এই দু’টি আলমারি থেকেই খোয়া গিয়েছে গয়না ও টাকা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
জেলাশাসকের বাসভবন থেকে একেবারে ঢিলছোড়া দূরত্ব। এলাকায় যথেষ্ট পুলিশি টহলদারিও রয়েছে। এরই মধ্যেই তমলুক শহরের শালগেছিয়া এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়ির একাধিক তালা ভেঙে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না নিয়ে চম্পট
দিল দুষ্কৃতীরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের এই ঘটনা রবিবার সকালে জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে বাড়িতে তালা দিয়ে সপরিবারে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুল শিক্ষক নন্দদুলাল সাহু। রবিবার সকালে তাঁরা বাড়ি ফিরে দেখেন বাড়ির একাধিক দরজার তালা ভাঙা। আলমারির তালা ভাঙা। দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছে প্রায় ৪০ ভরি সোনার গয়না। ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় তমলুক থানার পুলিশ।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের বাসভনের ঠিক পিছনে তমলুক শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে শালগেছিয়া পশ্চিমপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে বাড়ি নন্দদুলাল সাহুর। অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুল শিক্ষক নন্দদুলালবাবুর স্ত্রী মিনতি সাহু হলদিয়া পাথরবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষিকা। তিন মেয়ের মধ্যে বড় নবনীতা হাওড়ার কুলগেছিয়ার একটি বিএড কলেজের শিক্ষিকা। মেজ মেয়ে সুচেতা এম টেক পাঠরত। আর ছোট মেয়ে স্বাগতা বেঙ্গালুরু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। নন্দদুলালবাবু ও তাঁর স্ত্রী, বড় মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন। জামাই প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়িতে আসে। নন্দদুলালবাবু স্ত্রী, কন্যা, নাতি-সহ সপরিবারে একটি টুরিস্ট সংস্থার সঙ্গে শান্তিনিকেতন, হাজারদুয়ারি বেড়াতে যাওয়ার জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
বেড়িয়ে ফিরে আসার পর রবিবার সকালে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে নন্দদুলাল দেখতে পান বাড়ির ঢোকার গ্রিলের দরজায় তালা নেই। প্রাচীরের ভিতরে কিছুটা দূরে তালা পড়ে রয়েছে। এরপরেই দেখতে পান বাড়ির মূল প্রবেশ পথের দরজার তালাও ভাঙা। আর বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখতে পান নিচ ও উপরতলায় মিলিয়ে থাকা তিনটি আলমারি, একটি শো-কেশের তালা ভেঙে জিনিসপত্র তছনছ হয়ে পড়ে রয়েছে। নিচতলার বিছানার তলায় থাকা বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না উধাও। নন্দদুলালবাবুর অভিযোগ, আলমারি ও বিছানার তলায় মিলিয়ে রাখা মোট ৪০ ভরি সোনার গয়না ও কয়েক হাজার নগদ টাকা চুরি হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তমলুক থানার পুলিশকে অভিযোগ জানানোর পরেই ওসি কৃষ্ণেন্দু প্রধান-সহ পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসেন।
হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে জেলা প্রশাসনিক অফিস ভবন থেকে কিছুটা দূরেই পূর্ব দিকে যাওয়া পুরসভার গলি পাকা রাস্তা ধরে কয়েক’শ মিটার দূরে শালগেছিয়া পশ্চিমপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে নন্দদুলাল দোতলা পাকা বাড়ি। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই জেলাশাসকের বাংলোর পিছনের দিকের প্রাচীর। নন্দদুলালবাবুর বাড়িতে গিয়ে এ দিন দেখা যায় আশেপাশে অনেক বসতবাড়ি রয়েছে। নন্দদুলাল বাড়ির বাইরের দিকের মূল দরজার তালা ছাড়াও বাড়ির ভিতরে একাধিক দরজা ও আলমারির, শো-কেশের তালা ভাঙা।
নন্দদুলালবাবু জানান, ‘‘একতলার ঘরে আলমারি, শো-কেশের তালা ভেঙে ও বিছানায় ডিভানের ভিতরে রাখা সব সোনার গয়না নিয়ে পালিয়েছে।’’ নন্দদুলালবাবুর স্ত্রী মিনতিদেবীর কথায়, ‘‘ফিরে দেখি বিছানা লণ্ডভণ্ড হয়ে আছ । খোঁজ করতে গিয়ে দেখি কোনও সোনার গয়না নেই।’’
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নন্দদুলালবাবুর বাড়িতে রঙের কাজ চলছিল। এছাড়াও বাড়ির আসবাবপত্র মেরামতির জন্য দু’জন মিস্ত্রি কাজ করেছিল। সপ্তাহ দু’য়েক আগে ওইসব কাজ শেষ হয়। এরপরেই নন্দদুলালবাবু সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
বেড়াতে যাওয়ার ফাঁকে এই চুরির ঘটনায় শহরের বাসিন্দাদের একাংশ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাইরে থেকে এসে এই এলাকায় জমি কিনে অনেকেই নতুন বাড়ি করেছেন। কিন্তু শহরের এই এলাকায় এধরনের চুরির ঘটনা আগে শোনা যায়নি। এই ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে ।