বানভাসি ঘাটালে উঁচু জমি অগ্নিমূল্য

জনসংখ্যার চাপে কৃষিজমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাস্তুতে। তৈরি হচ্ছে বড় বড় বাড়ি। আর হু হু করে বাড়ছে জমির দাম। এ ছবি শুধু শহরতলির নয়, জেলা সদর থেকে দূরবর্তী এলাকার ক্ষেত্রেও একই রকম সত্যি। ব্যতিক্রম নয়, নদীকেন্দ্রিক, বন্যাপ্রবণ শহর ঘাটালও। বর্ধিষ্ণু এই মহকুমা এলাকার কোনও কোনও জায়গায় জমির দাম কাটা প্রতি পঞ্চাশ লক্ষ ছুঁয়েছে। মূলত, ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের ধারেই এই বিপুল দাম।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২০
Share:

শহরের কুশপাতায় মাঝমাঠেই উঠছে বাড়ি, নেই নিকাশি ব্যবস্থাও।—নিজস্ব চিত্র।

জনসংখ্যার চাপে কৃষিজমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাস্তুতে। তৈরি হচ্ছে বড় বড় বাড়ি। আর হু হু করে বাড়ছে জমির দাম। এ ছবি শুধু শহরতলির নয়, জেলা সদর থেকে দূরবর্তী এলাকার ক্ষেত্রেও একই রকম সত্যি। ব্যতিক্রম নয়, নদীকেন্দ্রিক, বন্যাপ্রবণ শহর ঘাটালও। বর্ধিষ্ণু এই মহকুমা এলাকার কোনও কোনও জায়গায় জমির দাম কাটা প্রতি পঞ্চাশ লক্ষ ছুঁয়েছে। মূলত, ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কের ধারেই এই বিপুল দাম।

Advertisement

কেন? জমি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সোনা ও আলুর ব্যবসায়ীরা দ্রুত বিপুল লাভের আশায় বহু অর্থ বিনিয়োগ করেন জমি কেনাবেচায়। ফলে বন্যাপ্রবণ ঘাটালে অত্যন্ত দ্রুত হারে বাড়ছে উঁচু জমির দাম। ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়ক বাদে এই পুর-শহরে সবচেয়ে বেশি জমির চাহিদা ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। কেননা, এই উঁচু এলাকাগুলিতে এমনিতে বন্যা হয় না, বাঁধ ভাঙলে তবেই হয়। তবে এই পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩, ১৬ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেই বেশি জমি ফাঁকা রয়েছে। সেই জমির এক-একটি আট-দশ বার পর্যন্ত হাত বদল হচ্ছে। এতে অবশ্য সরকারের রাজস্বও বাড়ছে। ঘাটালের রেজিস্ট্রি অফিসের এক কর্তায় কথায়, “ঘাটাল অফিসে সপ্তাহে জমি রেজিস্ট্রি করে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়, তা জেলার অন্য সব অফিস মিলে হয় কি না সন্দেহ!”

কুশপাতার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক অরিন্দম সাঁতরার অভিজ্ঞতা, ঘাটাল দূর, কুশপাতার একেবারে মাঝমাঠেও কাটা আট লক্ষ টাকা। সেখানে রাস্তা থেকে নিকাশি, সব সমস্যাই রয়েছে। তিনি বলছেন, “কোনও রকমে জমি কিনেছি, কবে বাড়ি করতে পারব জানি না।” অরিন্দমবাবুর মতো একই অভিজ্ঞতা সাধারণ মধ্যবিত্তের। ফলে এই জনপদে বাড়ছে ভাড়া বাড়ির কদরও। তবে শহরে অবশ্য এখনও ‘ফ্ল্যাট-কালচার’ সেভাবে শুরু হয়নি। স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি শহরের কুশপাতা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি তিন কাঠা জমির উপর পুরোপুরি তৈরি না হওয়া একটি বাড়ি প্রায় দেড় কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Advertisement

জমির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘাটালে বেড়েছে জমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা। কলেজ পড়ুয়া থেকে প্রাক্তন সরকারি অফিসার অনেকেই জমি কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন! এলাকাবাসীর দাবি, জমি বিক্রি রয়েছে, এমন খবর পেলেই দালালদের লাইন পড়ে সংশ্লিষ্ট জমি মালিকের কাছে। ঘাটালের কুশপাতার মাঝমাঠে বছর দশেক আগেও কাটা প্রতি জমির দাম ছিল তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার। এখন সেখানেই কাটা আট-দশ লক্ষ টাকা! ঘাটালের কোন্নগরের বসিন্দা সুব্রত মাইতির কথায়, “সম্প্রতি ছ’কাঠা জমি বেচেছি শহরের বেলপুকুরে। আমার দাম ছিল ২৪ লক্ষ টাকা। পেয়েছি ৩৮ লক্ষ। রেজিস্ট্রির দিন জানলাম, জমি ৪৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে।” তাঁর মন্তব্য, “জমি কার্যত নিলাম হয় ঘাটালে!”

মহকুমা শহর হওয়ায় ঘাটালে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। মহকুমাশাসকের অফিস ছাড়াও নানা সরকারি দফতর, হাসপাতাল, কলেজ, আদালত রয়েছে এই জনপদে। রয়েছে স্কুল-কলেজ, যোগাযোগের ভাল ব্যবস্থাও। তবে এলাকার জমির এত যে দাম সত্ত্বেও শহরের সার্বিক পরিষেবা তিমিরে! নেই বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। নেই নিকাশী। নেই ভাল রাস্তা। আবর্জনার পাহাড় জমে যত্রতত্র। পুরবাসীর ক্ষোভ, পুরসভা ভবিষ্যতে কী ভাবে শহরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তারও কোনও পরিকল্পনা নজরে পড়ছে না। অবিলম্বে এ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ ভাবনাচিন্তা না করলে, আড়ে বহরে বাড়তে থাকা এই শহর চরম সমস্যায় পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পুরসভা কী করছে? চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “নতুন যে এলাকাগুলিতে ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেখানে আমরা মানুষকে বুঝিয়ে পুর আইনের চেয়ে একটু বেশি ছাড় দিয়ে যাতে তাঁরা বাড়ি তৈরি করেন, তা দেখছি। তাতে রাস্তা একটু বেশি চওড়া হবে। ফলে দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স অন্তত ঢুকতে পারবে। এ ছাড়াও আলো, আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা, পানীয় জলের ট্রাঙ্ক এবং বাড়িতে জলের সংযোগ সবই হবে।” তবে পুরসভার বাস্তুকার শুভাশিস মণ্ডলের মত, “এখুনি সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি না হলে, বছর দশেক বাদে শহরে বড় অঘটন ঘটে যাবে। তাই দ্রুত বিজ্ঞানসম্মত প্ল্যান জরুরি।” একই সঙ্গে তাঁর মত, তবে পুর কর্তৃপক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা কার্যকর হলে অনেকটাই সুরাহা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন