কোতবাজার পুজো মণ্ডপে রাত জেগে কাজ। —নিজস্ব চিত্র
রাত পোহালেই ষষ্ঠী। দেবীদুর্গার বোধন। অথচ, চতুর্থীর দিন শহরের অধিকাংশ মণ্ডপে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, মণ্ডপ সাজানো এখনও ঢের বাকি! বিশেষ করে বাইরের কাজ। কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গেল বারের অভিজ্ঞতা থেকে এ বার উদ্যোক্তারা ঠিক করেন, আগে মণ্ডপের ভিতরের কাজ হবে। তারপর আবহাওয়া দেখে বাইরের কাজ হবে। কেননা, বৃষ্টিতে বাইরের কাজ তছনছ হয়ে গেলে সব চেষ্টাই মাঠে মারা যাবে! লড়াইতেও পড়শি পুজোগুলোর থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। সেই মতো মণ্ডপ শিল্পীদের ভিতরের কাজ আগে করতে বলা হয়। এখন যা পরিস্থিতি তাতে ষষ্ঠীতেও অধিকাংশ সর্বজনীনে পুরো কাজ শেষ হবে কি না সংশয়।
উদ্যোক্তারা অবশ্য আশাবাদী, আজ, পঞ্চমীর মধ্যেই মণ্ডপ সাজানো শেষ করতে। এ দিন শহরের বেশ কিছু পুজোর উদ্বোধনও হওয়ার কথা। মেদিনীপুরের অরবিন্দনগর সর্বজনীনের এ বার পুজোর থিম ‘চলো যাই খেলি’। মণ্ডপ সাজছে লুডো, ক্যারাম, দাবা প্রভৃতি দিয়ে। পুজোর অন্যতম কর্তা কার্তিক ধর বলেন, “আগে মণ্ডপের ভিতরের কাজ শুরু হয়েছিল। তারপর বাইরের কাজ। তবে চিন্তার কিছু নেই। সোমবারই মণ্ডপ সাজানো শেষ হয়ে যাবে।” বৃষ্টি নিয়ে ভাবনা ছিল?
কার্তিকবাবুর জবাব, “সে চিন্তা তো এখনও আছে। তবে শুনছি পুজোর ক’টা দিন শুকনো আবহাওয়াই থাকবে। এটা হলেই ভাল।” রাঙামাটি সর্বজনীনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে জয়পুরের মন্দিরের আদলে। পুজোর অন্যতম কর্তা গোপালচন্দ্র কর্মকারের কথায়, “পুজো দর্শকদের ভাল লাগলে সেটাই প্রাপ্তি।” কিন্তু, মণ্ডপ সাজানোর পুরো কাজ তো এখনও শেষ হয়নি? গোপালচন্দ্রবাবু বলছেন, “আগে ভিতরের কাজ হয়েছিল। সোমবারের মধ্যেই বাইরের কাজ শেষ হবে।”
গতবার অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পুজো ছিল। বৃষ্টির জলে পুজো অনেকের মাটিই হয়েছে। জল-কাদা পেরিয়ে পুজো দেখতে হয়। এ বার অবশ্য পুজোর দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তা-ও বৃষ্টির একটা আশঙ্কা ছিলই। তাই অধিকাংশ সর্বজনীনই আর তড়িঘড়ি মণ্ডপের বাইরের কাজ শেষ করার ঝুঁকি নেয়নি। মেদিনীপুরের মতো শহরে শতাধিক সর্বজনীন পুজো হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু বড় বাজেটের। পুজোয় একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই চলেই। উদ্যোক্তারা থিম পুজোর মাধ্যমে নানা বার্তাও তুলে ধরার চেষ্টা করেন। পুজোর শহরে এ বারও ছবিটা একই।
গতবার রবীন্দ্রনগরে পুজো দেখতে এসে অনেকেই নিরাশ হয়েছেন। কারণ সেই দুর্যোগই। গেল বার এখানে থিম ছিল, ‘এ বার পুজো ফুল ফিল্মি’। মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল চলচ্চিত্রের নানা দিক। ছিল শু্যটিং স্পষ্ট থেকে গুহা, পাহাড়, রাজবাড়ি-সব কিছুই। কিন্তু, দুর্যোগ অনেক কিছুই এলোমেলো করে দেয়। এ বার রাজস্থানের জয়পুরের বিড়লা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছে রবীন্দ্রনগরে। প্রতিমায় থাকছে অভিনবত্ব। মণ্ডপের মধ্যে থাকবে আলো-শব্দের মিশ্রণে জোনাকির আওয়াজ। পুজোর অন্যতম কর্তা চম্পক দত্ত বলছেন, “আশা করি, এ বার ভালয় ভালয় কাটবে।”
পুজোর শহরে আবার বিভিন্ন এলাকার মাঠে মেলা বসে। যেমন রাঙামাটি, বার্জটাউন, বিধাননগর, অরবিন্দনগর প্রভৃতি। হরেক রকম স্টলে থাকে কত কী খাবার। অনেকেই পুজো দেখতে বেরিয়ে মেলার মাঠে জমিয়ে আড্ডা দেন। ফলে, পুজোর ক’টি দিন শুকনো আবহাওয়া না-থাকলে যে ষোলোআনাই লোকসান, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!