ভোট-হোলির মরসুমে তুঙ্গে আবিরের চাহিদা

এক হোলিতে রক্ষা নেই, ভোট দোসর! ভোট-হোলির যুগলবন্দিতে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে আবিরের। তুমুল ব্যস্ত কারিগররা। বছরের অন্য সময়ে যেখানে কবিতা, বেলা বা নমিতারা দিনভর গৃহস্থলির কাজ করেন, তাঁরাই এই মরসুমে সংসারে বাড়তি রোজগারের আশায় সংসার সামলে ‘সময়’ করে নেমে পড়েন রকমারি আবির তৈরির কাজে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:০৬
Share:

তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়া এলাকায় আবির তৈরির ব্যস্ততা।—নিজস্ব চিত্র।

এক হোলিতে রক্ষা নেই, ভোট দোসর!

Advertisement

ভোট-হোলির যুগলবন্দিতে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে আবিরের। তুমুল ব্যস্ত কারিগররা।

বছরের অন্য সময়ে যেখানে কবিতা, বেলা বা নমিতারা দিনভর গৃহস্থলির কাজ করেন, তাঁরাই এই মরসুমে সংসারে বাড়তি রোজগারের আশায় সংসার সামলে ‘সময়’ করে নেমে পড়েন রকমারি আবির তৈরির কাজে।

Advertisement

হোলির মরসুমে এ বার লোকসভা ভোট হওয়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। এমনিতে আবির তৈরির কাজ সারা বছর চলে না। মূলত, তা শুরু হয় হোলির মরসুমের আসার কিছুটা আগে। এর প্রধান কারিগর মূলত ‘অন্য’ পেশার শ্রমিকরা। যেমন, রঙের শ্রমিক বা সাধারণ গৃহবধূ বা রাজমিস্ত্রির জোগারেরা।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরেই রয়েছে আবির তৈরির একাধিক কারখানা। শহরের উত্তরচড়া, শঙ্করআড়া এলাকায় এ রকমই এক কারখানায় সোমবার সকালে দেখা মিলল স্থানীয় গৃহবধূ তথা কারিগরদের। কবিতা গুড়িয়া, বেলা শাসমল, নমিতা পট্টনায়েকরা ব্যস্ত গোলাপী, সবুজ, হলুদ আবির তৈরির কাজে। সাদা চক পাওডারের সঙ্গে বিভিন্ন রং ও সুগন্ধি মিশিয়ে তাঁরা তৈ রি করছেন সাধারণ আবির। আর গুড়ো বার্লির সাথে রং, সুগন্ধি মিশিয়ে বানাচ্ছেন শৌখিন আবির।

আবির প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ত্রী অলকা গুড়িয়া বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের পরিবার আবির ও সিঁদুর তৈরির কাজে যুক্ত। সাধারণত, হোলির আগে দেড়-দু’মাস ধরে আবির তৈরি করা হয়। তা তৈরির কাজে এলাকার মহিলারই যুক্ত থাকেন।” বর্তমানে একাধিক জায়গার আবির তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় বেড়েছে প্রতিযোগিতা। অলকাদেবীর কথায়, “বিজয় মিছিল, উৎসবে রঙিন আবির লাগে। ভোট থাকলে আমরা আগেভাগেই বাড়তি আবির তৈরি করিয়ে রাখি।” আবির তৈরির ফাঁকে গৃহবধূ কবিতা গুড়িয়া বলেন, “স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। মাত্র একজনের আয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই আবির তৈরির মরসুমে সংসার সামলে বাড়ির কাছের আবির তৈরির কারখানায় চলে যাই। বাড়তি রোজগারও হয়। কিছু কাজও শেখা যায়।”

উত্তরচড়া, শঙ্করআড়া এলাকার ব্যবসায়ী সুধীর দাস আবির তৈরি করছেন গত ক’য়েক বছর ধরে। তমলুক শহরের বড়বাজারে দশকর্মার দোকান রয়েছে তাঁর। কিন্তু, হোলির আগে আবির তৈরির কাজে নেমে পড়েন তিনি। ফি মরসুমে চার-পাঁচ টন আবির তৈরি করেন তিনি। ভোট থাকায় এ বার কিছুটা বাড়তি আবির তৈরি করছেন তিনি। তাঁর তৈরি আবির তমলুক, হলদিয়া, ময়না, পাঁশকুড়া-সহ জেলার অনেক জায়গার ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়। সুধীরবাবুর কাছে আবির তৈরির কাজ করেন শহরেরই বাসিন্দা গুরুপদ ভৌমিক, বিজয় মালিক, অদ্বৈত অধিকারী, সোনু ধাড়া-সহ ৯ শ্রমিক। বছরের অন্য সময় বাড়ি রঙ করার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন এঁরা।

বাড়তি আয়ের জন্যই আবির তৈরি করেন বলে জানান গুরুপদ, বিজয়। তাঁরা বলেন, “অন্য সময়ে বাড়ি রঙের কাজ করলেও এই সময়ে আবির তৈরি করে কিছুটা বাড়তি আয় হয়।” প্রায় চার বছর ধরে এই কাজে তাঁরা আছেন বলে জানান। সুধীরবাবুর মতে, “এ বার আবিরের চাহিদা এত বেশি যে, ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা বারংবার ফোন করে দ্রুত আবির পাঠানোর তাগাদা দিচ্ছেন।”

তবে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে আবিরের রঙের চাহিদারও বদল ঘটেছে। আগে লাল আবিরের চাহিদা বেশি থাকলেও, এখন আবার সবুজ আবিরের চাহিদা তুঙ্গে। এক বিক্রেতার কথায়, “হোলিতে গোলাপী আবিরের চাহিদা বরাবার বেশি। কিন্ত, এখন হোলিতেও সবুজ আবিরের চাহিদা বেড়েছে।”

আর ভেষজ আবির? তমলুক শহরের ব্যবসায়ী কৌশিক দত্ত বলেন, “ফুল থেকে তৈরি ভেষজ আবির বাজারে এলেও তার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর চাহিদামত পাওয়া মুশকিল। তাই এ বছরও হোলিতে সাধারণ মানের আবির বিক্রির পরিমাণ বেশি।”

সব মিলিয়ে, ভোট আর হোলি বাড়িয়ে দিয়েছে আবিরের চাহিদা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন