তৃণমূলের ছাত্র-যুব সম্মেলন কলকাতা থেকে সরিয়ে গড়বেতায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৯ ডিসেম্বরের এই সম্মেলনের মূল বক্তা মুখ্যমন্ত্রী ও দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর ঘুরলে আবার বিধানসভা নির্বাচন। সব মিলিয়ে এই সময়ের মধ্যেই সংগঠন আরও শক্তপোক্ত করতে চাইছে শাসক দল।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বর্ধিত সভা ডেকে বুথ সংগঠনের উপরই সব থেকে বেশি জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, এ দিন তৃণমূ্লের অঞ্চল সভাপতি এবং ব্লক সভাপতিদের ১১ দফা লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যে বুথ, অঞ্চল, ব্লকস্তরে সম্মেলন করতে হবে। অবশ্যই পাড়া কমিটি গঠন করতে হবে। বুথভিত্তিক সরকারি উন্নয়নের তালিকা, উপভোক্তাদের তালিকা ওই সম্মেলনে জানিয়ে দিতে হবে।
বস্তুত, জাঠার মধ্য দিয়ে দলের বুথ সংগঠনে প্রাণ ফেরানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন বাম নেতৃত্ব। টানা জাঠার জেরে বুথ সংগঠন কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে বলে দাবি বাম-শিবিরের। বাম নেতৃত্বের বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনের পরে অনেকের মনে হচ্ছিল, এখানে যেন বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল। অবশ্য বিজেপি মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে সে ভাবে সরব হতে পারেনি। জাঠায় যে ভাবে সাড়া মিলেছে তা থেকে স্পষ্ট, বামেরাই বিকল্প।
মূলত, বুথস্তরের সংগঠনকে চাঙ্গা করতেই বামেদের এই জাঠা কর্মসূচি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বুথস্তরে এই সংগঠন ধরে রাখাটাও বামেদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতে জেলার কিছু এলাকায় তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে। যা শাসকদলের অন্দরে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে তৃণমূলের দু’দফা বৈঠক হয়। শুরুতে দলের জেলা কোর-কমিটির বৈঠক বসে। পরে জেলার বর্ধিত সভা হয়।
কেন এই সভা?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের জবাব, “এটা সাংগঠনিক সভা। পূর্ব নির্ধারিত। সংগঠনের বিভিন্ন দিক নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে।” বুথস্তরে জোরদার সংগঠন গড়ে তোলা, মিছিল, মিটিংয়ের নির্দেশকে বামেদের জাঠার পাল্টা বলে মানতে নারাজ শাসকদল। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোত্ ঘোষদের কথায়, “যতই জাঠা করুক। সিপিএমকে মানুষ প্রত্যাখান করেছে। ওরা আর কোনও ভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।”
বর্ধিত সভা থেকে আর কী কী নির্দেশ দিয়েছেন শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব?
দলীয় সূত্রে খবর, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক, অঞ্চল, বুথস্তর পর্যন্ত সমস্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি অঞ্চলের কমিটিগুলির রাজনৈতিক কাজকর্ম তদারক করার জন্য ওই ব্লকের দু’তিন জন কর্মীকে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। দলের প্রত্যেক ব্লক ও অঞ্চল অফিসের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা জানানোর পাশাপাশি অফিসগুলোয় কোন কোন নেতৃত্ব কতক্ষণ থাকেন, তাও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্বকে অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে মাসে অন্তত দু’বার বৈঠকে বসার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপশি সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ব্যাপক সংযোগ গড়ে তোলার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব সভায় এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শান্তি ও উন্নয়নের বার্তা ব্যাপক ভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। নেতৃত্বের পরামর্শ, আগামী কয়েক মাস ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজগুলো প্রচারের আলোয় আনার দায়িত্ব কর্মীদেরই নিতে হবে।