ভোট-যুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পই অস্ত্র কংগ্রেসের

প্রচারে তাড়াহুড়ো নয়। বরং ধীরে চলার উপরেই জোর দিচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস। এমনিতেই কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে দেরি হয়েছে। তারপরেও ধীর গতি কেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাড়াহুড়োয় দল বা প্রার্থীরা যাতে কোনও রকম সমালোচনার মুখে না পড়ে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্রচারের বিষয়ও জাতীয় রাজনীতি কেন্দ্রিক। কোনও বিরোধী প্রার্থীকে আক্রমণ নয়।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০১:৩২
Share:

খড়্গপুরের ওল্ড মালঞ্চর চণ্ডীপুরে চলছে কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন।

প্রচারে তাড়াহুড়ো নয়। বরং ধীরে চলার উপরেই জোর দিচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস।

Advertisement

এমনিতেই কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে দেরি হয়েছে। তারপরেও ধীর গতি কেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাড়াহুড়োয় দল বা প্রার্থীরা যাতে কোনও রকম সমালোচনার মুখে না পড়ে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। প্রচারের বিষয়ও জাতীয় রাজনীতি কেন্দ্রিক। কোনও বিরোধী প্রার্থীকে আক্রমণ নয়। উল্টে কেন কংগ্রেসকে ফের ক্ষমতায় আনা দরকার, সেই কথাই বোঝানো হবে প্রচারে। প্রচারের এই কৌশল কর্মীদের বোঝাতে ইতিমধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব স্থানীয় স্তরে বৈঠকও শুরু করে দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার কথায়, “মানুষকে বোঝাতে হবে এটা দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার লড়াই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলার লড়াই। তৃতীয় ফ্রন্ট, ফেডারেল ফ্রন্টসব শেষ হয়ে গিয়েছে। এক দিকে পদ্ম ও অন্য দিকে হাতদু’টির মধ্যে একটি ছাতার তলায় মানুষকে আসতে হবে। মানুষ কেন হাতের তলায় থাকবেন সেটাই প্রচারে বোঝাতে হবে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিনটি লোকসভা আসনের মধ্যে দু’টিতেই তারকা প্রার্থী রয়েছেন তৃণমূলের। ঘাটালে দেব আর মেদিনীপুরে সন্ধ্যা রায়। রুপোলি পর্দার এই সব মুখগুলিকে নিয়ে যুব সম্প্রদায়ের উদ্দীপনার অন্ত নেই। তাই বিরোধী প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রচারে একটিও শব্দ ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই প্রচারের মূল বিষয়ই হবে কেন্দ্রীয় প্রকল্প আর উন্নয়ন। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার গুচ্ছ গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে। সেই সব প্রকল্পের কাজও হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান, বিআরজিএফ, তফসিলিদের উন্নয়ন, তফসিলি ভাতা, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, আবাসন প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ নানা প্রকল্পের কাজ হচ্ছে কেন্দ্রের বরাদ্দ করা টাকায়। মানসবাবুর কথায়, “এই সব প্রকল্পগুলি রাজ্য সরকার করছে বলে প্রচার হচ্ছে। আসলে এগুলি যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প, সেটাই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।” কর্মীদের বলা হচ্ছে, এই বার্তা গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে দিতে পাড়া বৈঠক, পথসভা করতে হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প সম্পর্কে সকলকে জানাতে লিফলেটও বিলি করা হবে বলে মানসবাবু জানান। প্রতিটি ব্লকে সভারও আয়োজন করা হবে।

Advertisement

সোমবার কেশিয়াড়িতে কংগ্রেসের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সহ-সভাপতি শম্ভু চট্টোপাধ্যায়, জেলা নেতা মৃত্যুঞ্জয় সাউ, তীর্থঙ্কর ভগত। শম্ভুবাবু বলেন, “প্রচারে মানুষকে কী বোঝাতে হবে, কর্মীদের সে কথাই জানানো হচ্ছে।” উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনেও জোর দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল কতগুলি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পারেনি, কোথায় প্রার্থী দেওয়ার পর কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা হয়েছে, জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে, সেই সময় পুলিশের ভূমিকা কেমন ছিল এ সব ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত করা শুরু হয়েছে। একদিকে নিয়মিত জেলার হালহকিকত নির্বাচন কমিশনে জানানো, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে কী ভাবে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন প্রচারে তা জানানো আসন্ন নির্বাচনে এটাই কংগ্রেসের প্রচার কৌশল। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এবার চতুর্মুখী লড়াই। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে, নিজেদের কথা মানুষের কাছে পৌঁছনো গেলে সেই জায়গা তৈরি করা সম্ভব, যেখানে দাঁড়িয়ে কোনও দলই আগে থেকে বলতে পারবে না কে জিতবে। লড়াইয়ের এই জায়গায় পৌঁছতেই মরিয়া কংগ্রেস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন