ভোট মিটতেই ফলাফলের চুলচেরা হিসেব-নিকেষ শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। মেদিনীপুরের মতো আসনে যে ভোট কাটাকুটি ফ্যাক্টর হতে পারে, দলের অন্দরে তা মেনে নিচ্ছেন বাম-তৃণমূল নেতৃত্বও। যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করছে না কোনও দলই। বরং সব পক্ষেরই দাবি, তারাই জিতছেন।
এক সময়ে বামেদের ‘খাস তালুক’ বলে পরিচিত ছিল মেদিনীপুর। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪টিতে এগিয়েছিল বামেরা। ৩টিতে কংগ্রেস- তৃণমূল জোট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই সমীকরণের এতটুকু হেরফের হয়নি। তবে রাজ্যে পালাবদলের পর বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। ‘লালদুর্গ’ মেদিনীপুর হতে থাকে ‘সবুজ-গড়’। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন যে সব পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে, তার একটিও দখল করতে পারেনি বামেরা।
তাহলে কীভাবে ভাল ফলের আশা করছে বাম শিবির? সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা বলছেন, পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন এক নয়। তাঁর কথায়, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন পড়েনি। লোকসভার ভোটে তৃণমূল ততটা সন্ত্রাস করতে পারেনি। তবে আমরা ৬৭টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।” আগের লোকসভায় বামেরা ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই বার মেদিনীপুরে ১০ জন প্রার্থী ছিলেন। এ বারও সংখ্যাটা একই। গতবার নির্দলরা সব মিলিয়ে ৫২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। বাম-শিবির আশাবাদী, এ বার যদি ৪২-৪৩ শতাংশ ভোটও ধরে রাখা যায়, তাহলেই কেল্লাফতে! দলীয় সূত্রে খবর, মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে ‘লিড’ পাওয়ার তেমন আশা করছে না বামেরা। তবে, খড়্গপুর গ্রামীণ, নারায়ণগড়, খড়্গপুর সদর এবং কেশিয়াড়ি থেকে লিড পাওয়ার আশা রয়েছে তাদের। এগরার ফলও খুব খারাপ হবে না বলে বামেদের দাবি।
অন্য দিকে, তৃণমূল শিবিরের দাবি, ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৬টিতে তারা নিশ্চিত লিড পাচ্ছে। খড়্গপুর সদরের ফল হয়তো ভাল হবে না। তবে খুব খারাপও হবে না। দলের এক সূত্র জানাচ্ছে, নারায়ণগড়ে ন্যূনতম ১৫ হাজার, কেশিয়াড়িতে কমপক্ষে ২৫ হাজার, খড়্গপুর গ্রামীণে ১৫ হাজার ভোটের ‘লিড’ থাকবে। মেদিনীপুর ও দাঁতনে এই সংখ্যা যথাক্রমে ন্যূনতম ৩০ হাজার ও ২০ হাজার। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কথায়, “বুথস্তর থেকে রিপোর্ট নিয়েছি। চিন্তার কিছু নেই। সন্ধ্যাদি (সন্ধ্যা রায়) লক্ষাধিক ভোটে জিতবেন। মিলিয়ে নেবেন।”
রাজ্য জুড়ে ‘মোদি-মোদি’ রব উঠেছে। বাম- তৃণমূলের অন্দরেও বিজেপির ভোট কাটাকুটি নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কী বলছে বিজেপি? দলের জেলা সভাপতি তুষারবাবুর দাবি কিন্তু দু’পক্ষেরই রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে! তাঁর কথায়, “মেদিনীপুরে আমাদের ফল খুব ভাল হবে। খড়্গপুর সদরে আমরা লিড দিচ্ছি। মেদিনীপুর সদরেও ভোট বাড়ছে। গ্রামীণ এলাকার ফল হয়তো ততটা ভাল হবে না।” ২০০৯ সালে মেদিনীপুর থেকে বিজেপি ৫২ হাজার ভোট পেয়েছিল। এ বার কী ১ লক্ষ ৫২ হাজার ভোট পাবে? তুষারবাবুর দাবি, “এর থেকেও বেশি!”
২০১১ সালের নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত ৪টি বিধানসভায় জিতলেও বামেদের লিড কিন্তু খুব বেশি ছিল না। কেশিয়াড়িতে বামেরা জেতে ১,০৩৭ ভোটের ব্যবধানে। খড়্গপুর গ্রামীণে ২,৫০৪ ভোটে, দাঁতনে ৪,৬৫০ এবং নারায়ণগড়ে ৭,১০৮ ভোটের ব্যবধানে। অবশ্য বিধানসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট ছিল। এ বারের লোকসভায় জোট নেই। লড়াইও চতুর্মুখী। এটাও আশার আলো দেখাচ্ছে বামেদের। এ দিকে, ১০৮টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজ বলছেন, “আশা করছি, আমাদের ফল ভালই হবে।”
পরীক্ষা শেষ। আপাতত ফলেরই অপেক্ষা।