বিধি মেনে প্রচার হচ্ছে তো, দেখল এমসিসি

শহরের হর্ষণদিঘি এলাকায় রাস্তার ধারেই শাসকদল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অফিস। অফিস লাগোয়া গাছ। সেই গাছে লাগানো রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ফ্লেক্স। তা নজরে আসতেই এমসিসি-র (মডেল কোড অব কন্ডাক্ট) সেলের গাড়ি গিয়ে থামল সেখানে। বেশ কিছুক্ষণ জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করলেন এমসিসি সেলের অফিসার ইনচার্জ মিহির হাটুই। নিদান দিলেন, ‘গাছটি রাস্তার ধারে রয়েছে। রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। এই গাছের উপর রাজনৈতিক দলের ফ্লেক্স থাকার অর্থ নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা।’

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩৬
Share:

মেদিনীপুরের বটতলাচকে পুরসভার বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং-এ লাগানো তৃণমূলের ফ্লেক্সের ছবি তুলছেন এমসিসি দলের সদস্যরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

শহরের হর্ষণদিঘি এলাকায় রাস্তার ধারেই শাসকদল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অফিস। অফিস লাগোয়া গাছ। সেই গাছে লাগানো রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ফ্লেক্স। তা নজরে আসতেই এমসিসি-র (মডেল কোড অব কন্ডাক্ট) সেলের গাড়ি গিয়ে থামল সেখানে। বেশ কিছুক্ষণ জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করলেন এমসিসি সেলের অফিসার ইনচার্জ মিহির হাটুই। নিদান দিলেন, ‘গাছটি রাস্তার ধারে রয়েছে। রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। এই গাছের উপর রাজনৈতিক দলের ফ্লেক্স থাকার অর্থ নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা।’

Advertisement

ফটাফট তুলে নেওয়া হল ছবি। তখন পার্টি অফিসের পাশেই ঘোরাঘুরি করছিলেন দু’চারজন। তাঁরা জানতে চাইলেন, কী ব্যাপার। নির্বাচন বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা, দেখা হচ্ছে। ও! বলে সরে গেলেন তাঁরা। পার্টি অফিসের পাশেই বসেছিলেন এক ব্যক্তি। এমসিসি দলের সদস্যরা তাঁর কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, ‘পার্টি অফিসে কেউ রয়েছেন’। তাঁর জবাব, কেন বলুন? দলের সদস্যরা জানালেন, গাছে ফ্লেক্স রাখার অর্থ নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন। সেক্ষেত্রে তাঁদের নোটিস দিতে হবে। আর নোটিস দেওয়ার ৭২ ঘণ্টা পরও, না খুললে তা খুলে দেওয়া হবে।” তা শুনে রাতের মধ্যেই ওই ফ্লেক্স সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানালেন তিনি। সদস্যরা জানালেন, “নিজেরা খুলে নিলে নোটিস দেওয়া হবে না। নতুবা নোটিস দিয়ে খোলাতে হবে।”

ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে রাজনারায়ণ বসু স্মৃতি
পাঠাগারে বামেদের দেওয়াল লেখাও। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

Advertisement

মেদিনীপুর শহর জুড়েই দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্স, পোস্টার-সহ নানা ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। তার মধ্যে অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে নোটিস পেয়ে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্যরা তা মুছে দিয়েছেন বা সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু, এখনও অনেক ক্ষেত্রেই সে সব থেকে গিয়েছে। বুধবার দুপুরের পর কোথাও বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা, তা দেখতে বের হন মেদিনীপুর সদর ব্লকের এমসিসি সেলের দায়িত্বে থাকা দলটি। প্রথমেই যান শিরোমণি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেরানীচটি ও আবাস এলাকায়। সেখানে কৃষি দফতর, বীজভবনে তৃণমূল ও সিপিআইয়ের দেওয়াল লিখন ছিল। তারপরই তাঁরা যান সিপাইবাজার, এলআইসি চক হয়ে বটতলাচকের দিকে। যাওয়ার পথেই পড়ে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ। কলেজেরই উল্টোদিকে রয়েছে ঋষি রাজনারায়ণ বসু গ্রন্থাগার। হোমিওপ্যাথি কলেজের দেওয়ালে আগে তৃণমূল ও সিপিআই-দু’পক্ষেরই দেওয়ার লিখন ছিল। নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। এ দিন গিয়ে দেখলেন, নিয়ম মেনে দেওয়াল মুছে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলি। তবে নতুন করে সেখানে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজের সমর্থনে। তার ছবি তুলে খাতায় লিপিবদ্ধও করেন। তখনও জানা ছিল না, উল্টোদিকে গ্রন্থাগারের দেওয়ালেও ফের নতুন করে লেখা হয়েছে। দেখা গেল একদিকে এসইউসিআই প্রার্থী তুষার জানা আর অন্য দিকে সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পান্ডার দেওয়াল লিখন রয়েছে। ছবি তুলে খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়।

এ ভাবেই বাতিস্তম্ভে মুখ্যমন্ত্রীর ফ্লেক্স, রাস্তার মাঝে পুরসভার বিজ্ঞাপন স্তম্ভে তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের কিংবা সিপিআইয়ের ফ্লেক্স দেখে দাঁড়িয়েছেন প্রতিনিধিরা। ছবি তুলেছেন, কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে তার মাপও নিয়েছেন। কী হচ্ছে তা দেখতে ভোট-মুরশুমে লোকজন ভিড় জমান।

কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি? তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর কথায়, “আমরা নির্বাচনী বিধি মেনেই প্রচার কর্মসূচী চালানোর জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। সেক্ষেত্রে ভুল ত্রুটি হলে তা শুধরে নেব।” ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী তথা সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার কথায়, “নির্বাচন বিধি মেনেই প্রচার করছি। উৎসাহী কর্মী-সমর্থকেরা দু’একটি ক্ষেত্রে দেওয়াল লিখনে বা ফ্লেক্স লাগানোয় ভুলচুক করে থাকতে পারে। তা জানতে পারলেই মুছে দেওয়া হচ্ছে।” কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি শম্ভু চট্টোপাধ্যায়েরও একই কথা। তিনি বলছেন, “আমরা নির্বাচনী বিধি মেনেই প্রচারের পক্ষে। সে ভাবে প্রচারও করছি।”

তবু, হাবরার ঘটনার পর এমসিসি দলের মধ্যে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। যদিও জেলায় এখনও এমসিসি দলকে হেনস্থার মতো ঘটনা এখনও ঘটেনি। তবু আশঙ্কাটা যে রয়েছে। এমসিসি দলের এক প্রতিনিধির কথায়, “বুঝতেই তো পারছেন। যা দিনকাল। তাই আমাদেরও ভীষণ সতর্ক হয়েই কাজ করতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন