হলদিয়ার চাউলখোলা এবং কিসমত-শিবরাম নগর লাগোয়া গ্রামে মঙ্গলবার থেকে শুরু হল মহালক্ষ্মীর আরাধনা। শিল্পশহর লাগোয়া এই দুটি গ্রামে এখন উৎসবের আবহ। বসেছে মেলা, ছোটখাট নাগরদোলা, মণ্ডা-মিঠাই এর দোকান। এ ছাড়াও থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্যুইজ, নাচ-গান কবিতার লড়াই। এ বার কিসমাত-শিবরাম নগরে পাঁচটি এবং চাউলখোলায় দুটি লক্ষ্মী পুজো হচ্ছে। চলবে পাঁচ দিন। হলদিয়া, মহিষাদল থেকে বহু মানুষ এই সব পুজো মণ্ডপে আসেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, এক একটি মণ্ডপ আকারে, থিমে, বাজেটে পাল্লা দিতে পারে যে কোনও বড় বাজেটের পুজোকে।
স্থানীয়েরা এই দুটি গ্রামের নাম দিয়েছেন ‘কোজাগরী গ্রাম’। কী ভাবে এই পুজার প্রচলন হল? কিসমত-শিবরাম নগরের আশি বছরের প্রবীণা দুর্বা মান্না জানান, এই দুটি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ভাল চাসবাস হত। সোনার ফসল ফলত। তাই খুশি হয়ে এলাকার মানুষ বড় করে ধন লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু করেন। সেই থেকে এই এলাকায় পুজো কার্যত দুর্গাপুজোর চেহারা নেয়। এই সময় গ্রামের মেয়েরা বাপের বাড়ি আসে। বাড়ি বাড়ি কুটুম্ব, নতুন জামা, বিবিধ আয়োজন। সেই পরম্পরা এখনও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন গ্রামের তরুণ যুবকেরা। স্থানীয় যুবক গৌতম মান্না, দেবাশিস ভুঁইয়া, নিতাই পাল, উত্তম পালেরা জানান, এই পুজো তাঁদের কাছে গর্বের।
কিশমত-শিবরাম নগর এবং চাউলখোলায় এ বার সাতটি পুজো হচ্ছে। এগুলি হল সমন্বয়, বিনয়ী ক্লাব, ঋষি বঙ্কিম, মিলান তীর্থ, আমরা সবাই, অগ্রণী এবং ঋষি অরবিন্দ। বড় বাজেটের এই পুজোগুলির থিম, বিন্যাস, সজ্জা গোটা এলাকাকে উৎসবের চেহারা দিয়েছে। সমন্বয় ক্লাবের মণ্ডপ হয়েছে দিল্লির লোটাস মন্দিরের আদলে। ‘ছোটা ভীম’-এর আদলে প্রতিমা। ৭০ বছরে পদার্পণ করা এই পুজার সঙ্গে বহু মানুষের আবেগ জড়িত। প্রথম দিকে গ্রামের মানুষ চাঁদা দিয়ে এই পুজো করতেন। ঠাকুর হত সাবেকি। ক্লাবের সদস্য গৌতম মান্নার দাবি, এ বার তাদের পুজোর বাজেট দু’লক্ষ টাকা। বিনয়ী ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন করেন রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। এই গ্রাম দুটি মহিষাদল বিধানসভার অন্তর্গত। উদ্বোধনে এলাকার বিধায়ক-মন্ত্রী সুদর্শনবাবু পরিবেশ সচেতনতায় জোর দেন।
এ বার বিনয়ী ক্লাবের পুজোর বাজেট চার লক্ষ টাকা। পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই এই ক্লাবের তরফে ধানের গোলার আদলে মণ্ডপ বানানো হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশ ফুটে উঠেছে বিভিন্ন মাঙ্গলিক প্রতীক, নাচ, গান, বাঁশি বাজানোর দৃশ্যে। ক্লাব কর্তা দেবাশিস ভুঁইয়া জানান, আঠারো হাতের মহালক্ষ্মী এখানে মাটির বুদ্ধমূর্তির আদলে নটরাজ ভঙ্গিমায় দৃশ্যমান। খেলা, সংবাদ পাঠ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা আগামী পাঁচ দিন এলাকা মাতিয়ে রাখবে বলে জানালেন এলাকার বাসিন্দারা।
ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এমনটাই জানালেন ক্লাবের কর্মকর্তা সুখেন্দু রাজপণ্ডিত। মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি তাদের পুজোর বৈশিষ্ট্য। ঋষি অরবিন্দর পুজো এ বার ৮১ বছরে পা দিল। উদ্যোক্তাদের আশা, অগ্রণী ক্লাবের মুক্তোর প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাবেন দর্শনার্থীরা। চাউলখোলা এবং কিসমত-শিবরাম নগর এলাকার পুজো দেখতে ইতিমধ্যেই ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। সাগরদ্বীপ থেকে প্রশান্ত মাইতি, ময়না থেকে ডালিয়া বেরা, দারিবেরিয়া থেকে অশোক দাস এসেছেন আত্মীয় বাড়িতে। এঁরা সকলেই কোজাগরী গ্রামে এসে খুশি।