বাদাম-ভুট্টা-সূর্যমুখী, চাষের বৈচিত্রে জোর কৃষি উপদেষ্টার

চাষে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। শুক্রবার মেদিনীপুরে এক আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, “আমরা বিকল্প চাষে জোর দিচ্ছি। বৈচিত্র্যকরণের কথা বলছি। এ বার রাজ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বর্ষকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share:

আলোচনাসভায় মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা।

চাষে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। শুক্রবার মেদিনীপুরে এক আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, “আমরা বিকল্প চাষে জোর দিচ্ছি। বৈচিত্র্যকরণের কথা বলছি। এ বার রাজ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বর্ষকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় বিকল্প হিসেবে বাদাম, ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় ভুট্টা, সূর্যমুখী চাষ করা যেতে পারে। নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ডালশস্য চাষ করা যেতে পারে।” তাঁর কথায়, “আমরা চাষের সেই সব পদ্ধতি সম্পর্কেই কৃষককে উত্‌সাহিত করি, যা লাভের মুখ দেখায়। কৃষির উন্নয়ন মানে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন।”

Advertisement

কৃষি দফতরের এক আলোচনা সভায় যোগ দিতে এদিন মেদিনীপুরে আসেন প্রদীপবাবু। সঙ্গে ছিলেন সচিব পরিতোষ ভট্টাচার্য। জেলা পরিষদের এক সভাকক্ষে আয়োজিত এই সভায় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কৃষি কর্মাধ্যক্ষেরা। মূলত, জেলা কৃষি দফতর থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য আগ্রহী ও যোগ্য কৃষকদের সরকারি ভর্তুকি প্রদানের প্রকল্প সমূহ রূপায়নের রূপরেখা নির্ধারণের জন্যই এই সভার আয়োজন করা হয়। তবে অনান্য কিছু দিকও আলোচনায় উঠে আসে। দিন কয়েক আগে নির্মলবাবু সহ কৃষি দফতরের কয়েকজন কর্তা আনন্দপুরের একটি খামার পরিদর্শন করেন। আলু ও সব্জি বীজের এই খামারটি পরিকাঠামোগত সমস্যায় ধুঁকছে। ধুঁকতে থাকা খামারকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এদিন একটি পরিকল্পনা ও প্রস্তাবও পেশ করা হয়। কৃষি কর্তারা জানান, এ ক্ষেত্রে তিনটি পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। এক, কৃষি খামারের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। দুই, প্রয়োজনীয় সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তিন, কৃষি শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করা। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন প্রদীপবাবু। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু বলেন, “খামারের চাষযোগ্য সেচসেবিত জমিতে যাতে বছরভর আলু ও ভুট্টা বীজ উত্‌পাদন করা যায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরিকাঠামোর উন্নতি করা প্রয়োজন। উত্‌পাদিত বীজ সঠিক ভাবে সংরক্ষণের জন্যও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমাদের পরিকল্পনার কথা প্রদীপবাবুকে জানিয়েছি। উনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দিয়েছেন।” তাঁর কথায়, “আমরা মনে করি, পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ার পরিবর্তন ও আলু চাষ, বীজ উত্‌পাদন, রোগ পোকা ইত্যাদির উপর তার প্রভাব এবং সেই সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের জন্য আনন্দপুর খামারে একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। গবেষণা কেন্দ্রটি ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পর্ষদের অধীনস্থ সর্বভারতীয় আলু গবেষণা প্রকল্পের আওতায় আনাও জরুরি।”

প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যে ৭১ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। ৪০ শতাংশের বেশি আয় বেড়েছে। রাজ্যের ৬৫ শতাংশ জমিতে চাষ হয়। যেখানে সারা দেশে ৪৬ শতাংশ জমিতে চাষ হয়। অর্থাত্‌, অনেক অনুপযুক্ত জমিতেও আমাদের কৃষকেরা চাষ করেন। ধানের উত্‌পাদনশীলতার দিকটা ঠিকই আছে। কিন্তু, যে সব জায়গায় ধানের উত্‌পাদন কম হয়, সেখানে ডালশস্য, তৈলবীজ, ভুট্টা, বাদাম প্রভৃতি চাষ করতে হবে। এই সব চাষে লাভও রয়েছে।” তাঁর কথায়, “কৃষির উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা সহায়ক। এখন সার্টিফায়েড না হলে বীজ কৃষকদের কাছে পৌঁছয় না। আগে এটা হত না। কৃষককে কোনও ভাবেই ঠকানো যাবে না। তাই এই পদক্ষেপ। এখন অভাবি বিক্রি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” প্রদীপবাবুর দাবি, “ফসলের গুণগত মান বাড়ানোর উপরও আমরা জোর দিয়েছি।” জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু বলেন, “সরকারি ভর্তুকির দু’টি প্রকল্প কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়। এ বার জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য সমান পরিমান ভর্তুকির টাকা খরচ করা হবে। প্রতি ব্লকে সামগ্রিক ভাবে ১৬ শতাংশ টাকা তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের চাষিদের জন্য এবং ৮ শতাংশ টাকা তফসিলি উপজাতি চাষিদের জন্য খরচ করা হবে।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন