শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতার বাড়িতে হামলা হলদিয়ায়

সাংগঠনিক ভাবে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করার পরই তাঁর ঘনিষ্ঠ হলদিয়া বন্দর এলাকায় দলের শ্রমিক সংগঠনের দাপুটে নেতা শ্যামল আদকের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাটের অভিযোগ উঠল। শ্যামলবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাচক থানার কাছে জি ব্লকে। শ্যামলবাবু ছ’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারধর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া ও তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০১:০৫
Share:

ভাঙচুরের পরে।

সাংগঠনিক ভাবে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করার পরই তাঁর ঘনিষ্ঠ হলদিয়া বন্দর এলাকায় দলের শ্রমিক সংগঠনের দাপুটে নেতা শ্যামল আদকের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাটের অভিযোগ উঠল। শ্যামলবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাচক থানার কাছে জি ব্লকে। শ্যামলবাবু ছ’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারধর ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) অমিতাভ মাইতি বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কী কারণে হামলা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

তৃণমূলের একাংশের মতে, গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই এই হামলা। শ্যামলবাবু যে ছ’জনের নামে অভিযোগ করেছেন, তারাও এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত। তবে শুভেন্দু শিবির জানিয়েছে, এর সঙ্গে গোষ্ঠী কাজিয়ার কোনও যোগ নেই। পুরোটাই স্থানীয় বিবাদের জের।

শুক্রবার সকালে শ্যামলবাবুর দুর্গাচকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে রাখা তাঁর গাড়ির কাচ ভাঙা। তিনতলা বাড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় তাঁর নির্মাণসংস্থার অফিস রয়েছে। আর তিন তলায় একাই থাকেন শ্যামলবাবু। তাঁর পরিবার থাকে কলকাতায়। এ দিন দেখা যায়, অফিসঘরে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালানো হয়েছে। দোতলার মেঝেতে পড়ে রয়েছে গুলির খোল। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে শ্যামলবাবু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত বারোটা নাগাদ জনা তিরিশেক দুষ্কৃতি হামলা চালায়। শ্যামলবাবু তখন বাইরে ছিলেন। অফিসঘরে ছিলেন চার জন কর্মী। তাঁদের থেকে খবর পেয়ে গাড়ি নিয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন শ্যামলবাবু। বাড়ির সামনে হামলাকারীদের মুখোমুখি হন তিনি। অভিযোগ, তখনই তাঁকে গুলি করে মারার চেষ্টা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর সোনার হার ও আংটি। খবর পেয়ে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) অমিতাভবাবুর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

Advertisement

শ্যামলবাবু অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি। দিনভর চেষ্টা করে মোবাইলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দুপুরের পর থেকে তিনি বাড়িতেও ছিলেন না। মুখে কুলুপ এঁটেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্যামলবাবুর অফিসের কর্মীরাও। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবার হলদিয়ার এক পান বিক্রেতা সুরথ দাস থানায় পাল্টা অভিযোগ করে জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ শ্যামল ঘনিষ্ঠ রাজেশ দুবে তাঁর দোকানের সামনে এসে শূন্যে গুলি ছোড়ে। সাদ্দাম খান নামে এক জনকে গুলি করে মারার চেষ্টাও করে। সাদ্দাম পালিয়ে বাঁচে। তারপর স্থানীয় এক গাড়ি চালকের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে শ্যামল আদকের বাড়ির দিকে নিয়ে যায় রাজেশ। শ্যামলবাবু যে ছ’জনের নামে হামলার অভিযোগ করেছেন, সাদ্দাম তাঁদেরই একজন। শ্যামল ঘনিষ্ঠদের দাবি, এ সব মিথ্যা অভিযোগ।

গুলির খোল।

যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দুর অপসারণের পরপরই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হলদিয়া বন্দরের নেতা শ্যামলবাবুর উপরে হামলার ঘটনায় চাপানউতোর শুরু হয়েছে। যদিও আইএনটিটিইউসির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মণ্ডল বলেন, “শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ থাকলে তা দলেই আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া যেত। যদি দলের কেউ হামলা চালিয়ে থাকে তবে তা দলবিরোধী কাজ হয়েছে।” সংগঠনের জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকারেরও বক্তব্য, “ঘটনাটি সংগঠন সম্পর্কিত কিনা তা দেখতে হবে। বন্দরের শ্রমিক নেতা হিসাবে শ্যামল আদক সফল। তাঁর বিরুদ্ধে এই রকম ক্ষোভ ছিল কিনা জানা নেই।”

