শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বন্ধে নয়া প্রচার কৌশল পশ্চিমে

শিশুশ্রম ও বাল্য বিবাহ বন্ধে প্রচারকেই হাতিয়ার করতে চাইছে প্রশাসন। এ বারের প্রচার অবশ্য শহর নয়, শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত স্তর থেকে। পাল্টানো হচ্ছে প্রচার কৌশলও। ছাত্রীদের মধ্যে থেকেই তৈরি করা হবে ‘মাস্টার ট্রেনার’। তাঁরাই স্কুলে স্কুলে গিয়ে অন্য ছাত্রীদের বোঝাবেন, বাল্য বিবাহের কুফল, আর্থিক সঙ্কট দূরে রেখে কী ভাবে পড়া চালানো যায় বা কেন শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয়।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

শিশুশ্রম ও বাল্য বিবাহ বন্ধে প্রচারকেই হাতিয়ার করতে চাইছে প্রশাসন। এ বারের প্রচার অবশ্য শহর নয়, শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত স্তর থেকে। পাল্টানো হচ্ছে প্রচার কৌশলও। ছাত্রীদের মধ্যে থেকেই তৈরি করা হবে ‘মাস্টার ট্রেনার’। তাঁরাই স্কুলে স্কুলে গিয়ে অন্য ছাত্রীদের বোঝাবেন, বাল্য বিবাহের কুফল, আর্থিক সঙ্কট দূরে রেখে কী ভাবে পড়া চালানো যায় বা কেন শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয়।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোহনপুর ব্লক দিয়ে এই প্রচার শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে জেলার প্রতিটি এলাকাতেই তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে জানিয়েছেন জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্ত। তাঁর কথায়, “বর্তমানে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধে রয়েছে। প্রতিটি এলাকার ছাত্রীরা, গরিব মানুষেরা যাতে তা জানতে পারেন, সুফল পান, সেই লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি।”

শিশুশ্রম বা বাল্য বিবাহ বন্ধে কম প্রচার হয়নি। কিন্তু প্রচারের ঢক্কানিনাদ কতটা কাজে লেগেছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এখনও রাস্তা ঘাটে বের হলেই ইতিউতি দেখা যায়, চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকানে গ্লাস-প্লেট ধোয় ছোট্ট শিশুরা। ইটভাটা বা পাথর খাদানে বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরাও কাজ করতে যায়। পরিবারের সামান্য আয় বাড়াতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে নিজেদের সঙ্গে কাজে নিয়ে চলে যান হতদরিদ্র বাবা মায়েরা। অথচ শিশুশ্রম আটকাতে রয়েছে আইন, রয়েছে শিশু শ্রমিক স্কুলও! যেখানে নিখরচায় পড়ানোর পাশাপাশি খাবার ও পোশাক দেওয়া হয়।

Advertisement

একই ভাবে বাল্য বিবাহও আটকানো যায়নি। এখনও গ্রামেগঞ্জে প্রায়ই বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটে। যত পরিমাণ ঘটে, জানা যায় তার অনেক কম। জানার পর স্থানীয় বিডিও বা পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করেন। বাল্য বিবাহের নামে অনেক সময় আবার নারী পাচারের ঘটনাও ঘটছে। কিছু ক্ষেত্রে ওই সব মেয়েদের কয়েকজনকে উদ্ধার করা গেলেও কিছু ক্ষেত্রে কোনও সন্ধান মেলে না। অভিযোগ, মূলত প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রশাসন উদাসীন থাকলে প্রচারের ঢক্কানিনাদ যে বিফলেই যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন এমন হয়? বাল্য বিবাহ রোধ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সুচেতনা’র কর্ণধার স্বাতী দত্তের কথায়, “এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা ভীষণ জরুরি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাল্য বিবাহ বা বাল্য বিবাহের নামে পাচারের উদ্দেশে যে সব চক্র কাজ করছে সেই তথ্য জানানোর পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকে যায়। যে ক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য মেলে সে ক্ষেত্রে সাফল্যের হার একশো শতাংশ হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের সাহায্য মেলায় আমাদের সংস্থা সাঁকরাইল, জামবনি ও বেলপাহাড়ি এলাকায় এমন বহু মহিলাকে উদ্ধার করেছি। আবার কিছু ক্ষেত্রে পুলিশি অসহযোগিতার কারণে কিছুই করতে পারিনি।”

এ বার এ ক্ষেত্রে সরকার আরও একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে। বাল্য বিবাহ রোধে রাজ্য সরকার আগেই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছিল। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার শিশুশ্রম ও বাল্য বিবাহ রোধে আরও একটি প্রকল্প চালু করেছে। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাঁরা দু’বেলা দু’মুঠো পেটের জোগাড় করতেই হিমসিম। ছেলেমেয়েকে যাঁরা দু’বেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারেন না তাঁরা আবার পড়াবেন কী ভাবে? ওই সব অভিভাবকেরা চান যদি তাঁদের সন্তানকে হোমে দিয়ে দেওয়া হয় ভাল হত। কিন্তু হোমেও সব সময় স্থান সঙ্কুলান হয় না। এই রকম পরিবার চিহ্নিত করে সেই সমস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য মাসিক ১ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, এর প্রধান লক্ষ্য, হোমে নয়, বাড়ির পরিবেশেই একটি শিশু বেড়ে উঠুক। তাতে তার মানসিক বিকাশ ভাল হবে। যাতে কোনও পরিবার ওই টাকা নিয়ে নয়ছয় না করতে পারে তার জন্য নিয়মিত পরিদর্শনেরও কথা বলা হয়েছে প্রকল্পে। পরিদর্শন করে দেখে নিতে হবে বাচ্চাটি সত্যিই স্কুলে যাচ্ছে কিনা। যদি স্কুলে না যায় তাহলে ওই অনুদান থেকে সেই পরিবার বঞ্চিত হবে। প্রায় দু’মাস হতে চলল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এই প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকাও পেয়েছে। কিন্তু এখনও একজনকে এই সুবিধে দেওয়া যায়নি!

কেন?

একটি পরিবারের বাচ্চা এই আর্থিক অনুদান পাওয়ার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য জেলা স্তরে একটি কমিটি গঠনের প্রয়োজন। এখনও সেই কমিটিই গঠন করা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে কবে কমিটি গঠন হবে, কমিটি কী ভাবে ওই সব পরিবার বাছাই করবে। কারণ, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পর্যন্ত নেই। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রেও প্রশাসন কেন উদাসীন। এ ব্যাপারে কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই। জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ দাস বলেন, “এ বার প্রকল্প রূপায়ণে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটি তৈরি করে উপযুক্ত পরিবার বেছে নিয়ে তাঁদের কাছে এই প্রকল্পের সুবিধে পৌঁছে দেওয়া হবে।” এই আশ্বাস বাস্তবে কতটা কার্যকরী হবে তা অবশ্য সময়ই বলতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন