বাড়িতেই থাকলেন নিশ্চিন্ত শিশির

‘এ জয় কাঁথির মানুষের জয়’-এভাবেই নিজের জয়কে কাঁথির মানুষের কাছে উৎসর্গ করলেন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। শুক্রবার বিকেলে নিজের বাড়িতে নাতি-নাতনিকে নিয়ে বসে শিশিরবাবু আরও বলেন, “বিরোধী দলগুলি লোকসভা নিবার্চনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ক্রমাগত কুৎসা প্রচারে রত ছিল তারই জবাব দিয়েছেন কাঁথির মানুষ।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০১:৫০
Share:

বাড়িতে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে শিশিরবাবু। ছবি: সোহম গুহ।

‘এ জয় কাঁথির মানুষের জয়’-এভাবেই নিজের জয়কে কাঁথির মানুষের কাছে উৎসর্গ করলেন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। শুক্রবার বিকেলে নিজের বাড়িতে নাতি-নাতনিকে নিয়ে বসে শিশিরবাবু আরও বলেন, “বিরোধী দলগুলি লোকসভা নিবার্চনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ক্রমাগত কুৎসা প্রচারে রত ছিল তারই জবাব দিয়েছেন কাঁথির মানুষ। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের নেতৃত্বে কাঁথি-সহ সারা বাংলায় উন্নয়নের যে জোয়ার শুরু হয়েছে মানুষ তাতেই সায় দিয়েছেন।”

Advertisement

কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে ভোট গণনা কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত ২টি ইভিএম বিভ্রাটের জন্য সরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা আটকে যায়। পরে নিবার্চন কমিশনের নিদের্শমত ২টি ইভিএম বাদ দিয়েই নিবার্চনী ফল ঘোষণা করা হয়। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৯০ ভোটে জয়ী হন। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের প্রদত্ত ১২ লক্ষ ৯১ হাজার ২১৬ ভোটের মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী পেয়েছেন ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৪৯ টি ভোট। তারপরই স্থান সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের। তিনি পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৫৯টি ভোট। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় কাঁথি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ি ১ লক্ষ ১১ হাজার ৮২টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। কংগ্রেস প্রার্থী কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন মাত্র ২৭ হাজার ২৩০টি ভোট।

নির্বাচনে সিপিএমের পক্ষ থেকে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহকে প্রার্থী করে সিপিএম কাঁথি কেন্দ্রে তাদের হারানো জমি ফিরে পাওয়ার যে চেষ্টা করেছিল, তা কার্যত মাঠে মারা গেছে। অবশ্য তাপসবাবুর কথায়, “মানুষের প্রকৃত রায় ভোটের ফলে প্রতিফলিত হয়নি। তৃণমূলের লোকেরা গ্রামেগঞ্জে বুথে বুথে ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে নিজেরাই ছাপ্পা ভোট মেরেছেন। খেজুরি, উত্তর কাঁথি, ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রে যেখানে তৃণমূল এক একটি বুথে আটশো থেকে ন’শো ভোট পেয়েছে সেখানে সিপিএম পেয়েছে ২০ বা ৪০টি ভোট। এতেই রিগিময়ের প্রমাণ মেলে।” তবে তাপসবাবু জানান, তিনি কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই আগামী দিনে দলীয় সংগঠনের কাজে যুক্ত থাকবেন। এই এলাকা ছেড়ে তিনি নড়তে নারাজ।

Advertisement

কংগ্রেস প্রার্থী কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁথি কেন্দ্রে জামানত জব্দ হয়েছে। নিজের নিবার্চনী ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কুনালবাবু বলেন, “আগে সিপিএম রিগিং করে নির্বাচন করে জিততো। এ বার তৃণমূলও ভোটের দিন গ্রামে গ্রামে নিজেরাই ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। এতে তৃণমূলের কোনও নৈতিক জয় হয়েছে বলে আমি মনে করি না।” এবারে কাঁথি কেন্দ্রে এসইউসি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি ও নির্দল প্রার্থীর চেয়ে নোটায় বেশি ভোট পড়েছে, প্রায় ৯৫৯৮টি।

শিশিরবাবুর জয়ের খবর পেয়েই কাঁথি শহর-সহ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় দলীয় কর্মী সমর্থকের মধ্যে উচ্ছাসের বাঁধ ভেঙে যায়। চণ্ডীপুর, পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, ভগবানপুর, খেজুরি, কাঁথি দক্ষিণ ও রামনগর সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই শিশিরবাবু বিরোধী প্রার্থীদের থেকে বিপুল পরিমাণে বেশি ভোট পেয়ে নিজের লিড বজায় রেখেছেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নিবার্চনে বাম জমানাতেও শিশির অধিকারী এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই লিড বজায় রেখেছিলেন। পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করা ৭৪ বছরের শিশির অধিকারী অবশ্য ভোটের ফল নিয়ে খুব বেশি বিচলিত ছিলেন না। নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন নাতি দেবদীপ ও নাতনি টিয়ানের সঙ্গেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন