রকি’র খুনিদের শাস্তি চাই, ফুঁসছে ঝাড়গ্রাম

তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তদের কঠিনতম শাস্তির দাবিতে জনমত গড়ে উঠছে অরণ্যশহরে। শহরের সমস্ত স্তরের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০০:৪৩
Share:

নিহত সৌরভ অগ্রবাল (রকি)-এর স্মৃতিতে বুধবার ঝাড়গ্রাম শহরে মহিলাদের মিছিল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তদের কঠিনতম শাস্তির দাবিতে জনমত গড়ে উঠছে অরণ্যশহরে। শহরের সমস্ত স্তরের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। অরণ্যশহরের পাঁচমাথার মোড়ে সৌরভের মৃতদেহের ছবি-সম্বলিত পোস্টার-ফেস্টুন দিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটেও সৌরভের মৃতদেহের ছবি ও অভিযুক্তদের ছবি দিয়ে নৃশংস খুনের ঘটনাটি বর্ণনা করে ন্যায্য বিচার দাবি করেছেন বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠজনেরা। সেখানে প্রতি মুহূর্তে জমা হচ্ছে অসংখ্য প্রতিবাদী-মন্তব্য। সৌরভের নৃশংস খুনের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন শহরবাসী। মঙ্গলবার অরণ্যশহরে স্কুল পড়ুয়া ও বাসিন্দাদের মিছিল হয়। বুধবারও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শহরের মহিলারা মোমবাতি-মিছিল করেন।

Advertisement

আদালতের নির্দেশে অশোক-সহ তিন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েক দিন আগে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের একটি দল ওড়িশায় গিয়েছিল। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে সূত্রের খবর। সৌরভের মোটর বাইকের নম্বর প্লেটটি সাপধরা এলাকায় রাস্তার ধারে একটি জঙ্গল থেকে পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় অশোক জানিয়েছেন, সৌরভকে অপহরণ করার পরে ওড়িশার বালেশ্বরের একটি গোপন ডেরায় দু’হাত পিছমোড়া করে বেঁধে এবং চোখ বেঁধে আটকে রাখা হয়েছিল। জেরায় অশোক স্বীকার করেছেন, অপহরণের কাজে তিনি একাধিক বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন। ওই সব অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের দাবি, অশোকের হেফাজতে থাকা একাধিক সিম নম্বর ব্যবহার করেই সৌরভের পরিবারের কাছে তিন কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। মুক্তিপণের টাকার জন্য সৌরভের পরিবারের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল অপহরণকারীরা। টেলিফোনে আড়ি পেতে বিষয়টি জেনে যায় পুলিশ। সৌরভের বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা দেখে চিন্তায় পড়ে যান অশোক। মুক্তিপণ পাওয়া অনিশ্চিত বুঝেই সৌরভকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অশোক। বালেশ্বর থেকে সৌরভকে অন্যত্র সরানোর সময় তাঁর চোখের বাঁধন সরে যায়। অশোককে দেখে ফেলেন সৌরভ। এরপর সৌরভকে বাঁচিয়ে রাখার ঝুঁকি নেন নি অশোক ও তাঁর সঙ্গীরা। পুলিশের দাবি, জেরায় অশোক স্বীকার করেছেন, তিনি ও তাঁর পরিচারক টোটন রাণা মিলে রকিকে খুন করেন। এই ষড়যন্ত্রে অশোকের ভাইপো সুমিতও জড়িত।

অরণ্যশহরের আনাচে কানাচেতে কান পাতলেই এখন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, মূল অভিযুক্ত পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মাকে বাঁচাতে তত্‌পর হয়ে উঠেছে খড়্গপুরের একটি প্রভাবশালী মহল। ঝাড়গ্রামের এসপি অলোক রাজোরিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, “অশোক-সহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।”

Advertisement

গত ২৫ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে মোটর বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বছর পঁচিশের সৌরভ ওরফে রকি। অরণ্যশহরের বলরামডিহির বাসিন্দা সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবালের ইমারতি সরঞ্জামের বড়সড় ব্যবসা রয়েছে। বাণিজ্যের স্নাতক সৌরভ তাঁর বাবার ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে ঝাড়গ্রামের সাপধরা এলাকায় নম্বর প্লেট খোলা অবস্থায় রকির বাইকটি পাওয়া যায়। ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবাল। সৌরভকে খঁুজে বের করার জন্য ঝাড়গ্রামের এসপি অলোক রাজোরিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে অপহরণকারীরা সৌরভদের মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ তিন কোটি দাবি করে। অবশেষে বিশেষ সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে সৌরভ-অপহরণের মূলপাণ্ডা হলেন অশোকবাবু। ৮ মে অশোক-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি দুই অভিযুক্ত হলেন অশোকের ভাইপো সুমিত শর্মা ও অশোকের পরিচারক টোটন রাণা। কিন্তু তার আগেই অবশ্য রকিকে খুন করা হয়েছিল। গত ৬ মে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার রম্ভা থানার পুলিশ রকির দেহ উদ্ধার করে। গত ৯ মে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতের নির্দেশে তিন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করেছে পুলিশ। আগামী ১৯ মে, সোমবার ফের তিন অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন