ফের মেদিনীপুর শহরে সিপিএমের জেলা সম্মেলন

প্রাথমিক ভাবে ঝাড়গ্রাম ও ঘাটাল নিয়ে কথা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি বিচার করে ফের মেদিনীপুর শহরেই জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, ২২ তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন মেদিনীপুর শহরে করা নিয়ে দলীয় স্তরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত হয়েছে সম্মেলনের দিনক্ষণও। আগামী ৮-১০ ফেব্রুয়ারি সদর শহরে জেলা সম্মেলন হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩১
Share:

প্রাথমিক ভাবে ঝাড়গ্রাম ও ঘাটাল নিয়ে কথা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি বিচার করে ফের মেদিনীপুর শহরেই জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, ২২ তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন মেদিনীপুর শহরে করা নিয়ে দলীয় স্তরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত হয়েছে সম্মেলনের দিনক্ষণও। আগামী ৮-১০ ফেব্রুয়ারি সদর শহরে জেলা সম্মেলন হবে। প্রায় পাঁচশো প্রতিনিধির সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা।

Advertisement

২০১২ সালের প্রথম দিকে দলের ২১ তম জেলা সম্মেলনও মেদিনীপুর শহরেই হয়েছিল। তার আগে ২০০৭ সালে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকায়, ২০০৪ সালে চন্দ্রকোনা রোডে ও ২০০১ সালে মেদিনীপুর শহরে জেলা সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সিপিএম সূত্রের খবর, এ বার সম্মেলন ঝাড়গ্রাম অথবা ঘাটালে করা যায় না, তা নিয়ে দলের অন্দরে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছিল। তবে তা বেশি দূর এগোয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে ফের মেদিনীপুরেই জেলা সম্মেলন করার বিষয়ে সহমত হন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।

কেন ফের মেদিনীপুরেই জেলা সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত?

Advertisement

সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের জবাব, “এটা আমাদের সাংগঠনিক ব্যাপার। দলীয় স্তরে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ঝাড়গ্রামে সম্মেলন করা হল না কেন? তা হলে কি সেখানে সম্মেলন করার পরিবেশ নেই? দীপকবাবুর মন্তব্য, “কেন নেই? জেলার সর্বত্রই মানুষ প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে আসছেন। তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বলেই ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।”

তবে সিপিএমেরই একাংশ আড়ালে মানছেন, ঝাড়গ্রামের দলের পরিস্থিতি এখনও প্রতিকূল। ফলে ঝাড়গ্রামে জেলা সম্মেলন হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তৃণমূলের লোকেরা সম্মেলন ‘বানচাল’ করার চেষ্টাও করতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “ঝাড়গ্রাম শহরের পরিস্থিতি মোটের উপর ভালই। তবে ওখানে সংগঠন চাঙ্গা করতে আরও একটু সময় লাগবে। তবে, সব দিক খতিয়ে দেখেই মেদিনীপুরে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করাও একটা বিষয়।”

গত লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরের বামেদের বেনজির বিপর্যয় ঘটে। অবশ্য আর আগে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই বামেদের জনভিত্তি কমতে শুরু করে। পরিবর্তিত পরিস্থতিতে জেলাতেও দলের অন্দরে নেতৃত্বে বদলের দাবি জোরালো হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে দলের জেলা সম্পাদক পদে রয়েছেন দীপকবাবু। গত সম্মেলনে তিনি সমালোচনার মুখেও পড়েন।

অবশ্য তারপরেও টানা অষ্টম বারের জন্য জেলা সম্পাদক হিসেবে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। এ বার জেলা নেতৃত্বে বদল আসার সম্ভাবনাই বেশি। জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “শুধু জেলা নয়, লোকাল-জোনাল স্তরেও রদবদল হতে পারে। সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা বুঝে যেখানে যেমন সম্ভব পরিবর্তন হবে। সাংগঠিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি সারিয়ে ফেলা জরুরি।” তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, কয়েক’টি নির্বাচনে হারের পর সংগঠনের একটা বড় অংশের নেতা-কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাসও এর প্রধান কারণ। দলীয় স্তরে এই সব নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, নতুন কর্মীদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। সংগঠনে গতি আনতে এ বার তরুণ প্রজন্মের হাতেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। এর ফলে সংগঠন আরও গতিশীল হবে।”

দলীয় সূত্রে খবর, জেলা সম্মেলন উপলক্ষে মেদিনীপুরে প্রকাশ্য জনসভাও হতে পারে। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং দলের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ।

জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোট থেকে দলের রক্তক্ষরণ চলছেই। এ বার নতুন মুখ এনে সংগঠনকে চাঙ্গা করে সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করারই আপ্রাণ চেষ্টা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন