সিপিএমের হয়ে প্রচার করায় ও ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলে নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় এক সিপিএম সমর্থকের দোকান ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে নন্দীগ্রামের পশ্চিম বিরুলিয়া গ্রামের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূল সমর্থকদের হামলায় চার সিপিএম সমর্থক আহত হয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএম সমর্থকদের আরও অভিযোগ, হামলার পর নন্দীগ্রাম থানার পুলিশকে ফোনে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “নন্দীগ্রামে সিপিএম সমর্থকদের মারধর ও দোকান ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিরুলিয়া গ্রামে চায়ের দোকান রয়েছে গ্রামেরই বাসিন্দা অতুল মণ্ডলের। অতুলবাবুর পরিবার-সহ এলাকার আরও বেশ কয়েকটি পরিবার সিপিএম সমর্থক পরিচিত। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা সিপিএমের হয়ে প্রচার করেছিলেন। সিপিএম নেত্ৃত্বের অভিযোগ, ভোটের দিন কয়েক আগে থেকেই ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য তাঁদের হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল কর্মীরা। হুমকি উপেক্ষা করেই অতুলবাবু-সহ দলীয় সমর্থকরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাত ৮ টা নাগাদ এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা অতুলবাবুর চায়ের দোকানে হামলা চালায়। এমনকী অতুলবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর নাতি তপন মণ্ডলকেও মারধর করা হয়। বাদ যাননি ওই পাড়ার সিপিএম সমর্থক শম্ভু মণ্ডল, অশোক পণ্ডা, দীপক মণ্ডলরাও। অভিযোগ মারধরের পাশাপাশি হামলা চালানো হয় তাঁদের বাড়িতেও। এমনকী ভোটের ফল বেরোনোর পর দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে যায় তারা।
আবার বুধবার বিকেলেও বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান শশাঙ্ক বেরাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। অভিযোগ, বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ স্থানীয় বরাচিরা গ্রামে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে একদল তৃণমূল সমর্থক চড়াও হয় তাঁকে মারধর করে। এমতাবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যান।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, “ভোট মিটতেই সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপর তৃণমূলের অত্যাচার শুরু হয়েছে। পশ্চিম বিরুলিয়া গ্রামেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এমনকী রাতে নন্দীগ্রাম পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানালেও পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে পদক্ষেপ নেয়নি।” নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের তৃণমূল নেতা মহাদেব বাগ অবশ্য সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সিপিএম সমর্থকদের মারধর ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন। জনগণের সমর্থন না পেয়ে সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।” পুলিশদের ঘটনাস্থলে না যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈনের বক্তব্য, “বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেছি।”
বিক্ষোভে সিপিএম। নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম। এ দিন দলের পক্ষ থেকে কাঁথি ৩ ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করা হয়। সিপিএমের মারিশদা জোনাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ শীটের অভিযোগ, কাঁথি-৩ ব্লক এলাকায় নিবার্চন শান্তিপূর্ন করার কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলেও বিভিন্ন জায়গায় বুথ জ্যাম, রিগিং ও ছাপ্পা ভোট পড়েছে। বেশ কিছু বুথে পুনর্নির্বাচনেরও দাবি জানিয়ে বিডিওর কাছে সিপিএমের তরফে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।