বহুতলে মুখ ঢাকবে তমলুক, আশঙ্কায় বাসিন্দারা

বাড়ির গায়ে গা লাগিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বহুতল। আর বহুতলের জাঁতাকলে বাড়ির লোকেদের দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। সেখানে না ঢোকে আলো, না খেলে বাতাস। মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন নগরোন্নয়ন নীতি অনুমোদিত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৯
Share:

ঘেঁষাঘেঁষি করে।—নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির গায়ে গা লাগিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বহুতল। আর বহুতলের জাঁতাকলে বাড়ির লোকেদের দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। সেখানে না ঢোকে আলো, না খেলে বাতাস।

Advertisement

মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন নগরোন্নয়ন নীতি অনুমোদিত হয়েছে। আর নগরোন্নয়নের এই নয়া নীতিতেই আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ ঘনিয়েছে তমলুক শহরের মানুষের মধ্যে। কারণ, শহরে পুরনো বাড়ির সংখ্যা কম নয়। এই অবস্থায় নতুন নীতি রূপায়িত হলে তমলুকে প্রোমোটারি কারবার ফুলেফেঁপে উঠবে বলে মনে করছেন শহরের বাসিন্দাদের বড় অংশই। আর সেই কারবারের হাত ধরে সিন্ডিকেট ও তোলাবাজির রমরমা শুরু হবে কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে তাঁদের।

যদিও এখনও তমলুকে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বহুতল বাড়ি বানানোর রেওয়াজ সেভাবে নেই। তবে শহরের মানিকতলা, আবাসবাড়ি, চড় শঙ্করআড়া, তমলুক রেল স্টেশন এলাকায় বেশ কয়েকটি বহুতল আবাসন তৈরির কাজ চলছে। পুরসভার আধিকারিকদের মতে, বহুতল নির্মাণ সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের নতুন নীতি কার্যকরী হলে শহরের পুরনো বাড়ি বাড়ি ভেঙে বহুতল নির্মাণের সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু একইসঙ্গে যেখানে পুর আইন ভেঙে বাড়ি বা দোকানঘর তৈরির প্রবণতা রয়েছে। সেখানে পুর আইনে শিথিলতায় বহুতল নির্মাণের হিড়িক বাড়বে। ফলে শহরের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য আরও তলানিতে গিয়ে পৌঁছবে। তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, “পুরসভার নিয়মঅনুযায়ী বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা অনুমোদনের সময় সবকিছু দেখে নেওয়া হয়। তবে অনেকেই কার্যক্ষেত্রে তা মানে না। এটা ঠিক, তবে আমরা অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অনেকক্ষেত্রে বাড়ির বেআইনি নির্মাণের অংশ ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।”

Advertisement

বস্তুত, ভাড়াটে উচ্ছেদ নিয়ে জেরবার মালিকেরা যদি ভাড়াটেকে মানিয়ে প্রোমোটারের হাতে বাড়ি তুলে দিতে শুরু করেন, তা হলে আগামী দিনে তমলুকে ব্যাঙের ছাতার মতো বহুতল গজিয়ে উঠতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পুরসভার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এমনিতেই বেআইনিভাবে বাড়ি নির্মাণের রমরমা জেলার সদর শহর তমলুকে। পুর আইন অনুযায়ী, বাড়ি তৈরির জন্য জমির দিকের সীমানার ভিতরে কমপক্ষে ৪ ফুট চওড়া জায়গা ছেড়ে বাড়ির নির্মাণ করতে হবে। বাড়ির সর্বাধিক উচ্চতা হবে ৪৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। তবে আইন ভাঙাই যেন এখানে নিয়ম। পুর আইনে নির্ধারিত বাড়ির উচ্চতা বা সীমানায় জমি ছাড়ার নিয়মের কোনওটাই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পূর্ত দফতর বা পুরসভার রাস্তা, নিকাশি নালা এমনকী খালের একাংশ দখল করেও বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। অভিযোগ, এক্ষেত্রে পুরসভার ভূমিকা নীরব দর্শকের।

শহরের পুরনো এলাকা হিসেবে পার্বতীপুর, আবাসবাড়ি, শঙ্করআড়া, শালগেছিয়া, ধারিন্দা এলাকায় একতলা থেকে তিনতলা পাকা বাড়ির সংখ্যাই বেশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে এই সব এলাকায় পুর নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বেশ কিছু বহুতল বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। পুরসভাকে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। তমলুকের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ সেন অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে বলেন, “এইসব এলাকায় বেশকিছু বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরসভার যেসব নিয়ম আছে তা মানা হয়নি। এনিয়ে পুরসভার তরফ থেকে নোটিস দেওয়া হয়। তবে নানা বাধায় সবক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।” পুরসভার কর্তারাও স্বীকার করেছেন, মূলত স্থানীয় রাজনৈতিক বাধায় বেআইনি নির্মাণ বন্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে পাশাপাশি থাকা দুই বাড়ির মালিকের সম্মতিতে বেআইনি নির্মাণ চলে। ফলে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে সমস্যা হয়। তমলুক শহরে একাধিক আবাসন প্রকল্প তৈরির কাজে যুক্ত এক প্রোমোটার বলেন, “রাজ্য সরকারের নতুন নীতি কার্যকর হলে আমাদের কিছুটা সুবিধা হবে। তবে শহরে বেআইনি নির্মাণ বন্ধে পুরসভার নজর বাড়ানো উচিত।”

তবে এবিষয়ে পুরসভা কতৃপক্ষ কড়া ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই শহরে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হবে তা বলাই বাহুল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন