ভোটের এখনও দু’মাস মাস বাকি। জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অবশ্য শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গেল পুলিশের রুট-মার্চ। ওই এলাকার ভোটারদের ভরসা দিতেই এই সিদ্ধান্ত।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, এ জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি শুরু হয়েছে। রুট মার্চও চলছে। আগামী দিনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন রুট-মার্চ হয়েছে কেশপুরের কয়েকটি এলাকায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট তিনটি লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুর, ঘাটাল এবং ঝাড়গ্রাম। জেলার সীমানায় দু’টি রাজ্য রয়েছে ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা। এ ছাড়া জেলার একদিকে রয়েছে হুগলি, একদিকে বাঁকুড়া এবং আর এক দিকে পূর্ব মেদিনীপুর। জেলায় এ বার দু’দফায় ভোট হবে। ৭ মে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে। ১২ মে ঘাটালে। সব কেন্দ্রেই গণনা ১৬ মে। ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ১২ এপ্রিল। আর ঘাটাল কেন্দ্রের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ১৭ এপ্রিল। অর্থাৎ হাতে সময় রয়েছে যথেষ্ট। পুলিশ অবশ্য কালাতিপাতে রাজি নয়। তাই নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করার পরপরই জেলার বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির কাজ শুরু করেছে পুলিশ।
জঙ্গলমহলের এই জেলায় একদিকে যেমন মাওবাদী প্রভাবিত বেলপাহাড়ি-লালগড়ের মতো এলাকা রয়েছে, তেমনই রয়েছে কেশপুর-গড়বেতার মতো রাজনৈতিক সংঘাত প্রবণ এলাকা। নজরদারির ক্ষেত্রে এই সব এলাকাই বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ভোটের সময় বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল হয়। অনেক অভিযোগও ওঠে। জেলায় বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকা রয়েছে। ওই সব এলাকায় বেশি নজরদারি চলছে।”
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, নজরদারির জন্য ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’ নামে বিশেষ এক দল গঠন করা হয়েছে। দলটি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে। কোনও এলাকা থেকে অনভিপ্রেত ঘটনার খবর এলে দ্রুত সেখানে পৌঁছবে। এই দলে ৩ জন করে পুলিশকর্মী থাকবেন। সঙ্গে একজন এসআই বা এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার। দলে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ৩টি করে ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’ দায়িত্বে থাকবে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এই দলের কাছে ভিডিও ক্যামেরা থাকবে। প্রয়োজনে ভিডিওগ্রাফি করা হবে।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নজরদারির জন্য আরও একটি বিশেষ দল থাকছে, যার নাম ‘স্ট্যাটিক সার্ভেল্যান্স টিম’। এই দলেও ৩ জন করে পুলিশকর্মী এবং একজন করে পুলিশ অফিসার থাকবেন। এই দলটি বিভিন্ন এলাকায় ‘নাকা’ করবে। ভিন্ রাজ্যের সীমানা এলাকায় নজরদারি চালাবে।
এক সময় জেলার পশ্চিম দিকে অর্থাৎ জঙ্গলমহলে মাওবাদী নাশকতা ছিল রোজকার ঘটনা। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ২০১১ সালে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেনজি নিহত হওয়ার পর থেকে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপ থিতিয়ে গিয়েছে। গত আড়াই বছরে কোনও খুন-নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে এই পরিস্থিতিতেও আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতে নারাজ জেলার পুলিশ আধিকারিকেরা। সীমানা এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চলছে। বৃহস্পতিবারও পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের ৫টি পুলিশ জেলার আধিকারিকদের নিয়ে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই সমন্বয় বৈঠকেও মাওবাদী সক্রিয়তা রোধে নিরাপত্তা বাড়ানোয় জোর দেন উপস্থিত পুলিশ-কর্তারা। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “মাওবাদী-তৎপরতা নেই ঠিকই তবে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। পাশের রাজ্যে মাঝেমধ্যে মাও-হানার ঘটনা ঘটছে। আমরা পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি।”
শুধু জঙ্গলমহল নয়, কেশপুর-গড়বেতার মতো এলাকাও স্পর্শকাতর। এই সব এলাকায় ঘনঘন রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলের দু’পক্ষ। এই পরিস্থিতিও ভাবাচ্ছে পুলিশের একাংশকে। জেলা পুলিশের ওই আধিকারিকের কথায়, “স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটারদের মনে যাতে ভয়ভীতি না- থাকে, সেই জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সব দল যাতে সমান সুযোগ পায়, তা-ও আমরা দেখছি।”