শুভেন্দু এখন দিল্লিতে। এরই মধ্যে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পদে ফের নির্বাচিত হয়েছেন শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের সদস্য হিসেবে পরিচিত অপর্ণা ভট্টাচার্য। জেলা পরিষদের শিশু ও নারী উন্নয়ন, জনকল্যাণ ও ত্রাণ স্থায়ী সমিতির সদস্যদের নিয়ে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনের সভা ছিল এ দিন। সেখানে শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির আট সদস্যের মধ্যে অপর্ণাদেবী-সহ চার জন হাজির ছিলেন। তার মধ্যে এক জন আবার বাম সদস্য। উল্লেখযোগ্য ভাবে ছিলেন না জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, সহ-সভাধিপতি সেখ সুফিয়ান-সহ বাকি চার সদস্য। চার জনই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে, অপর্ণাদেবী, তাঁর স্বামী চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক অমিয় ভট্টাচার্যের পরিচিত বিধায়ক অখিল গিরির অনুগামী হিসেবে। সম্প্রতি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে সরানোর পাশাপাশি শিশির অধিকারীর ক্ষমতায় রাশ টানতে অখিল গিরিকে দলের জেলা কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। নতুন এই বিন্যাসে অখিল অনুগামীদের সক্রিয়তা বাড়ছে এবং জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য নির্বাচনের সভায় তারই প্রতিফলন হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

গরহাজিরার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সভাধিপতি অবশ্য জানান, মেয়ের অসুস্থতার কারণে তিনি বৈঠকে যেতে পারেননি। আর সহ-সভাধিপতি সেখ সুফিয়ান বলেন, “কলকাতায় সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। তাই কর্মাধক্ষ্য নির্বাচনের সভায় থাকতে পারিনি।” এর সঙ্গে দলের কোন্দলের সম্পর্ক নেই বলেও তাঁর দাবি। অন্য দিকে, অখিলবাবুর বক্তব্য, “দলে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তবে কেন আমাদের সদস্যরা এ দিন বৈঠকে যাননি খোঁজ নেব।”

এ দিন জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতির নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা শাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অপর্ণাদেবী জেলা পরিষদের শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির কর্মাধক্ষ্য নির্বাচিত হন। স্থায়ী সমিতির ৮ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলের ৭ জন থাকা সত্ত্বেও এ দিন অপর্ণাদেবী, রামনগরের কাকলী পাত্র, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের শোভা সাউ-সহ মাত্র তিন জন উপস্থিত ছিলেন। আর ছিলেন বিরোধী সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য শিবানী চক্রবর্তী।

আগেও কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন অপর্ণাদেবী। পরে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক কারণেই পদত্যাগ করেছিলাম। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী পঞ্চায়েতের কাজের জন্য পার্শ্বশিক্ষকরা ছুটি পাওয়ার অধিকারী। আমি জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য পদে যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল থেকে ছুটি নেব।” দলের ইচ্ছাতেই তিনি ফের কর্মাধ্যক্ষ পদে যোগ দিচ্ছেন বলেও জানান অপর্ণাদেবী।

চণ্ডীপুর ব্লকের চৌখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অপর্ণাদেবী ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি জেলা পরিষদের শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির কর্মাধক্ষ্য ছিলেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে ফের ওই কর্মাধক্ষ্য হন তিনি। অপর্ণাদেবী চণ্ডীপুরের চৌখালি গঙ্গা-পদ্মা মিলন কন্যা বিদ্যাপীঠের পার্শ্বশিক্ষিকা। প্রশাসনিক কারণে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। ফলে, এই সময়টা ওই কর্মাধ্যক্ষের পদ শূন্য ছিল। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির কর্মাধক্ষ্য পদে নির্বাচনের জন্য এরআগে ৩ মার্চ দিন স্থির হলেও তা স্থগিত করা হয়। লোকসভা ভোট মিটতেই ওই পদের নির্বাচনে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন