গাঁধী মূর্তির পাদদেশে রাহুল সিংহের সভা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বেলা একটা। দলের রাজ্য সভাপতি তখনও এসে পৌঁছননি। তবে সভা শুরু করে দিয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু, কর্মী-সমর্থক কই? বড় জোর শ’তিনেক মানুষ দাঁড়িয়ে। সভা চলছে, কিন্তু নেতারা অপলক চেয়ে রাস্তার দিকে। পূর্ব ঘোষিত রেকর্ড জমায়েত দূর, সমাবেশ ‘ফ্লপ’ হবে না তো!
কিছু সময় যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন নেতারা। একটি একটি করে মিছিল ঢুকছে যে! বেলা পৌনে তিনটেয় যখন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পৌঁছলেন, তখনও মাদল বাজিয়ে মিছিল ঢুকছে সভামঞ্চে।
বুধবার মেদিনীপুর শহরের গাঁধী মূর্তির পাদদেশে রাস্তার উপরেই সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। সভা শেষে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি নেতৃত্ব একান্তে স্বীকার করছেন, তাঁরা আশা করেননি সমাবেশে এত ভিড় হবে। যে ভিড় একেবারেই আটপৌড়ে ভিড়! যা দেখে রাহুল সিংহ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললেন, “জনসমুদ্রই বলে দিচ্ছে ২০১৬ সালে তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে।”
মঞ্চের সামনে কানায় কানায় ভিড় দেখে দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়, জেলা যুব মোর্চার সভাপতি শুভজিত্ রায়, শহর বিজেপি-র সভাপতি অরূপ দাসের মুখে ততক্ষণে তৃপ্তির হাসি। তবে তুষারবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এঁরা এসেছেন। দাসপুর, দাঁতন, কেশপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের আটকানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। না হলে আরও মানুষের সমাবেশ হত।” সমাবেশে যোগ দিতে বাধার অভিযোগে গোদাপিয়াশালে কিছুক্ষণ পথ অবরোধও করেন সভা ফেরত বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।
বিজেপি-র এই সভা হওয়ার কথা ছিল গত ২৭ অগস্ট। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না মেলায় তা হয়নি। আদালতের কাছ থেকে বিজেপি কলকাতার সভার অনুমতি আদায় করে নেওয়ার পর মেদিনীপুরেও অনুমতির জন্য বেগ পেতে হয়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, বিজেপি নেতাদের বক্তব্য আগাগোড়া রেকর্ড করেছে পুলিশ। বিজেপি-র দাবি, সভায় কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ এসেছেন। যদিও অন্য সূত্র বলছে, সংখ্যাটা এত না হলেও ভিড় হয়েছিল ভালই। ন্যূনতম পাঁচ হাজার মানুষের জমায়েত ছিল।
বক্তব্যের শুরু থেকেই আগাগোড়া তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। সারদা কাণ্ড থেকে শিল্প, সিভিক পুলিশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা সব কিছুতেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁর দিকে। মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে রাহুলের ব্যঙ্গ, “মুখ্যমন্ত্রীর কেন এত মদন প্রেম? কারণ, গ্রেফতার হওয়া অন্যরা বলবে, এ টাকা খেয়েছে, ও টাকা খেয়েছে। কিন্তু মদন তো বলবেন, আমি খাইয়েছি।” শালবনির জেলায় এসে জিন্দলদের চলে যাওয়া নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে ফের কটাক্ষ করেন রাহুল। তাঁর কথায়, “জমি ফেরতের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বেকারের ভাগ্যও ফেরত যাচ্ছে।” রাজ্যের মুসলিম সমাজ এখনও পিছিয়ে রয়েছে, তা মেনেছেন রাহুল। সে জন্য কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল সরকার দায়ী বলেই তাঁর দাবি।
অন্য দিকে, মেদিনীপুরের সভার আগে খড়্গপুরের নিমপুরায় ‘শিখ গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি’-র উদ্যোগে স্থানীয় একটি হোটেলে বিজেপি-র একটি ছোট সভা হয়। সেখানে রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে প্রবন্ধক কমিটি-র সভাপতি জিতেন্দর পাল সিংহ, সহ-সভাপতি মানেন্দর পাল সিংহ-সহ পঁয়ষট্টি জন শিখ সম্প্রদায় থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। এ ছাড়াও ওই সভায় কলাইকুণ্ডার এক সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য এবং এক নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য ও এক তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন।