ঝাড়গ্রামের রাজ কলেজ চত্বরে টিএমসিপি-র অবস্থান। নিজস্ব চিত্র
তিনি ‘বহিষ্কৃত’। কলেজেরও কেউ নন। অথচ সেই বহিষ্কৃত নেতা সৌমেন আচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠতেই রে-রে করে আসরে নেমে পড়ল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
শুক্রবার ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ চত্বরে ঝান্ডা নিয়ে মিছিল ও অবস্থান করলেন টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্য তথা সাধারণ কর্মীরা। সৌমেন যাঁকে কলার ধরে চড় কষাতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই হস্টেল সুপার বাদলকুমার জানার বিরুদ্ধেই স্লোগান তোলা হল। তিনি সে দিনও পুলিশে অভিযোগ করেননি, এ দিনও করেননি। বৃহস্পতিবারই কলকাতায় বিকাশ ভবনে গিয়ে ডিপিআই নিমাইচন্দ্র সাহার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত এবং শারীরশিক্ষার শিক্ষক বাদলবাবু। সূত্রের খবর, সৌমেনের বিরুদ্ধে তাঁদের থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ দিন কলেজেই আসেননি। ফোনে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগত কারণে দু’দিন ছুটিতে রয়েছি। সোমবার কলেজে গিয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেব।”
অভিযুক্তের হয়ে গলা ফাটানোর ঐতিহ্য তৃণমূলে নতুন নয়। ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম বা জামুড়িয়ায় দাদাগিরিতে অভিযুক্ত দুই যুব তৃণমূল নেতার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছিল। টিএমসিপি-র ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে বিক্ষোভের পরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরিও (প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সৌমেন এঁরই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) বলেন, “স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ-কর্মসূচি হয়েছে। সৌমেন সংগঠনের কেউ নন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ভালবাসেন।”
সৌমেনের পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল দিতে রাজি না হওয়াতেই মঙ্গলবার ‘বহিষ্কৃত’ নেতার রক্তচক্ষুর মুখে পড়েছিলেন তিনি। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবনাথ দে অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেন, “বাদলবাবু হস্টেলে ছাত্র নেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছিলেন। মঙ্গলবার এ নিয়ে আমরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। বিষয়টিকে আড়াল করতেই উনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
তবে নিগৃহীত হয়েও বাদলবাবু কেন সরাসরি পুলিশে যাননি, সেই প্রশ্ন কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না। তৃণমূল প্রভাবিত ‘অল বেঙ্গল স্টেট গভর্নমেন্ট কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কলেজ ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ তিনি। এক অর্থে ‘ঘরের লোক’। সেই চাপেই তিনি পুলিশমুখো হননি কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাদলবাবুর বক্তব্য, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই করা হবে।” তবে বাদলবাবুর সংগঠনেরই এক নেতা বলেন, “এমন ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। অধ্যক্ষকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলেছি।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রও বলেন, “কেন এই বিক্ষোভ হল, তা সংগঠনের জেলা সভাপতির কাছে জানতে চাইব। শিক্ষাঙ্গনে এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।” সৌমেন এ দিন কলেজের ধারপাশ মাড়াননি। দেখা হতে মুচকি হেসে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমার ছবিটা কিন্তু ভাল ছেপেছেন!”