন্য ঠিকাদার নিয়োগের পর চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের আগে বাড়ি তৈরির কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে দ্রুত বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, “২০১২-১৩ আর্থিক বছরে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে মত্‌স্যজীবীদের বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ ও মত্‌স্যদফতরের ব্যর্থতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ হয়নি। দেরিতে টাকা পাওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

Advertisement

জেলা পরিষদ ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের চালু করা ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে দরিদ্র মত্‌স্যজীবী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবারের বাড়ি তৈরির জন্য আগে বাড়ি পিছু ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হত। চলতি আর্থিক বছর থেকে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দ কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে আগের নিয়মানুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ওই প্রকল্পে ৬৮০টি মত্‌স্যজীবী পরিবারের বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন ব্লকে দরিদ্র মত্‌স্যজীবীদের তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় বিধায়কদের কাছ থেকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। বিধায়কদের সুপারিশ অনুযায়ী, মত্‌স্যজীবী পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে তাঁদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পূর্বে বরাদ্দকৃত অর্থে পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ ইঞ্চি ইটের দেওয়াল বিশিষ্ট দুটি ঘর, অ্যাসবেস্টসের ছাউনি, একটি বারান্দা, কাঠের দরজা ও কাঠের কাঠামো-সহ বাড়ইগুলি তৈরি করা হবে।

মত্‌স্য দফতর ওই বাড়িগুলি তৈরির জন্য টেন্ডার করে বিভিন্ন ব্লকে একাধিক ঠিকাদার নিয়োগ করেছিল। অভিযোগ, ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ শুরুর প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। এরফলে ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে ওই প্রকল্পে জেলায় মত্‌স্যজীবীদের জন্য পাকবাড়ি তৈরির কাজ শুরুই হয়নি বলে অভিযোগ। ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার কিছুদিন আগে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ শুরুর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপর জেলার বিভিন্ন ব্লকে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়।

Advertisement

জেলা পরিষদের হিসেব অনুযায়ী, জেলার বিভিন্ন ব্লক মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ২৫০টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। যদিও জেলায় মোট ৬৮০টি বাড়ি তৈরির কাজের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে এই প্রকল্পে ২৫টি বাড়ি তৈরির জন্য দু’জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এক জন ঠিকাদার ১৩টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করলেও অন্য এক ঠিকাদার চারটি বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেও এখনও শেষ করতে পারেনি। আবার পাঁশকুড়া-১ ব্লকে এই প্রকল্পে ৯টি বাড়ি তৈরির জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এখানে বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই হয়নি।

পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজিত রায় বলেন, “গীতাঞ্জলি প্রকল্পে মত্‌স্যজীবীদের বাড়ি তৈরির কাজে মত্‌স্য দফতর ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। এবিষয়ে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। আমাদের ব্লকে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য নিযুক্ত ঠিকাদার এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন