মালঞ্চ রোডের কিছুটা অংশে তৈরি হয়েছে ফুটপাথ। (ডান দিকে) রাস্তার বাকি অংশে চলছে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
৩৫-র মধ্যে এক।
খড়্গপুর পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের একটিতেও রাস্তার ধারে ফুটপাথ গড়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রম ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। তাও ওই ওয়ার্ডের একমাত্র মালঞ্চ রোডের দু’ধারে ফুটপাথ তৈরির কাজ হয়েছে।
পুজোর আগে খড়্গপুরের ব্যস্ত মালঞ্চ রোডের ধারে ফুটপাথ গড়ার পরিকল্পনার কথা জানান পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। ওয়ার্ড উন্নয়ন তহবিল ও পুরসভার কেন্দ্রীয় তহবিলের অর্থে এই কাজ হবে বলে জানানো হয়। যদিও মালঞ্চ রোডের একাংশে ফুটপাথ তৈরি হলেও বাকি অংশে আর কাজ এগোয়নি। যানজটের গেরোয় নাভিশ্বাস পথচারীদের।
২০১৪ সালের জুলাইয়ে মেদিনীপুর এসে জেলার সদর শহরে ফুটপাথ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো পরিকল্পনা হবয়। রাজ্য সরকার অর্থও বরাদ্দ করে। বরাদ্দ অর্থে প্রথম পর্যায়ে শহরের কেরানিতলা তেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত ফুটপাথ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে খড়্গপুরে এখনও অবশ্য ফুটপাথ তৈরির তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
খড়্গপুরের পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশে যাওয়ার মূল রাস্তা হল মালঞ্চ রোড। এই রাস্তা ধরে সহজেই শহরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজার ও খরিদা বাজারে পৌঁছনো যায়। সাহাচক হয়ে এই রাস্তাটি মুম্বই-কলকাতা জাতীয় সড়কের সঙ্গেও যুক্ত। পূর্ত দফতরই এই রাস্তার দেখভাল করে। রাস্তার ধারে একাধিক স্কুল, ব্যাঙ্ক, বেসরকারি সংস্থার অফিস থাকায় দিনভর ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে।
কয়েক দশক আগে ৬০ ফুট চওড়া এই রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ তৈরি করা হয়। রাস্তা লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশির জন্য দু’দিকেই গড়া হয় নিকাশি নালাও। মালঞ্চ রোডের নিকাশি নালা গিয়ে মিশেছে রেল এলাকার মূল নালায়। তারপর থেকে ফুটপাথের উপর গড়ে উঠেছে দোকান। হকারদের দাপটে অবরুদ্ধ নিকাশি নালাও। বছর তিনেক আগে রাস্তা সংস্কার করা হয়। যদিও জবরদখল হটিয়ে ফের ফুটপাথ গড়ার কোনও পরিকল্পনা চোখে পড়েনি।
হকারদের দাপটে ৬০ ফুটের রাস্তা ক্রমে সঙ্কীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে ১৮ ফুটের রাস্তায় যানজট নিত্যদিনের সমস্যা। সন্ধে হতেই মোটরবাইক আরোহী রোমিওদের দাপটে প্রাণ হাতে নিয়েই চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। সমস্যা সমাধানে মালঞ্চ রোডের ধারে ১৭ নম্বর ওেয়ার্ডের কাউন্সিলর রাস্তার দু’ধার থেকে জবরদখল হটিতে ফুটপাথ তৈরিতে উদ্যোগী হন। ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে মালঞ্চ রোডের দু’ধারে ফুটপাথ গড়াও হয়। সেই সময়ই পুরপ্রধান জানিয়েছিলেন, শহরের সৌন্দর্যায়নের স্বার্থে ওই রাস্তার দু’ধারে থাকা প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কাছে ফুটপাথ গড়ার আবেদন করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরেরা উদ্যোগী হলে পুরসভা সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও কাজ আর এগোয়নি।
১৭ নম্বর ছাড়াও মালঞ্চ রোডের দু’ধারে রয়েছে ১২, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একই রাস্তার একটি অংশে ফুটপাথ থাকলেও বাকি অংশে তা না থাকায় বেমানান লাগছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবু শর্মা বলেন, ‘‘শহরের কোথাও ফুটপাথ নেই। বয়স্ক মানুষদের খুব অসুবিধা হয়। মালঞ্চ রোডেরও বেশিরভাগ অংশে ফুটপাথ না থাকায় সমস্যা হয়।’’
প্রশ্ন উঠছে, বাকি কাউন্সিলররা কেন ফুটপাথ গড়তে উদ্যোগী হলেন না?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থের অভাবের জন্যই বাকি কাউন্সিলররা ফুটপাথের কাজ করতে উৎসাহ দেখাননি। শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সরিতা ঝাঁ বলেন, “সকলেই চায় ওয়ার্ডের সৌন্দর্যায়নে পার্ক, ফুটপাথ তৈরি হোক। কিন্তু সে জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। আমার ওয়ার্ডে আগে জল, আলো, নিকাশির সমস্যা মেটানো প্রয়োজন। ওয়ার্ড উন্নয়নের টাকা তাতেই খরচ করেছি।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরসভা সরাসরি ফুটপাথ তৈরি করলে দ্রুত কাজ হবে বলে মনে হয়।’’
অর্থ সঙ্কটের কথা শোনা গিয়েছে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লক্ষ্মী মুর্মুর মুখেও। তিনি বলেন, “মালঞ্চ রোডের সবচেয়ে বড় অংশ আমার ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। পুরপ্রধান ফুটপাথ গড়ার কথা বলেছিলেন। তবে অর্থের অভাবেই পরিকল্পনা এগোচ্ছে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুরসভার কেন্দ্রীয় তহবিলের টাকা পেলে নিশ্চয় ফুটপাথ তৈরি করা হবে।’’
শুধু মালঞ্চ রোড নয়, শহরের ঝাপেটাপুর রোড, পুরতনবাজার-কৌশল্যা রাস্তা, ইন্দার ওটি রোডের ধারে নেই ফুটপাথ। খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “শহরে এখনও অনেক রাস্তা পাকা নয়। অনেক এলাকায় জল ও নিকাশির সমস্যাও রয়েছে। পুরসভার আগে সেই চাহিদা পূরণ করা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মালঞ্চ রোডের কিছুটা অংশে যখন ফুটপাথ হয়েছে তখন সমগ্র রাস্তায় তা তৈরি হওয়া উচিত। এ জন্য পুরসভার কেন্দ্রীয় তহবিলের অর্থ বরাদ্দ হওয়া প্রয়োজন।”
যদিও বিষয়টি নিয়ে পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ, সৌন্দর্যায়নের জন্য পার্ক তৈরি করতে পুরসভার সকল কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেছি। পুরবোর্ড গঠনের পর প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একবার অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আমারও মনে হয়, সব ওর্য়াডের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাস্তার দু’ধারে জবরদখল রয়েছে। ফুটপাথ গড়তে সেগুলিও সরাতে হবে। পুরবোর্ড গঠনের চার মাসের মধ্যে সব কাজ সম্ভব নয়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’