বন্যা পরিস্থিতি নয়, দুর্ভোগ ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ

সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি থেকে রেহাই দিতে পারে একমাত্র ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। কিন্তু, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখনও দূর অস্ত! ফলে আশঙ্কা, ফি-বছরের মতো এ বছরও বানভাসী হতে পারে ঘাটাল। ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয় প্রতি বছরই। দুর্ভোগে পড়েন ক’য়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

দাসপুরের বালিপোতায় চলছে বাঁধ সংস্কারের কাজ।—নিজস্ব চিত্র।

সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি থেকে রেহাই দিতে পারে একমাত্র ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। কিন্তু, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখনও দূর অস্ত! ফলে আশঙ্কা, ফি-বছরের মতো এ বছরও বানভাসী হতে পারে ঘাটাল।

Advertisement

ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয় প্রতি বছরই। দুর্ভোগে পড়েন ক’য়েক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিগত বছরগুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে তত্‌পর হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এবং সেচ দফতর। ঘাটালের বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব (সেচ) শঙ্কর দোলইও মানছেন, “ঘাটালবাসীকে স্বস্তি দিতে পারে একমাত্র ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। ইতিমধ্যেই ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করা হয়েছে। অপেক্ষা শুধু কেন্দ্রের জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অনুমোদনের।’’ আগামী বছরের মধ্যেই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশাবাদী।

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে জেলা প্রশাসন এবং সেচ দফতর নদীবাঁধ সংস্কার, খাদ্য এবং নৌকা মজুত করায় জোর দিয়েছে। পাশাপাশি কোথাও বালির বস্তা দিয়ে নদীবাঁধ সংস্কার হয়েছে, কোথাওবা বাঁধের দুর্বল অংশ কেটে সেখানে বোল্ডার দিয়ে নতুন করে গড়া হয়েছে বাঁধ। শিলাবতী ও কংসাবতী নদীর বাঁধের উপর দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে প্রচার চলছে। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা বলেন, “আগাম সতর্কতা হিসাবে ইতিমধ্যেই সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট নানা মহলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। একাধিক বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।” এক কথায়, সম্ভাব্য যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে প্রশাসন তৈরি বলে জেলাশাসক জানান।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটালের তিনটি সার্কিটে মোট ১৭২ কিলোমিটার নদীবাঁধ রয়েছে। এই বাঁধগুলির মধ্যে কোনটির কী অবস্থা তা জানতে গোটা এলাকাকে ১৯টি ভাগে ভাগ করে কাজ চলছে। সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “পর্যাপ্ত নৌকা, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কুড়ি জনের একটি টিম, যন্ত্রচালিত নৌকা সঙ্গে বোট, শুকনো খাবার-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” গত বছরের পুজোর পর থেকেই ঘাটালের দু’নম্বর চাতালে উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার জেরে এখন সেই কাজ বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ইতিমধ্যে বালিপোতা, রাজনগরের চাঁদার, রামদেবপুর, ধর্মার বাঁধ সংস্কার হলেও সব নদীবাঁধ সংস্কার করা হয়নি। সেচ কর্মাধ্যক্ষের দাবি, যে সব বাঁধ এখনও সংস্কার করা হয়নি, পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে সেগুলির কাজ চলতি সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে।

প্রয়োজনীয় কাজ শেষ না হওয়ায় এ বারও ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কথা মেনে নিয়েই সেচ কর্মাধ্যক্ষ বলছেন, “গত বছরে নৌকার সমস্যা হয়েছিল। এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ইতিমধ্যেই কুড়িটি নৌকা মজুত রাখা হয়েছে।” গত বছর ঝুমি নদীর একাধিক বাঁধ ভেঙেও বহু বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছিল। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “ঝুমি নদীর ভাঙন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। নদীবাঁধের কিছু এলাকা আপাতত বালির বস্তা দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে।” কেন এই অবস্থা? শঙ্করবাবু বলেন, “এ ক্ষেত্রেও ডিপিআর তৈরি হয়ে গিয়েছে। বর্ষার শেষ হলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।”

স্থানীয়দের মতে, ঘাটাল এলাকাটি ঠিক একটি কড়াইয়ের মতো। ফলে বৃষ্টি হলে সংলগ্ন সব এলাকার জলই ঘাটালে এসে জমা হয়। ভাল ভাবে নদী সংস্কার না হওয়ায় সে জল বাইরে দ্রুত বের হতে পারে না। শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি, কেঠে সব নদীরই প্রায় এক দশা। পলি জমে এই নদীগুলির জলধারণ ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে।

এই অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি ভবিতব্য হলেও, প্রশাসনের সহযোগিতায় দুর্ভোগ কতটা কমে দেখার সেটাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন