বধূর যক্ষ্মা, পানীয় জল দিতে আপত্তির নালিশ

পরিবারের বধূ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। শুধুমাত্র সে কারণে ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ির কাছের ট্যাপকল থেকে পানীয় জল নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে। নন্দকুমার থানার ব্যবত্তারহাট পশ্চিম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পুয়াদা গ্রামের এই ঘটনায় কুসংস্কার আর সচেতনতার অভাবই দায়ী বলে মনে করেন স্বাথ্যকর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩২
Share:

শিশু কোলে রহিমা বিবি। —নিজস্ব চিত্র।

পরিবারের বধূ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। শুধুমাত্র সে কারণে ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ির কাছের ট্যাপকল থেকে পানীয় জল নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে। নন্দকুমার থানার ব্যবত্তারহাট পশ্চিম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পুয়াদা গ্রামের এই ঘটনায় কুসংস্কার আর সচেতনতার অভাবই দায়ী বলে মনে করেন স্বাথ্যকর্তারা। প্রায় ১০ দিন ধরে ওই পরিবার দূরের নলকূপ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ। এলাকার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এই ঘটনা জেনে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

Advertisement

অভিযোগ শুনে বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় যান নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরা। তিনি অবশ্য বলেন, “ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। পানীয় জল নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।” তাঁর কথায়, স্বজলধারা প্রকল্পে ওই এলাকায় প্রতি বাড়িতে পানীয় জলের ট্যাপকল আছে। ওই পরিবারের সামনেও আছে। তিনি বলেন, “কিন্তু পাইপ লাইন সারানোর ফলে তা অকেজো হয়ে আছে। ওই পরিবারের সদস্যরা অন্য এক জনের ট্যাপকলে জল নিতে গেলে তারা ট্যাপকল সারিয়ে নিতে বলেছিল।’’ ওই পরিবারের ট্যাপকল সারানোর জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এ দিন সকালে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে নন্দকুমারের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পুয়াদা বাজার স্টপেজের একশো মিটার দূরেই বাড়ি আব্দুল রশিদের। খাল বাঁধের উপর তিন ইঞ্চি ইটের দেওয়াল উপরে ত্রিপল, খড়, টালির ছাউনি দেওয়া এক চিলতে পরিসরে বাস করেন আব্দুল। রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, এক বউমা, নাতনি-সহ ছ’জন। বাড়ির সামনে থাকা স্বজলধারা প্রকল্পে নেওয়া ট্যাপকল খারাপ হয়ে রয়েছে। খালের পাশে ওই বাড়ির ভিতর স্যাতসেঁতে মাটির মেঝেতে শুয়ে টিবি আক্রান্ত বধূ রহিমা বিবি। পেশায় কাঠ কাটার শ্রমিক আব্দুলের ছেলে মৈবুল ভ্যানরিক্সা চালায়। মৈবুলের স্ত্রী বছর কুড়ির রহিমা। পরিবারের লোকেরা জানান, কয়েক মাস আগে রহিমার কাশি, জ্বর শুরু হয়েছিল। নন্দকুমার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কফ পরীক্ষা করিয়ে জানা যায় টিবি হয়েছে।

Advertisement

এমন ক্ষেত্রে কী করা উচিত? পূর্ব মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মলয় পাত্র জানান, হাঁচি, কাশি, কফের মাধ্যমে যক্ষ্মা ছড়ায়। কিছু সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলেই চলে। যেমন, কাশির সময় কফ বের হলে ঢাকা দেওয়া পাত্রে ফেলতে হবে। পাত্রের নীচে রাখতে হবে বালি। সেটি দু’একদিন অন্তর মাটি খুঁড়ে কিছুটা গভীরে পুঁতে দিলেই হয়। কাশির সময় মাস্ক ব্যবহার নতুবা কোনও কাপড় চাপা দিতে হবে। কোনও ভাবে যক্ষ্মা পানীয় জল থেকে ছড়ায় না, স্পষ্ট বলছেন ওই চিকিত্‌সক।

ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রহিমার চিকিত্‌সা শুরু হয়। টানা চিকিত্‌সায় ওই গৃহবধূর শারীরিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এখন সমস্যা অন্য। রহিমার শ্বশুর আব্দুল রশিদ বলেন, “রোগের কথা জানাজানি হওয়ার পর দিন দশেক আগে বাড়ির পাশের খালের উল্টো দিকে থাকা ট্যাপকল থেকে বাড়ির লোকেরা জল নিতে গেলে বাধা দেয় কয়েক জন বাসিন্দা। বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নলকূপ থেকে পানীয় জল আনতে হচ্ছে।” পানীয় জল নিতে নিষেধ করার কথা মেনে নিয়ে স্থানীয় প্রৌঢ়া বলেন, “ওই পরিবারের বধূর টিবি হয়েছে। ওদের পরিবার থেকে অন্য কারও এই রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়ে, সে জন্য জল নিতে নিষেধ করি।”

এলাকার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী জানান, গত বুধবার বিষয়টি নজরে আসে। তিনি বলেন, ‘‘টিবি রোগ নিয়ে অনেকের ভয়ভীতি রয়েছে। সেই কারণে হয়ত কিছুটা অসচেতনতা থেকেই এই ধরনের ঘটনা হয়েছে। আমরা গ্রামবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।” স্বাস্থ্য দফতর থেকেও এ ধরণের প্রচারমূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন