মহা সমারোহে রথে মাতল পূর্ব

রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম... প্রতি বছরের মতো এ বারও বিপুল উৎসাহে কাঁথিতে পালিত হল রথযাত্রা। কাঁথি মহকুমার সবচেয়ে বড় রথযাত্রা ও মেলার আসর বসে রামনগর ২ ব্লকের মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডেমুরিয়াতে। তিনশো বছরের প্রাচীন এই মেলায় প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। সাবেকিয়ানা ও বৈচিত্রের মেলবন্ধন এই মেলা ঘিরে শুধু রামনগর নয়, সমগ্র কাঁথি মহকুমা জুড়ে উৎসাহ দেখা যায়। রবিবার বিকেলে রথের দড়ি টেনে যাত্রার সূচনা করেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০২:৩১
Share:

রশিতে টান। মহিষাদলের রথযাত্রায় সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি।

রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম...

Advertisement

প্রতি বছরের মতো এ বারও বিপুল উৎসাহে কাঁথিতে পালিত হল রথযাত্রা। কাঁথি মহকুমার সবচেয়ে বড় রথযাত্রা ও মেলার আসর বসে রামনগর ২ ব্লকের মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ডেমুরিয়াতে। তিনশো বছরের প্রাচীন এই মেলায় প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। সাবেকিয়ানা ও বৈচিত্রের মেলবন্ধন এই মেলা ঘিরে শুধু রামনগর নয়, সমগ্র কাঁথি মহকুমা জুড়ে উৎসাহ দেখা যায়। রবিবার বিকেলে রথের দড়ি টেনে যাত্রার সূচনা করেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি।

ট্রাস্টি কমিটির দ্বারা এতদিন এই মেলা পরিচালিত হত। তবে এবার প্রশাসনের উদ্যোগেই এই মেলা আয়োজিত হচ্ছে। মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান তমালতরু দাস মহাপাত্র জানান, তিনশো বছরের প্রাচীন এই রথযাত্রার মেলা উপলক্ষে প্রশাসনের উদ্যোগে রামনগর ২ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক প্রীতম সাহাকে সভাপতি করে একটি পরিচালন কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির তিন সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলীতে তমালতরু দাস মহাপাত্র, সেবাইত পরিবারের সদস্য অলক চৌধুরী ও কাদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান অমুল্য করণ রয়েছেন। এছাড়াও পরিচালন কমিটিতে রামনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরুন দাস, জেলাপরিষদ সদস্য অশোক বিশাল সহ সভাপতি পদে থাকা ছাড়াও মৈতনা ও কাদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা রয়েছেন। কমিটির দুই মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী ও রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর ডেমুরিয়া মেলাকে অন্যবারের চেয়ে এবারে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Advertisement


মেচেদায় ইস্কনের রথযাত্রার আগে জগন্নাথদেবের আরতি করছেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে)।
এগরায় রথযাত্রা উপলক্ষে রথ প্রতিযোগিতায় খুদেরা (ডান দিকে)। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস ও কৌশিক মিশ্র।

প্রাচীন এই মেলাকে নিয়ে নানা গল্পও ছড়িয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ডেমুরিয়া জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি কমিটির সম্পাদক অলক চৌধুরী জানান, প্রায় তিনশো বছর আগে জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায়ের দান করা জায়গায় জগন্নাথদেবের মন্দির স্থাপন হয়। সেই থেকে প্রতি বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পরবর্তীকালে ২০০৫ সালে গ্রামবাসীদের আর্থিক সাহায্যে মন্দিরের সংস্কার করা হয়। ট্রাস্টি কমিটির সভাপতি ও সেবাইত পরিবারের অন্যতম প্রবীণ সদস্য চিত্তরঞ্জন চৌধুরী জানান, “পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়মানুসারেই ডেমুরিয়া জগন্নাথ মন্দিরের পূজাঅর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন নিয়মমতো দু’বেলা জগন্নাথদেবের সামনে ভোগ নিবেদন করা ছাড়াও সন্ধ্যায় আরতি করা হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে ১১ দিন ধরে চলা রথের মেলায় সার্কাস, ম্যাজিক শো থেকে শুরু করে হরেক জিনিসের পসরা বসে। মেলা নিয়ে মেতে ওঠে আট থেকে আশি।

রথযাত্রা উপলক্ষে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা বাজারে রথযাত্রার উদ্বোধন করলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু আধিকারী।মায়াপুরের ইস্কন অনুমোদিত মেচেদা শ্রীচৈতন্য নামহট্ট সঙ্ঘের উদ্যোগে ন’দিন ব্যাপী রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন হল রবিবার। এ দিন রথের সামনে নারকেল ফাটিয়ে ও ঝাড়ু দেওয়ার পর রথের রশি টেনে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শুভেন্দুবাবু। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মন্দিরে শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তির সামনে নিজে আরতি করেন। শুভেন্দুবাবু বলেন, “মানুষের কল্যাণ, প্রেম, শান্তির জন্য প্রভু জগন্নাথ দেবের এই রথযাত্রা। মন খারাপ থাকলে এখানে এলে মন ভাল হয়ে যাবে।” মায়াপুরের ইস্কন অনুমোদিত মেচেদায় শ্রীচৈতন্য নামহট্ট সঙ্ঘের নির্মীয়মাণ মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য সাহায্যের ঘোষণাও করেন শুভেন্দুবাবু। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার মানুষ রথযাত্রার উৎসবে যোগ দেন। মেচেদা শ্রীচৈতন্য নামহট্ট সঙ্ঘের প্রচারক বিজয় নিতাই দাস জানান, “এ বার আমাদের উৎসব চতুর্থ বর্ষে পা দিল। রথযাত্রা উপলক্ষে আলোচনাসভা ছাড়াও প্রতিদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।”


তমলুকে ৫০০ বছরের মহাপ্রভু মন্দিরের রথযাত্রায় ভক্তরা (বাঁ দিকে)। ডেমুরিয়ায় রথ
দেখতে ভিড় স্থানীয় বাসিন্দাদের (ডান দিকে)। ছবি: কৌশিক মিশ্র ও সোহম গুহ।

হলদিয়ার মহিষাদলে রথের রশিতে টান দিলেন শুভেন্দু। হাত মেলালেন রাজবাড়ির সদস্য-সহ হাজারো জনতা। তমলুকের সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী বললেন, “অন্যতম ঐতিহ্যশালী এই উৎসবকে প্রশাসনিক সাহায্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মহিষাদল রাজবাড়ি চাইলে রথের আমূল সংস্কারের জন্য পূর্ণ সহযোগিতা করব।” সাংসদের এই ভূমিকায় আপ্লুত হয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান রাজবাড়ির সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ, যিনি প্রথাগতভাবে এ দিন রথের রশিতে প্রথম টান দেন। রাজ্য পর্যটন দফতর ও এইচডিএর যৌথ উদ্যোগে রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ছ’কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করছে দু’তরফের সম্পর্কের উপর। ১৭৭৬ সালে মহিষাদল রাজবাড়ির রানী জানকীদেবীর হাত ধরে প্রজাদের মিলনমেলার উদ্দেশে যে উৎসব শুরু হয়, তা এদিনের ঘটনায় অন্য মাত্রা পেল। স্থানীয়ভাবে প্রায় এক মাস ধরে চলা এই উৎসব আক্ষরিক অর্থেই যে মিলনোৎসবের রুপ পেয়েছে তার প্রমাণ দিন দিন তাঁর ব্যপ্তি বৃদ্ধি। মানুষের রথের রশি ধরে টানার প্রয়াস বা আবালবৃদ্ধবনিতার উৎসাহ উন্মাদনা এই উৎসবকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়।

(তথ্য সহায়তা: সুব্রত গুহ, আনন্দ মণ্ডল ও অমিত করমহাপাত্র)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন