মেলায় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার ফেটে মৃত্যু

ভরা মেলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ! তাতে গুরুতর আহত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ঘটনাস্থল হলদিয়ার দুর্গাচকের আইটিআই কলেজ মাঠ। হলদিয়া পেট্রোক্যালিক্যালস-এ কর্মরত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার গণেশ দত্ত (৪৮) রবিবার, ছুটির দিনে দিনে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন সরকারি উদ্যোগে শুরু হওয়া সবলা মেলায়। ওই একই মাঠে বেসরকারি উদ্যোগে চলছে বইমেলাও। তার আগে এ দিন মেলা কমিটির তরফে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসেছিলেন এইচপিএল-এর আবাসনের কর্মী গণেশবাবুও। প্রতিযোগিতা সবে শেষ হয়েছে, তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৬
Share:

মেলাতেই শুশ্রূষা চলছে গুরুতর জখম গণেশবাবুর(বাঁ দিকে)। বইমেলায় বিস্ফোরণের পর (ডান দিকে)। আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি।

ভরা মেলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ! তাতে গুরুতর আহত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। ঘটনাস্থল হলদিয়ার দুর্গাচকের আইটিআই কলেজ মাঠ।

Advertisement

হলদিয়া পেট্রোক্যালিক্যালস-এ কর্মরত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার গণেশ দত্ত (৪৮) রবিবার, ছুটির দিনে দিনে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন সরকারি উদ্যোগে শুরু হওয়া সবলা মেলায়। ওই একই মাঠে বেসরকারি উদ্যোগে চলছে বইমেলাও। তার আগে এ দিন মেলা কমিটির তরফে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসেছিলেন এইচপিএল-এর আবাসনের কর্মী গণেশবাবুও। প্রতিযোগিতা সবে শেষ হয়েছে, তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডারের।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, আঁকা প্রতিযোগিতায় প্রায় চারশো প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাঁদের অভিভাবকেরাও। তা ছাড়া একই সঙ্গে দু’টি মেলা চলায় ছুটির দিনে ওই চত্বরে ভিড় ছিল ভালই। এরই মধ্যে বিকেল ৪টে ২০ নাগাদ ওই ভরা মেলায় হঠাৎই বিস্ফোরণ হয়। আচমকা বিকট আওয়াজে হুলূস্থুল পড়ে যায় মেলায়। আতঙ্ক ছড়ায়। তারই মধ্যে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে।

Advertisement

মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন খড়্গপুরের বাসিন্দা অনুপম পালধি। তাঁর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ নেওয়া রয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনেই আরও অনেকের সঙ্গে কৌতূহলে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন তিনিও। দু’এক জনের সঙ্গে অনুপমবাবুই গণেশবাবুর প্রাথমিক শুশ্রূষা করেন। অনুপমবাবুর অভিযোগ, “এত বড় মেলা চললেও চত্বরে প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে অ্যাম্বুল্যান্স— কোনও ব্যবস্থাই ছিল না।” এমনকী এমন ঘটনার পরও প্রথম দিকে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে সে ভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি বলেও তাঁর অভিযোগ। অথচ মেলা চত্বরেই ছিল মেডিক্যাল ক্যাম্প। কিন্তু, দুর্ঘটনার সময়ে সেখানে কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ।

কিন্তু, কী ভাবে বিস্ফোরণ? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মেলা চত্বরে গ্যাস বেলুনের এক ব্যবসায়ী ওই সিলিন্ডার এনেছিলেন। সিলিন্ডার থাকলেও ওই ব্যবসায়ী সেখানে ছিলেন না বলে অনেকে জানিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, সিলিন্ডার থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে দাঁড়িয়েছিলেন গণেশবাবু। বিস্ফোরণের পর তিন টুকরো হয়ে যায় সিলিন্ডারটি। এক টুকরো ছিট্কে এসে তাঁর মাথার ডানদিকে গুলির মতো লাগে। তাতে গুরুতর আহত হন তিনি। মুহুর্তে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। শরীরের অন্যত্রও আঘাত লাগে তাঁর। মেয়ে একটু দূরে থাকায় সে বা অন্য কেউ অবশ্য আহত হননি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, গুরুতর অবস্থায় মেলার মাঠেই মিনিট দশেক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া কেউ উদ্ধারেও এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ। বেসরকারি গাড়িতে গণেশবাবুকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পথে তমলুকের নিমতৌড়ির কাছে মৃত্যু হয় এইচপিএল-এর ওই কর্মীর।

কেন সক্রিয় ছিলেন না মেডিক্যাল ক্যাম্পের সদস্যেরা? কেন ছিল না অ্যাম্বুল্যান্স? সবলা ও বই মেলা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “সব ব্যবস্থাই ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাতের কাছে যে গাড়ি আগে পাওয়া গিয়েছে, তাতে করেই পাঠানো হয়েছে।” হলদিয়ার মহকুমাশাসক তথা জেলাস্তরের সবলা মেলা কমিটির কোয়ার্ডিনেটের শঙ্কর নস্কর অবশ্য বলেন, “মেলায় মেডিকেল টিম থেকে শুরু করে দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স থাকার কথা ছিল। ঘটনার সময় সে সব ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কি না, খোঁজ নিয়ে দেখব।”

আজ, সোমবার দু’টি মেলার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, মেলা চত্বরের গেটের কাছে অপমৃত্যুর জেরে রবিবারই মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করে মেলা কমিটি। রাত অবধি ঘটনার কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ ওই বেলুন ব্যবসায়ীর সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন