বাম প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ নন্দীগ্রামে, প্রচারে জুটল ফুলও

কোথাও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে তৃণমূলের পতাকা নেড়ে ক্ষমতা জানান দেওয়া, কোথাও প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, আবার কোথাও লুকিয়ে আনা গোলাপ ফুল দেওয়া প্রার্থীর হাতে। প্রায় তিন বছর পর প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারে নেমে তমলুকের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে ঘিরে এমনই মিঠে-কড়া দৃশ্যের সাক্ষী রইল নন্দীগ্রাম। বুধবার সকালে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের টেঙ্গুয়াবাজার দিয়ে শুরু হওয়া এই রোড শো শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ নন্দীগ্রাম বাজারে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ইব্রাহিমের রোড শো। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

কোথাও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে তৃণমূলের পতাকা নেড়ে ক্ষমতা জানান দেওয়া, কোথাও প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, আবার কোথাও লুকিয়ে আনা গোলাপ ফুল দেওয়া প্রার্থীর হাতে। প্রায় তিন বছর পর প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারে নেমে তমলুকের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে ঘিরে এমনই মিঠে-কড়া দৃশ্যের সাক্ষী রইল নন্দীগ্রাম।

Advertisement

বুধবার সকালে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের টেঙ্গুয়াবাজার দিয়ে শুরু হওয়া এই রোড শো শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ নন্দীগ্রাম বাজারে। সিপিএমের এই নবীন প্রার্থীর প্রচার ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের তো বটেই, মাথা ব্যথা ছিল পুলিশ-প্রশাসনেরও। ঝুঁকি সামলাতে প্রার্থীর প্রচার গাড়ির কনভয়ের সামনে ইএফআর জওয়ানদের গাড়ি আর পেছনে থানার পুলিশ বাহিনীর ঘেরাটোপ ছিল। গত ১৯ এপ্রিল নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে প্রথমবার প্রচার করতে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম। এরপর এ দিন প্রথম নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে প্রচারে যান ইব্রাহিম। সকাল ৮ টা নাগাদ চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া বাজারের দলীয় অফিসের সামনে থেকে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুল হাই-সহ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নন্দীগ্রামের পথে রওনা হন ইব্রাহিম।

টেঙ্গুয়া বাজারে রোড-শোর প্রথমে প্রচার গাড়ির উপরে দাঁড়িয়েই নারী নির্যাতন, সারদা কাণ্ড, টেট পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন ইব্রাহিম। এরপর গাড়ি এগোয় কান্ডপশরা, দুর্গাপুর বাজার, ভেকুটিয়ার দিকে। পরে দীনবন্ধুপুর লক গেট বাজারে প্রচার সেরে হাজরাকাটাগামী রাস্তা ধরে কয়েক মিনিট এগোনোর পরেই দেখা যায় রাস্তার ধারে ১০-১২ জন লোক তৃণমূলের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে। প্রচার গাড়ি গ্রামের রাস্তা ধরে এগোয় মহম্মদপুর বাজারে। জৈরুর মোড়ে ইব্রাহিমের প্রচারের সময় ছিলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন, “এখানে সিপিএমের কেউ নেই।” গাড়ি সামসাবাদ হয়ে ভাটপুকুর বাজারে ঢোকার মুখেই একদল তৃণমূল সমর্থকের বিক্ষোভের মুখে পড়েন ইব্রাহিম। সেখানে তৃণমূল কর্মীরা ইব্রাহিমের উদ্দেশে গালিগালাজ করতে থাকে।

Advertisement

জমিরক্ষা আন্দোলন ঘিরে নন্দীগ্রামে সিপিএমের রাজনৈতিক জমি আলগা হয়েছিল ২০০৭ সাল থেকেই। নন্দীগ্রামে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়েছে তৃণমূলের। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত প্রায় তিন বছর ধরে নন্দীগ্রামে প্রকাশ্যে সিপিএমের মিটিং, মিছিল হয়নি। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত এ বার লোকসভা নির্বাচনের মুখে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন একদা জেলা সিপিএমের কাণ্ডারি তথা তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। আর ইব্রাহিমকে প্রার্থী করা হয়েছে ওই তমলুক লোকসভা কেন্দ্রেই।

তবে এই ক্ষোভ বিক্ষোভের ছবিটা বদলে যায় প্রচারের শেষ ধাপে গদাইবলবাড় গ্রামে যখন রোড শো পৌঁছায়। সেখানে সিপিএমের পতাকা হাতে ইব্রাহিমকে স্বাগত জানান এলাকার বাসিন্দারা। জামার পকেট থেকে লাল গোলাপ বার করে এগিয়ে আসেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। বলেন, “ইব্রাহিম আসবে শুনে এটা সঙ্গে এনেছিলাম। ওকে উপহার দিলাম।” কথায় বলে শেষ ভাল যার সব ভাল। তাই মাঝের এত প্রতিরোধ কাটিয়ে শেষের এই উপহারে তৃপ্ত ইব্রাহিম বলেন, “নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে তৃণমূলের কাছ থেকে কিছুটা বাধা পেয়েছি। আমি আশাবাদী এবার ভোটে তাঁরা আমাদের সমর্থন করবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন