তখন চলছে সভা।—নিজস্ব চিত্র।
সভামঞ্চে বসে জেলা ও রাজ্যস্তরের কর্তাব্যক্তিরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন খোদ সহ সভাধিপতি। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পঞ্চায়েত প্রধানেরা কেউ বলছেন রাস্তা পাকার প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদনের জন্য। কেউ দাবি রাখছেন, এলাকার নিকাশিখাল দ্রুত সংস্কারের জন্য। কেউবা প্রধান এবং সদস্যদের ভাতা বাড়ানোর আর্জি রাখছেন কিন্তু, তা শুনবে কে? মতামতই বা জোরদার হবে কী করে? সভামঞ্চের সামনে অধিকাংশ চেয়ারই যে খালি পড়ে!
মঙ্গলবার এমন ভাঙা হাটের দৃশ্যই দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ষান্মাসিক জেলা সংসদ সভায়। তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এ দিন জেলা পরিষদের সংসদ সভা শুরুর সময় ছিল সকাল ১১টা। আধ ঘণ্টা পর শুরু হয় সভা। একে একে বক্তব্য রাখেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, সহ সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল ও রাজ্য পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন দফতরের উপ সচিব ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু বক্তব্য চলার সময়েই বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সভামঞ্চের সামনে থাকা চেয়ার ছেড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠতে শুরু করেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, প্রধান, উপ প্রধান থেকে সদস্যেরা!
এমন সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামেন সহ সভাধিপতি সুফিয়ান। তিনি মাইক ফুঁকে বলতে শুরু করেন, ‘সবাই চলে গেলে আলোচনা সভা চলবে কি করে? পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ (এ দিন প্রতিনিধিদের খাওয়ানোর দায়িত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা) একটু দেখুন।’ ঘড়িতে তখন বেলা পৌনে একটা। ততক্ষণে অধিকাংশ পঞ্চায়েত প্রতিনিধি হাজির হয়েছেন সভামঞ্চের পাশে স্মৃতিসৌধের নিচতলার হলঘরে খাওয়ার টেবিলে। ফলে সংসদ সভার মঞ্চের সামনে অর্ধেকেরও বেশি খালি চেয়ার নিয়ে চলতে থাকে এ দিনের সভা।
এমন সভায় ঠিক কী হয়? জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, উন্নয়নের বিভিন্ন খতিয়ান তুলে ধরা হয়। আগামী আর্থিক বছরে কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। থাকে প্রোজেক্টরের ব্যবস্থা। যাঁরা আসেন তাঁদের থেকে মতামত নেওয়া হয়। গোটা বিষয়টির ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। প্রথম প্রথম ঠিক মতো চললেও সভার তাল কাটে মধ্যাহ্ণ ভোট শুরু হতেই। কী ছিল এ দিনের মেনুতে? সাদাভাতের সঙ্গে চিংড়ি, পোনামাছ, কচি পাঠার ঝোল। আর শেষপাতে দই, মিষ্টি, চাটনি-পাঁপড়। আর তাতেই কাটে তাল!
এ দিনের সভায় প্রথমেই বলতে ওঠেন নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ভেকুটিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান সরোজ ভুঁইয়া। তিনি তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা খোলার আর্জি জানান। এরপর একে একে প্রস্তাব রাখেন প্রতিনিধিরা। তবে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়ার পালা থামেনি। এক সময় গুটি কয়েক পঞ্চায়েত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মাইক হাতে বলতে ওঠেন এগরা ১ ব্লকের বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সিদ্ধ্বেশ্বর বেরা। তিনি বলেন, “প্রধানদের মাসিক ভাতা মাত্র ২ হাজার। সদস্যদের মাসিক ভাতা ১৫০ টাকা। আজকের দিনে এই টাকায় চলে কী ভাবে?” তাকে যে সকলে সমর্থন করবেন, বা নিজেদের মত রাখবেন, তার অবকাশ কই? সভাস্থল যে ফাঁকা! জনা কুড়ি মাত্র বসে।
কেন এমনটা হল?
জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের উপ সচিব বলেন, “বিষয়টি সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের বিষয়। তাই এ নিয়ে কিছু বলব না।” সভায় পঞ্চায়েতগুলিকে নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধি, রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে অনভিপ্রেত বাধা দূর করতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে সাফল্যের নিরিখে নন্দীগ্রাম ২ ব্লক প্রথম, কাঁথি ১ ব্লক দ্বিতীয়, হলদিয়া ব্লক তৃতীয় এবং বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রথম, দেউলপোতা গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বিতীয় ও হেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে তৃতীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়।