মুকুলের সভায় পুরভোটের বার্তা কই, ক্ষোভ

কথা ছিল, আসন্ন পুরসভা ভোটের কৌশলগত আলোচনার সঙ্গেই পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সভার মূল বক্তা মুকুল রায় ঘাটালের ক্ষীরপাই পুরসভা এলাকায় এসে সেই পুর-প্রসঙ্গের পাশাপাশি দলের কোন্দলে দাঁড়ি টানতে কী বার্তা দেন, তা জানতে উন্মুখ হয়ে ছিলেন জেলা-ব্লক এবং পুর নেতৃত্বের নানা গোষ্ঠী।

Advertisement

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী

ক্ষীরপাই শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

ক্ষীরপাইয়ের সভায় মুকুল রায়

কথা ছিল, আসন্ন পুরসভা ভোটের কৌশলগত আলোচনার সঙ্গেই পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সভার মূল বক্তা মুকুল রায় ঘাটালের ক্ষীরপাই পুরসভা এলাকায় এসে সেই পুর-প্রসঙ্গের পাশাপাশি দলের কোন্দলে দাঁড়ি টানতে কী বার্তা দেন, তা জানতে উন্মুখ হয়ে ছিলেন জেলা-ব্লক এবং পুর নেতৃত্বের নানা গোষ্ঠী। নজিরবিহীন ভাবে সব গোষ্ঠীই এ দিন সব বিরোধ দূরে সরিয়ে শহরের টাউন হলে একত্র হয়েছিলেন। কিন্তু, কোন্দল ঠেকাতে দিশা দেখানো দূর। পুরভোটের কৌশল নিয়েও কার্যত কোনও শব্দ খরচ করলেন না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক! মুকুলবাবুর এ হেন ‘নীরবতায়’ প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও, বহুজনই ঠারেঠোরে বোঝালেন তাঁরা কতটা হতাশ, ক্ষুব্ধ!

Advertisement

বৃহস্পতিবার মুকুলবাবুর ক্ষীরপাইয়ের সভার মিনিট পঁয়তাল্লিশের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে ছিল সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ। রাজ্য সরকারের ‘বিপুল উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, রাজ্যের আট কোটি মানুষ তৃণমূলের পাশে আছেন। তাই গত পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা ভোটের মতো আগামী পুরসভা ভোটেও ‘বেশিরভাগ’ আসনেই দল জিতবে। তাঁর কথায়, “অনেকে বলছে চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুরে আমাদের নাকি অবস্থা খারাপ। এটা অপপ্রচার। আমরা জিতছি, জিতব।”

মুকুলবাবুর বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্রই দলের অনেককে বলতে শোনা গেল, ‘বলা হয়েছিল, কত না আলোচনা হবে। কিন্তু, এ তো বক্তৃতা বই অন্য কিছু হল না!’ কেউ বললেন, ‘এটা দলনেত্রীর আস্থা অর্জনের পরে মুকুল রায়ের ক্ষমতা জাহির ছাড়া আর কিছু নয়!’ দিনের শেষে তাঁরা হতাশ।

Advertisement

কিন্তু, এমনটা যে হওয়ার কথা ছিল না, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছিল। কেমন? বুধবার জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেছিলেন, ‘বৈঠকে পুরসভা-সহ দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।’ একই কথা জানিয়েছিলেন শঙ্কর দোলই-সহ একাধিক জেলা নেতৃত্ব। এমনকী এ দিনই ক্ষীরপাই পুরসভা চত্বরে তৃণমূলের শালবনির বিধায়ক বলেছিলেন, “মুকুল রায় সাংগঠনিক এবং পুরভোট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেবেন।” এতেই বুক বেঁধেছিল ঘাটালের পাঁচটি পুরসভার নেতৃত্ব, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ওয়ার্ড কমিটি-সহ ব্লক স্তরের নেতৃত্ব।

বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের কোন্দল নতুন কিছু নয়। জেলা সভাপতি দীনেন রায়, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই, প্রদ্যোত্‌ ঘোষ-সহ একাধিক নেতা জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে বহুবার নানা নিদান দিলেও তাতে রাশ টানা যায়নি। বরং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আখের গোছাচ্ছে বিজেপি। এই অবস্থায় তৃণমূলের অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন মুকুলবাবুর সভার দিকে। কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ নিয়ে নীরব রইলেন তিনি?

জেলা সভাপতি দীনেন রায় এ দিন বলেন, মুকুলবাবুর আগে সভায় পুরসভা এবং সাংঠনিক, দু’টি বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, মুকুলবাবু? দীনেনবাবু ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন অন্য একজনকে দিয়ে দেন। আসলে এমন ঘটনায় তিনিও যে ‘অস্বস্তিতে’! বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা।

মমতার মেদিনীপুর সফর স্থগিত
নিজস্ব সংবাদদাদাতা • মেদিনীপুর

পিছিয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত মেদিনীপুর সফর। আগামী ২৪ নভেম্বর মেদিনীপুরে এসে দলের সাংগঠনিক সভা করার কথা ছিল তৃণমূলনেত্রীর। দুই মেদিনীপুর জেলার নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়ে গেলেন, ২৪ নভেম্বর ওই সাংগঠনিক সভা হচ্ছে না। বদলে তা হতে পারে ডিসেম্বরে। মুকুলবাবু এ দিন বলেন, “দলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৪ তারিখের কর্মসূচি স্থগিত থাকছে।” কেন হঠাত্‌ কর্মসূচি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত? তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরসভা নির্বাচন কিছুটা দেরি রয়েছে। মমতা চাইছেন, ঠিক ভোটের আগে সাংগঠনিক সভা করতে। সে ক্ষেত্রে সভা জানুয়ারিতেও হতে পারে। মেদিনীপুরের বদলে খড়্গপুরেও হতে পারে। খড়্গপুর এমনিতেই কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত। গত লোকসভা ভোটে আবার সেখানে মাথা তুলেছে বিজেপি। ফলে, রেলশহরে সাংগঠনিক শক্তিতে পিছিয়ে থাকা তৃণমূলের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। আগামী বছরের গোড়ায় খড়্গপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের ছ’টি পুরসভায় ভোট রয়েছে। বাকি পাঁচটি পুরসভা ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত। এগুলি হল খড়ার, রামজীবনপুর, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই ও ঘাটাল। পুরভোটের প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন ক্ষীরপাইয়ের টাউন হলে তৃণমূলের এক বৈঠক হয়। সেখানে যোগ দিতেই এসেছিলেন মুকুলবাবু। তার আগে তিনি মেদিনীপুরে আসেন। দুপুরে শহরের সার্কিট হাউসে পৌঁছে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন মুকুলবাবু। ছিলেন দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, মহিলা নেত্রী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ প্রমুখ। পরে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা এবং জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়। পরে ক্ষীরপাই রওনা দেন মুকুলবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন