বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সেরা কাঠগোলা, ঈদে আকড়সানগর

সেরা মণ্ডপ, প্রতিমার পাশাপাশি এ বার মেদিনীপুর শহরে বিসর্জনের শোভাযাত্রার উপরও পুরস্কার ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। একই সঙ্গে, ঈদুজ্জোহায় শহরের বিভিন্ন মহল্লায় আলোকসজ্জা ও শব্দবিধি মেনে মাইক বাজানোর উপরও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় প্রথম হয়েছে কাঠগোলা সর্বজনীন। আর ঈদে প্রথম হয়েছে আকড়সানগর ঈদগা কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৫
Share:

সেরা মণ্ডপ, প্রতিমার পাশাপাশি এ বার মেদিনীপুর শহরে বিসর্জনের শোভাযাত্রার উপরও পুরস্কার ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। একই সঙ্গে, ঈদুজ্জোহায় শহরের বিভিন্ন মহল্লায় আলোকসজ্জা ও শব্দবিধি মেনে মাইক বাজানোর উপরও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় প্রথম হয়েছে কাঠগোলা সর্বজনীন। আর ঈদে প্রথম হয়েছে আকড়সানগর ঈদগা কমিটি।

Advertisement

মেদিনীপুর মহকুমা প্রশাসন ও মেদিনীপুর পুরসভা যৌথভাবে এই পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। এ জন্য বিচারকমণ্ডলীও গঠন করা হয়েছিল। পুজো এবং ঈদ মিটেছে। এ বার পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হল। সাধারণত, সেরা প্রতিমা, সেরা মণ্ডপ এবং প্রতিমা- মণ্ডপ-পরিবেশ সহ সার্বিক ভাবে সেরাদেরই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই তিনটে বিভাগ তো রয়েছেই, পাশাপাশি বিসর্জনের শোভাযাত্রার উপরও পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। শোভাযাত্রা নির্বিঘ্নে করতেই এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, শোভাযাত্রায় প্রথম হয়েছে কাঠগোলা সর্বজনীন, দ্বিতীয় বটতলাচক সর্বজনীন এবং তৃতীয় হয়েছে চিড়িমারসাই হীরক সমিতি। অন্য দিকে, ঈদুজ্জোহায় আলোকসজ্জা ও শব্দবিধি মেনে বক্স বাজানোর উপর বিচার করেই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সেজেছিল শহরের বিভিন্ন মহল্লা। বিচারকমণ্ডলীও বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঈদে প্রথম হয়েছে আকড়সানগর ঈদগা কমিটি, দ্বিতীয় মিঠু মসজিদ ঈদগা কমিটি এবং যুগ্ম তৃতীয় হয়েছে দেওয়াননগর ঈদগা কমিটি এবং মিঁয়াবাজার গোল্ড স্টার ক্লাব।

মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত জানান, আগামী ১২ অক্টোবর পুরস্কার বিতরণ হবে। ওই দিন শহরের বিদ্যাসাগর হলে এই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে। অন্যদিকে, দুর্গাপুজো এবং ঈদ, দুই উৎসবই মোটের উপর নির্বিঘ্নে মিটেছে। বিসর্জনের শেষ দিন ছিল সোমবার। পুলিশ-প্রশাসন আগেই জানিয়ে ছিল, হয় দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জন করতে হবে, নয়তো সোমবার রাতে। মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলিতে শতাধিক দুর্গাপুজো হয়। অধিকাংশ প্রতিমা দশমীর দিনই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো সোমবার রাতে বিসর্জন হয়। বিসর্জনের দু’দিনই শহরের গোলকুয়াচকে পুরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী অফিস খোলা হয়েছিল। শহরের অধিকাংশ পুজো কমিটি এই এলাকার উপর দিয়েই বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে যায়। শোভযাত্রা দেখতে প্রচুর মানুষও রাস্তার দু’ধারে ভিড় করেন। সোমবারও রাত আটটা পেরোতে না পেরোতেই একের পর এক বিসর্জনের শোভাযাত্রা গোলকুয়াচকের উপর দিয়ে যেতে শুরু করে। বিসর্জন ঘিরে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে সোমবারও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বিসর্জনের দু’দিন নির্বিঘ্নেই কেটেছে। মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভবাবুর কথায়, “সকলের সহযোগিতায় বিসর্জন পর্ব নির্বিঘ্নেই কেটেছে। অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি।”

Advertisement

মেদিনীপুর শহরের পুকুরগুলোতে প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এ বারও একাধিক পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। শহরের প্রতিমা কাঁসাই নদীতেই বিসর্জন হয়। মূলত, গাঁধীঘাটেই অধিকাংশ প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। এ জন্য পুর-কর্তৃপক্ষ সব রকম ব্যবস্থাও করেন। গাঁধীঘাটে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। শিবির করে পুরকর্মীরা থাকেন। এ বারও এই সব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে, নদীতে জল কম থাকায় সমস্যা দেখা দেয়। এ বার নদীর ঘাট থেকে জলস্রোতের ফারাক ছিল অনেকটাই। পরিস্থিতি দেখে নদীঘাটের পাশে মাটি খুঁড়ে সেখানে জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ক্রেনও রাখা হয়। প্রতিমা বিসর্জনের পরপরই ক্রেন দিয়ে কাঠামো সরিয়ে নেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে কোনও কোনও পুজো কমিটি শোভাযাত্রা নিয়ে নদীঘাটে গিয়েও প্রতিমা ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এলাকার পুকুরে বিসর্জন দেয়। শহরের মতিঝিল-সহ একাধিক পুকুরে এ বার প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। ফলে, পুকুরগুলোও আবর্জনায় ভরেছে। দিন কয়েক আবর্জনা একই জায়গায় জমে থাকলে জল দূষণের সম্ভাবনাও থাকে। এই সব পুকুরের জল আবার এলাকার মানুষ নানা কাজে ব্যবহার করেন। পুকুরে যে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে, তা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “মতিঝিলে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে বলে শুনেছি। এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুকুর পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” নদীঘাটের আশপাশও অপরিষ্কার হয়ে রয়েছে? জিতেন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “আগে একদফায় নদীঘাট পরিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিসর্জন চলেছে। ফের নদীঘাট পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

‘গড়বেতা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর পক্ষ থেকেও ব্লকের সেরা পুজোগুলিকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হল। মণ্ডপের সেরা তিনটি, প্রতিমায় সেরা তিনটি পুজোর পাশাপাশি থিম ও সামগ্রিক উপস্থানায় সেরাদেরও পুরস্কৃত করা হবে। বিচারকদের বিচারে মণ্ডপে প্রথম হয়েছে ধাদিকা যুব গোষ্ঠী, দ্বিতীয় গড়বেতা স্টেশন সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। আর তৃতীয় হয়েছে রাউলিয়া গণকবান্দি (ঝাড়বনি) সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। শ্রেষ্ঠ প্রতিমার শিরোপাও ছিনিয়ে নিয়েছে রাউলিয়া গণকবান্দি (ঝাড়বনি) সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। প্রতিমাতে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে শ্যামনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি (ঠেক) ও তৃতীয় হয়েছে খড়কুশমা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। থিমে সেরা হয়েছে ‘প্রয়াস’। সামগ্রিক উপস্থাপনার শিরোপাও পেয়েছে মণ্ডপের বিচারে প্রথম হওয়া ধাদিকা যুব গোষ্ঠী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন