রাস্তার কাজ ঢিমে তালে, অভিযোগ পূর্বে

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার কাজে ঢিলেমির অভিযোগ উঠল। এই প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জেলা পরিষদের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, কাজ শুরুর পরে কোথাও দেড় বছর, কোথাও তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বেশ কিছু রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। পূর্বের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহির মত, পরিকল্পনায় ত্রুটির জন্যেই এই অবস্থা!

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০১:৩২
Share:

তমলুক ব্লকের রত্নালী থেকে নরসিংহকালুয়া রাস্তায় ঢিমেতালে চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার কাজে ঢিলেমির অভিযোগ উঠল। এই প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জেলা পরিষদের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, কাজ শুরুর পরে কোথাও দেড় বছর, কোথাও তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বেশ কিছু রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। পূর্বের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহির মত, পরিকল্পনায় ত্রুটির জন্যেই এই অবস্থা!

Advertisement

বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় মোট ৩৪টি গ্রামীণ রাস্তার পাকা করার কাজ চলছে। কিন্তু জেলা পরিষদের সর্বশেষ প্রতিবেদনেই দেখা যাচ্ছে, কিছু রাস্তা দু’তিন বছর আগে পাকা করার কাজ শুরু হলেও নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ ছাড়া বেশ কিছু রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। আবার বেশ কিছু রাস্তার কাজ মামলার জেরে কিংবা বেদখল থাকার জন্য আটকে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্রাম-সড়ক যোজনায় রাস্তা পাকা করার কাজে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে কাজের পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন পূর্বের জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি। সিপিএম নেতা নিরঞ্জনবাবুর সরাসির অভিযোগ, “এই প্রকল্পে রাস্তা পাকা করার জন্য পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। সে কারণেই প্রতিটি রাস্তার কাজ ব্যহত হচ্ছে।” গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার আগে এলাকায় গিয়ে রাস্তার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে পরিকল্পনা তৈরি করলে এই সমস্যা অনেকটাই কমত বলে নিরঞ্জনবাবুর মত।

Advertisement

প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি জানান, পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর থেকে নারায়ণচক পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা পাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কাজের অনুমতি দেওয়াও হয়েছে ৬ মাস আগে। কিন্তু ওই রাস্তা পাকা করতে ঠিকাদার সমস্যায় পড়েছেন। কেননা, রাস্তা চওড়া করার জন্য মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কাজ ব্যহত হচ্ছে! তবে পরিকল্পনায় গাফিলতি বা কাজে ধীর গতির অভিযোগ মানেননি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা। তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই কাজ হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় সমস্যার জন্য কাজ ব্যহত হলেও তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাস্তার কাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে দাবি করলেও জেলায় গ্রাম সড়ক যোজনার কাজের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জেলা পরিষদের প্রতিবেদন অবশ্য তা প্রমাণ করছে না। যেমন, নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের মহেশপুর থেকে কাঞ্চননগর পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার জন্য ২ কোটি ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ওই কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ওই রাস্তা পাকা করার কাজ মাত্র ৫৪ শতাংশ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একই ভাবে চণ্ডীপুর ব্লকের ধান্যশ্রী থেকে আমদাবাদ পর্যন্ত রাস্তা তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর। কিন্তু প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই রাস্তার কাজ অর্ধেক হয়েছে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ, একই ভাবে ঢিমেতালে চলছে বৃন্দাবনপুর থেকে যাদবমিদ্যাচক, নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের বাসুলিচক থেকে মনুচক, ভগবানপুর ১ ব্লকের কলাবেড়িয়া থেকে দেউড়িবাড়, পটাশপুর ২ ব্লকের পটাশপুর থেকে শ্রীখোদা পর্যন্ত রাস্তা পাকা করার কাজ। সবমিলিয়ে এই তালিকা বেশ দীর্ঘ।

গ্রাম-সড়ক যোজনায় বেশ কিছু রাস্তা পাকা করার ক্ষেত্রে কাজের গতি আশানুরূপ নয় বলে স্বীকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “কিছু রাস্তা পাকা করার কাজে স্থানীয় সমস্যা কোথাও কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও আবার ঠিকাদার সংস্থার কাজের গতি আশানুরূপ নয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না।” কাজে গতি আনতে ঠিকাদার সংস্থাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে অজয়বাবু জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন