বাধ্য হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগ তোলার পর সোমবার স্কুলেই গেলেন না নারায়ণগড় পাকুড়সেনী গণভারতী শিক্ষানিকেতনের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা কবিতা মৈত্র। তিনি জানান, সোমবার মেদিনীপুরে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে গিয়ে ঘটনার বিহিত চেয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এর আগে রবিবার জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ই-মেলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার তিনি ফের তিনি পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। ভারতী ঘোষ বলেন, “সবে অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ করব।” তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সংঘমিত্র মাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ সালের ১ এপ্রিল পাকুরসেনী গণভারতী শিক্ষানিকেতনে সহ-শিক্ষিকার কাজে যোগ দিয়েছিলেন খড়্গপুরের বাসিন্দা কবিতা মৈত্র। ২০০৭ সালের ১ জুলাই থেকে তিনি স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা পদে ছিলেন। সেই সময় স্কুলের পরিচালন সমিতি ছিল বামেদের দখলে। ২০০৯ সালে তৃণমূল স্কুলের পরিচালন সমিতিতে ক্ষমতায় আসার পর স্কুলের জন্য বরাদ্দ ২৭ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১০-এর ২২ অক্টোবর কবিতাদেবী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার পদ থেকে সরে ফের ওই স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা হিসেবে রয়েছেন। কবিতাদেবীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও একই অভিযোগে বারবার তাঁর উপর মানসিকভাবে চাপ দিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যরা।
স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে শনিবার অভিভাবক সভা ডেকেছিল পরিচালন সমিতি। হাজির ছিলেন সমিতির জনা পাঁচেক সদস্য, পঞ্চায়েত মনোনীত সমিতির সদস্য রঞ্জিৎ বসু, কবিতাদেবী-সহ স্কুলের জনা কয়েক শিক্ষিকা। সেই সময় কবিতাদেবীর বিরুদ্ধে ফের ২৭ লক্ষ টাকা গরমিলের অভিযোগ তোলেন পরিচালন সমিতির সদস্যরা। কবিতাদেবীর অভিযোগ, তাঁকে স্কুলের অনুষ্ঠান বাবদ প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কবিতাদেবী তা না দিতে চাওয়াতেই তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তবে স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রবীর ভুঁইয়া জানিয়েছিলেন, কবিতাদেবী স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা গিয়েছিলেন। এমনকী স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন সরকারও সেই কথাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
কবিতাদেবীর দাবি, নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় তিনি সোমবার স্কুল যেতে পারেননি। তাঁর কথায়, “স্কুলে যেভাবে আমাকে শাসিয়ে চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে তাতে আমি সন্ত্রস্ত। পুলিশি নিরাপত্তা পেলেই স্কুলে যাব।” অন্য দিকে এ দিন পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা স্কুলে না যাওয়ায় পড়ুয়াদের পঠনপাঠনেও ব্যাঘাত ঘটেছে। কোনওরকমে অন্য শিক্ষকদের দিয়ে তাঁর ক্লাস নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসুন সরকার বলেন, “কবিতাদেবী স্কুলে না আসায় পঠনপাঠনে কিছু সমস্যা হয়েছে। আমি পরিচালন সমিতিকে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডাকতে বলব।”
যদিও এ দিন পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রবীর ভুঁইয়া বলেন, “কেউ ছুটি নিলে কী করা যাবে। আমি এই নিয়ে কোনও কথা বলব না।” আর যাঁর বিরুদ্ধে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সেই পঞ্চায়েত মনোনীত পরিচালন সমিতির সদস্য রঞ্জিত বসু বলেন, “ওঁর পদত্যাগপত্র গৃহীতই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন।”